তোপের মুখে নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটি অনিবার্য কারণ দেখিয়ে এই নিয়োগের সকল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে।

পঞ্চগড়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে পরীক্ষার্থীরা লিখিত পরীক্ষা বর্জন করেছেন। এ সময় পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে এই ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান এবং পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল পরীক্ষার অব্যবস্থাপনার দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। তোপের মুখে নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটি অনিবার্য কারণ দেখিয়ে পরীক্ষার সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে।
আদালত কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষোভকারী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১২টি পদে ৩০ জনকে নিয়োগের জন্য শুক্রবার ও শনিবার সকাল-বিকেল মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। প্রথম দিন বেঞ্চ সহকারী ও মালি পদের জন্য সকাল ১০টায় প্রায় এক হাজার পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা ছিল।
তবে পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ কক্ষ ১০–১৫ মিনিট দেরিতে খোলা হয়। কক্ষগুলোতে কোনো আসনবিন্যাস ছিল না, যার ফলে পরীক্ষার্থীরা যে যাঁর মতো বসে পরীক্ষা দিতে শুরু করেন।
এছাড়া, প্রশ্নপত্র খোলাভাবে পরীক্ষার কক্ষে আনা হচ্ছিল, যা প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কা তৈরি করে। কিছু পরীক্ষার্থী মুঠোফোন ব্যবহার করে উত্তর খুঁজে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এমনকি অনেকে পরীক্ষা শুরু করার ১৫ মিনিট পরেও বসার জায়গা পাননি। পরীক্ষার কক্ষগুলোতে আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাই পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছিলেন, যা আরও অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি করে।
এমন অব্যবস্থাপনা দেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই পরীক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন এবং পরে তারা পরীক্ষা বর্জন করে একত্র হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় কিছু পরীক্ষার্থী কলেজের শ্রেণিকক্ষের জানালার কাচ ও বসার বেঞ্চ ভাঙচুর করেন।
বিক্ষোভের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে পরীক্ষার্থীরা মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং কর্মকর্তাদের চলে যেতে বাধা দেন।
পরে পরীক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ও পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল, মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম, অন্যান্য বিচারক ও কর্মকর্তারা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী ও পুলিশ একত্রিত হন। আলোচনায় পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে পরীক্ষা বাতিল, নিয়োগ কমিটি বাতিল এবং অব্যবস্থাপনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ছিল।
এই বিক্ষোভ চলাকালেই পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের শুক্রবার ও শনিবারের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সদস্যসচিব ও পঞ্চগড়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি ‘জুডিশিয়ারি পঞ্চগড়’ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার পরবর্তী সময়সূচি জানানো হবে।
তবে, কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে বাইরে বিক্ষোভ চলতে থাকে। পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে আলোচনা শেষে নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ও পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে আবারও প্রবেশপত্র ইস্যু করা হবে। পরীক্ষাসংক্রান্ত অব্যবস্থাপনার দায় স্বীকার করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন, যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে। পরে বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে চলে যান।
কেন আদালতের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হলো?
পঞ্চগড়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এর ফলে নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
পরীক্ষা কখন স্থগিত করা হয়?
বিক্ষোভের পর পরীক্ষার্থীরা কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার পর ২৩ ডিসেম্বর, শুক্রবার সকালে পরীক্ষার সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা হবে কি না?
পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা হবে। নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় যে, এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ করা হবে।
কী ধরনের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ছিল?
পরীক্ষার কক্ষে আসনবিন্যাসের অভাব, প্রশ্নপত্র খোলাভাবে পরীক্ষা কক্ষে আনা, দেরিতে কক্ষ খোলা এবং মুঠোফোন দিয়ে উত্তর খোঁজার মতো অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছিল।
পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক হয়?
পরীক্ষাসংক্রান্ত অব্যবস্থাপনার দায় স্বীকার করে পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তিনি তদন্ত কমিটি গঠন এবং পরবর্তী পরীক্ষার জন্য নতুন প্রবেশপত্র ইস্যু করার আশ্বাস দেন, যার ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
উপসংহার
উপসংহারে, পঞ্চগড়ে আদালতের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় উদ্ভূত অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ পরিস্থিতি উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার আশ্বাস দেওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরীক্ষার পরবর্তী সময়সূচি জানিয়ে নতুন প্রবেশপত্র ইস্যু করার মাধ্যমে এই অস্থিরতা সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এমন অনিয়মের প্রতিকার করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।




