হামলায় আহত শান্তিময় চাকমা বলেছেন, পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ পুনরায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে স্টুডেন্ট মুভমেন্ট ফর স্যাভেরানটি নামের একটি সংগঠনের অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় অনেকেই আহত হন।

নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয় ঘেরাও করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হন। এতে অন্তত ৯ জন, including ছাত্র-সাংবাদিকসহ, আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে ছিলেন ধনজেতরা (২৮), অন্তত ধামাই (৩৫), ফুটন্ত চাকমা (২২), ইসাবা শুহরাত (৩২), রেংইয়ং ম্র (২৭), রূপাইয়া স্রেষ্টা তনচঙ্গা (২৫), ডোনায়ই ম্রো (২৫), শৈলী (২৭) এবং ডিবিসি’র সাংবাদিক জুয়েল মার্ক (৩৫)।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র–জনতা’ ব্যানারে একত্রিত হন এবং তারপর মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয় ঘেরাও করতে যান। বিক্ষোভের সময় ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি পুনর্বহাল এবং পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহাকে অপসারণের দাবিতে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। তবে, একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, এসময় ‘স্টুডেন্টস ফর স্যাভেরানিটি’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলায় ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক জুয়েল মারাকসহ অন্তত তিনজন আহত হন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ধাওয়া করলে দুই পক্ষই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হামলায় আহত শান্তিময় চাকমা জানান, পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ পুনরায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে ‘স্টুডেন্ট মুভমেন্ট ফর স্যাভেরানিটি’ নামক সংগঠনের অজ্ঞাতনামা সদস্যরা অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, এ ঘটনায় ঢামেক জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা চলছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত একটি গ্রাফিতি ছিল। তবে, ওই গ্রাফিতি বাতিলের দাবিতে ‘স্টুডেন্ট ফর স্যাভেরানিটি’ সংগঠন আন্দোলন শুরু করলে কর্তৃপক্ষ সেটি বাতিল করে এবং ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি পরিবর্তন করে ‘বল বীর/ চির উন্নত/ মম শির’ লেখা নতুন গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়।
এ নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ‘আদিবাসী’ শব্দটি বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে ‘স্টুডেন্ট ফর স্যাভেরানিটি’। এভাবেই পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাতিল ও বহালের পাল্টাপাল্টি দাবিতে একই সময়ে এবং একই স্থানে শিক্ষার্থীদের দুটি সংগঠনের কর্মসূচি চলছিল।
কী কারণে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছিল?
‘আদিবাসী’ শব্দটি নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এতে প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘আদিবাসী’ শব্দ পুনর্বহালের দাবি নিয়ে কর্মসূচি আয়োজন করেন।
কী ধরনের হামলা হয়েছে এবং কে বা কারা হামলা চালিয়েছে?
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় ‘স্টুডেন্ট মুভমেন্ট ফর স্যাভেরানিটি’ নামক সংগঠনের অজ্ঞাতনামা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে ছাত্র-সাংবাদিকসহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন।
কীভাবে হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়?
পুলিশ হামলার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
আহতদের মধ্যে কে-কেকে ছিলেন?
হামলায় আহতদের মধ্যে ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক জুয়েল মারাক (৩৫), ধনজেতরা (২৮), ফুটন্ত চাকমা (২২), ইসাবা শুহরাত (৩২), রেংইয়ং ম্র (২৭), রূপাইয়া স্রেষ্টা তনচঙ্গা (২৫), ডোনায়ই ম্রো (২৫), শৈলী (২৭) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এই হামলার পর কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং এই ঘটনায় পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি, পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
উপসংহার
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকার মতিঝিলে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা বাংলাদেশের শিক্ষা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হামলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে স্তব্ধ করার প্রচেষ্টা ছিল, যা গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এক ধরনের আক্রমণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
এ ধরনের সহিংসতা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে অস্থিরতা ও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা একটি সুষ্ঠু এবং সব-গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষাকারী সমাজ গড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বিষয়টি সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি সতর্কবার্তা, যাতে তারা সাম্প্রতিক সংকট মোকাবিলা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয় এবং সবার অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।