গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা বলেন, যদি যুবদলের কোনো নেতা শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় এক শিক্ষককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন।
আহত শিক্ষক মো. বসির উদ্দিন, যিনি বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার সহকারী শিক্ষক, বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বরাতে জানা যায়, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমারের সঙ্গে বসির উদ্দিন কথা বলছিলেন। এ সময় জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনির নেতৃত্বে উপজেলার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদলকর্মী রাকিব হাসান এবং তাজিদ মিয়া লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন।
তারা শিক্ষক বসির উদ্দিনকে বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। বিষয়টি দেখে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রিজভী আহাম্মেদ সজিব তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।
এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরিসহ আশপাশের লোকজন আহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার বলেন, “জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনি, রাকিব হোসেনসহ কয়েকজন জোরপূর্বক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সহকারী শিক্ষক বসির উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি মারধর করে।”
অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনি বলেন, “ওই শিক্ষক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ কারণেই তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা বলেন, “যদি যুবদলের কোনো নেতা শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন বলেন, “শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে তাকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। সেই ঘটনার জের ধরে যুবদলের কিছু লোক ওই শিক্ষককে মারধর করেছে।”
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে এবং বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
কী ঘটেছিল?
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বসির উদ্দিনকে মারধর করে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে।
কেন এ ঘটনা ঘটেছে?
অভিযোগ অনুযায়ী, শিক্ষক বসির উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ কারণেই স্থানীয় যুবদল নেতারা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারধর করেছেন বলে জানা গেছে।
কারা এ ঘটনায় জড়িত?
জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনি, রিপন আহমেদ, রাকিব হাসান এবং তাজিদ মিয়াসহ কয়েকজন যুবদল কর্মী এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
আহতদের অবস্থা কেমন?
মারধরের শিকার শিক্ষক মো. বসির উদ্দিনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে বাঁচাতে গেলে বিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভী আহমেদ সজিবও আহত হন।
প্রশাসন ও যুবদল কী বলছে?
কালিয়াকৈর থানার এসআই জামিল হোসেন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে, গাজীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা বলেছেন, যদি যুবদলের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপসংহার
এই ঘটনায় সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা, রাজনীতি এবং আইনশৃঙ্খলার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষকের মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে মারধর ও অপমানের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। একইসঙ্গে রাজনীতি ও শিক্ষাঙ্গনের পারস্পরিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির প্রভাব কমিয়ে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।




