‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও ভালো লাগছে যে আমি এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। এটি আমার জন্য সত্যিই উচ্ছ্বাস ও ফূর্তির একটি মুহূর্ত।’—এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাকছুদা বেগম। বৃহস্পতিবার তিনি উপস্থিত ছিলেন সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে।
দৈনিক শিক্ষাডটকম, সাবিহা সুমি:‘অনেক ভালো লাগছে, আনন্দিত অনুভব করছি। এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে আমি সত্যিই ভীষণ আনন্দিত, ভালো লাগছে, এবং উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে মন।’
এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাকছুদা বেগম। বৃহস্পতিবার তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে।

স্বামী অনেক আগেই প্রয়াত। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মাকছুদা বেগমের বসবাস গাবতলী সিটি কলোনিতে। বহুবছর ধরে তিনি ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তার দায়িত্ব রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া এবং প্রতিদিন নাগরিকদের ময়লা পরিষ্কার করা। যাদের জন্য তিনি এ কাজ করেন, তাদের অনেকেই কখনো তার দিকে ফিরে তাকান না।
স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে তাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হবে—এমন কিছু কখনো তার ভাবনায়ও আসেনি। এমনকি কদিন আগেও যদি কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করত, তিনি হয়তো বলতেন—এটা অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল কামাল আকবর। তার এই উদ্যোগ মাকছুদা বেগমের জীবনে এনেছে এক অভূতপূর্ব সম্মান ও আনন্দের মুহূর্ত।
দৈনিক আমাদের বার্তা এর এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল কামাল আকবর বলেন,
“আমাদের মাকছুদা আপা, যিনি এখন আমার পাশে বসে আছেন, তার কাজটি অত্যন্ত সম্মানের। এটাই আমাদের প্রথম উপলব্ধি। কাজ, যেকোনো কাজই হোক, তা সম্মানের যোগ্য। সব ধরনের কাজের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে।
আমাদের তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন যে প্রবেশপথ দিয়ে স্কুলে আসে, সেটি প্রতিদিন ময়লা আবর্জনায় ভরে যায়। কিন্তু মাকছুদা আপা সেই পথটি প্রত্যেকদিন নিরলসভাবে পরিচ্ছন্ন করেন এবং চকচকে করে রাখেন। তার আন্তরিক ইচ্ছা এবং কাজের প্রতি যে সম্মানবোধ, তা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই উপলব্ধি থেকেই আমরা মাকছুদা আপাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানাতে চেষ্টা করেছি।
আমরা কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাদের এই দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। মাকছুদা আপার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের অন্যান্য কর্মজীবীদের প্রতি—যারা বিভিন্ন পেশায় অবদান রাখছেন—সেই অবদানকে স্বীকৃতি দিতে চাই। তাদের প্রতি সম্মান জানাতে চাই। মাকছুদা বেগম হচ্ছেন সেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার একটি প্রতীক। তার মাধ্যমে আমরা তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়েছি।”
অধ্যক্ষ লে. কর্নেল কামাল আকবর আরও বলেন,
“আমাদের এই জনবহুল দেশে শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাই নন, আরও অনেক পেশার কর্মী আছেন, যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমার মনে হয়, তাদেরকে সম্মান জানানোর অনেক সুযোগ এখনও আমাদের রয়েছে। তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সম্মান করতে হবে। মাকছুদা আপা আমাদের বিশেষ অতিথি, এবং আমরা তাকে বিশেষভাবেই সম্মান জানাতে চেয়েছি।”
প্রসঙ্গত, গতকাল অনুষ্ঠিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাকছুদা বেগম বিশেষ অতিথি হিসেবে আসন অলংকৃত করেন। তার সঙ্গে আরও ছিলেন ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত এবং মোহাম্মদপুর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাজু আহমেদ। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক রেজা।
কেন মাকছুদা বেগমকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল?
অধ্যক্ষ লে. কর্নেল কামাল আকবর বলেন, মাকছুদা বেগম প্রতিদিন স্কুলের প্রবেশপথ পরিচ্ছন্ন রাখেন। তার আন্তরিকতা ও কাজের প্রতি সম্মানবোধ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা তার কাজকে স্বীকৃতি দিতে এবং সম্মান জানাতে তাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য কী?
উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সকল স্তরের পেশাজীবীদের অবদানকে সম্মান জানানো। অধ্যক্ষ মনে করেন, শুধুমাত্র পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়, সমাজের বিভিন্ন পেশায় যারা নিরলসভাবে কাজ করছেন, তাদের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। মাকছুদা বেগম সেই সম্মানের প্রতীক হিসেবে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন।
অনুষ্ঠানে মাকছুদা বেগমের ভূমিকা কী ছিল?
মাকছুদা বেগম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত এবং মোহাম্মদপুর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাজু আহমেদের সঙ্গে বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে ছিলেন?
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক রেজা।
অধ্যক্ষের বার্তা কী ছিল?
অধ্যক্ষ লে. কর্নেল কামাল আকবর বলেন, “আমাদের সমাজের প্রতিটি কাজই সম্মানের যোগ্য। মাকছুদা আপার মতো কর্মীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মাধ্যমে আমরা সব পেশার মানুষের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ করতে চেয়েছি।”
উপসংহার
মাকছুদা বেগমকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা সমাজের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। প্রতিটি কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও প্রতিটি পেশাজীবীর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই প্রয়াস অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
অধ্যক্ষ লে. কর্নেল কামাল আকবরের এই উদ্যোগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণে প্রত্যেকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মাকছুদা বেগমের মতো নিরলস কর্মীদের সম্মান জানানো শুধু তাদের কাজের মূল্যায়ন নয়, এটি আমাদের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে, যেখানে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ তাদের প্রাপ্য সম্মান ও কৃতজ্ঞতা লাভ করবে।




