বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষীর গর্ব, মনীষী লেখক ও দার্শনিক আহমদ ছফা, আমার শ্রদ্ধেয় ছফা ভাই। তিনি নিজের হাতে আমাকে কয়েকটি উপন্যাস উপহার দিয়েছিলেন শুভ কামনা সহ, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বেশিরভাগ বই আমি সংরক্ষণ করতে পারিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বইগুলো হাতছাড়া হওয়ায় মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। যদিও আমি সম্পূর্ণ দায়ী নই, কারণ অনেক সময় ছফাভক্তরা বইগুলো ধার নিয়ে পড়ার জন্য সযত্নে রেখে দিয়েছেন। তবে বইগুলোর প্রতি আমার বিশেষ ভালোবাসা এবং সংরক্ষণের প্রতি নিষ্ঠা থাকায় তা হারিয়ে ফেলার অনুভূতিটা আমার জন্য কষ্টকর।

বাংলা সাহিত্যের অনন্যসাধারণ উপন্যাস ছফার ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রথমেই মনে পড়ে ছফার নিজ পরিকল্পনায় তৈরি করা প্রচ্ছদটি। উপন্যাসটির প্রচ্ছদে ছফার কাঁধের ওপর শোভিত সেই টিয়ে পাখিটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক ছিল। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটির জীবদ্দশায় একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হলেও প্রচ্ছদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে ছফার প্রয়াণের পর বিভিন্ন প্রকাশকরা একাধিক সংস্করণ বের করলেও, প্রতিবারই নতুন প্রচ্ছদ তৈরি করা হয়েছে। এসব প্রচ্ছদ যদিও বিখ্যাত শিল্পীরা আঁকলেও, কোনোটি প্রথম প্রকাশিত প্রচ্ছদের গভীরতা, যথার্থতা এবং সাহিত্যদৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি বলে আমাদের ধারণা।
চারুকলার সামনের ষাটোর্ধ বই দোকানি, যিনি নরসিংদীর বাসিন্দা, এ উপন্যাসের বেশ কয়েকটি চরিত্র তাঁর মুখস্ত। তিনি গড়গড় করে নামগুলো বলে যান, যেন উপন্যাসটি তার কাছে পরিচিত এক অনবদ্য সৃষ্টি। দোকানটির অন্যতম বিক্রিত বই হলো ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’, যা ছফার সাহিত্যকর্মের মধ্যে অন্যতম। উপন্যাসে বর্ণিত রয়েছে, রাজধানী ঢাকার বাংলামোটরে ছফা ভাই ১৯৯৩ সাল থেকে একটি ভাড়া করা বাড়িতে থাকেন। ২০০১ সালের ২৮ জুলাই, তাঁর তিরোধানের দিন পর্যন্ত সেই বাড়িতেই ছিলেন ছফা। এ বাড়ি, তার দিনযাপন, এবং লেখালেখির পরিবেশ, সবই ছিল ছফার সাহিত্যিক জীবন ও সৃষ্টির অনুপ্রেরণা।
অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের জন্য ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া পাওয়া, বিশেষত যখন সেই ভাড়াটে লেখক হন, সবসময়ই কঠিন বিষয় ছিল। এ বিষয়টি অত্যন্ত যত্নসহকারে বর্ণনা করেছেন ছফা। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকশন অফিসার পদ থেকে অবসরপ্রাপ্ত, ক্লিন শেভড এক বাড়িওয়ালা ছফাকে বাসা ভাড়া দিতে চাননি। ছফার মৃত্যুর পর ওই বাড়িটিতে অন্যরা ভাড়া থাকলেও, আমি নিয়মিতভাবে বাড়িটা দেখতে যেতাম। নারকেল গাছগুলোর অবস্থা দেখতাম এবং লক্ষ্য করতাম, ছফার চাউল, গম খেতে আসা শালিক ও কাকগুলোর যাতায়াত অব্যাহত আছে কি না। উপন্যাসে বর্ণিত বাড়িওয়ালাকে, বাস্তবে, আমি সর্বশেষ দেখেছি মুখভরা দাড়ি নিয়ে।
এছাড়া, ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ উপন্যাসটি উৎসর্গ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক ড. আহমেদ কামাল ও নাজিমুদ্দিন মোস্তান, যিনি দৈনিক ইত্তেফাক এর সব্যসাচী সাংবাদিক এবং আমার সাংবাদিকতার গুরু, শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় মোস্তান ভাইকে।
অসাধারণ বন্ধু, বৎসল ও পরোপকারী ছফা ‘বিহঙ্গ পুরাণ’ এ লেখেন, “এই সময়ে মোস্তানের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। …কী করে পরিচয় হল, উপলক্ষটার কথা বলি। পাকিস্তানি পদার্থ বিজ্ঞানী প্রফেসর আবদুস সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আবিষ্কৃত তত্ত্বের ওপর একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেই বক্তৃতা শোনার ভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে আমার মনে হলো, প্রফেসর সালামের তত্ত্বটি বুঝতে আমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। এটাতো বড়ই আশ্চর্যের কথা। এমন সাংবাদিক আমাদের দেশে আছেন, সালাম সাহেবের দুরূহ তত্ত্বকে অ’তে অজগর এরকম সহজ করে বোঝাতে পারেন। ঠিক করলাম সেদিনই সন্ধ্যে বেলায় ইত্তেফাক অফিসে গিয়ে খোঁজ করব। এরকম একজন কেয়ার মানুষ আমাদের দেশে আছেন। সশরীরে গিয়ে যদি সালাম না করি, নিজেকেই অসম্মান করব। গেলাম ইত্তেফাক এ। …টেবিলে ঝুঁকে পড়ে রিপোর্ট লিখছেন। শুধু মাথাটাই দেখা যাচ্ছে। এই একটুখানি মানুষ।”
এটি ছফার মোস্তান ভাইয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাঁর পেশাগত দক্ষতার প্রতি সম্মান প্রকাশের এক প্রামাণিক প্রতিফলন। ছফা এখানে মোস্তানের সাহসী, সহজ ও সৃজনশীল কাজের প্রতি এক বিশেষ প্রশংসা জানিয়েছেন, যা পরবর্তীকালে তাঁদের বন্ধুত্বের এক স্মরণীয় মুহূর্তে পরিণত হয়।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কনভোকেশন বক্তা হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁর ইংরেজিতে দেওয়া বক্তৃতাটির নিম্নমানের বাংলা অনুবাদ ছেপেছিল দৈনিক প্রথম আলো। ইত্তেফাক এর খবরটি পড়ে তৃপ্ত হওয়ার চেষ্টা করলেও, কিছুটা ব্যর্থ হই। নিমিষেই মনে পড়ে, অনেক বছর হয়ে গেছে, মোস্তান ভাই আর লিখতে সক্ষম হননি। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের বইমেলায় প্রকাশিত বিহঙ্গ পুরাণ উপন্যাসে উল্লেখিত নাজিমউদ্দিন মোস্তান ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে নিজ অফিসে কর্মরত অবস্থায় স্ট্রোক করেন।
এখানে ছফা তার বন্ধুর অসুস্থতার পরিণতির কথা স্মরণ করছেন, যেখানে মোস্তান ভাই তার লেখনীশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং তার পরবর্তী সময়ের সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডে বিরতি আসে।
ছফা এবং মোস্তান মিলে বস্তির শিশুদের জন্য একটি স্কুল তৈরি করেছিলেন। বিহঙ্গ পুরাণ এ ছফা লিখেন, “মোস্তান এত অনুরাগ নিয়ে বাচ্চাদের শেখাচ্ছিলেন দেখে মনে মনে আমার খুব ঈর্ষা হত। অফিসের সময়টুকু ছাড়া সমস্ত অবসর তিনি বাচ্চাদের পেছনে দিতেন। নিজের মেয়েদুটোকেও তিনি বাচ্চাদের সঙ্গে বসিয়ে দিতেন। আমি বলতাম, একটু কি বাড়াবাড়ি হচ্ছে না মোস্তান? মোস্তানের ওই এক জবাব, ‘বস্তির ছেলেদের সঙ্গে বসতে না শিখলে কোন বাচ্চা সঠিক মানুষ হতে পারবে না।’”
মোস্তান ভাইয়ের এই কথায় প্রকাশ পায় তাঁর সমাজসেবা এবং মানবিক মূল্যবোধের গভীরতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বস্তির শিশুরা সমাজের অগ্রগতির জন্য সমান গুরুত্ব বহন করে, এবং তাদের সঙ্গে বসে কাজ করাটা মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব।
এছাড়া, ছফা তাঁর বিহঙ্গ পুরাণ এ একটি প্রাচীন বৃক্ষের সঙ্গে তার সম্পর্কের বর্ণনা দিয়েছেন, যা প্রকৃতির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসাকে ফুটিয়ে তোলে। তিনি লিখেন, “এই প্রাচীন বৃক্ষটির সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আকাশের কাছাকাছি তার অবস্থান, ডালে শঙ্খচিলের বাসা, আষাঢ় মাসের পাকনা আম সবকিছু একযোগে আমার হৃদয় হরণ করে নিয়েছিল। এই বৃক্ষের সংসারের প্রতি বিষ্ময়মিশ্রিত নয়নে তাকাতাম। যতই তাকাতাম অনুভব করতাম, এই বৃক্ষের বিহঙ্গকুলের সংসারে আমিও একটা স্থান করে নিতে পেরেছি এবং বৃক্ষটিও সেটা বুঝতে পারে। দাদু-নাতির সম্পর্কের মধ্যে যে একটি প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় এবং স্নেহের স্থান আছে, আমার সঙ্গে বৃক্ষের সেরকম একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আমি ভাবতে থাকতাম বিরাট সংসারসহ এই বিশাল বৃক্ষটি একান্ত আমার। তার শাখায় যে আমগুলো দোলায় সেগুলো সব আমার। যেসব পাখি আসে, যেসব পাখি বাস করে সব আমার।”
এটি ছফার প্রকৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ এবং পৃথিবীর সাথে তাঁর সম্পর্কের একটি সুন্দর চিত্র তুলে ধরে, যেখানে তিনি নিজেকে প্রকৃতির অংশ মনে করতেন।
ছফা ভাই সমাজের বিভেদ, মানুষের মধ্যে একে অপরকে শেখানোর সম্পর্ক এবং প্রকৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা সম্পর্কে তাঁর লেখায় চমৎকারভাবে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ঢাকা শহরে দেশব্যাপী সমিতির সংখ্যা, এমনকি উপজেলা সমিতি পর্যন্ত বিস্তৃত, যা নানা এলাকার মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ছফা ভাই বিশ্বাস করতেন যে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষরা একে অপরের সংস্কৃতি জানবে এবং একে অপরকে শিখাবে, এমন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
তবে ছফা নিজে যখন এই বিভেদ এবং দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন, তখন তাঁর কাছে প্রকৃতির নিস্কলঙ্কতা ও সরলতা আরও বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি বিহঙ্গ পুরাণ এ উল্লেখ করেছেন, “একদিন রুটি হাতে বেরিয়ে এসেছি এবং কাকমণ্ডলী শব্দটিও উচ্চারণ করে ফেলেছি। কাকেরা দলে দলে খেতে এল। আমি ছাদের ওপর তাকিয়ে দেখি, একটি দাঁড় কাক বসে আছে। আহা বড় ভালো লাগল। শহরে কখনো দাঁড় কাক দেখেছি মনে পড়ে না। গ্রামের মানুষ শহরে এলে তখন আড়ষ্ট হয়ে থাকে, কাকটিও তেমনই এক কোণে জবুথবু হয়ে বসে আছে। আমি তার দিকে রুটির টুকরো ছুড়ে দিলাম। শহরের কাকেরা সে টুকরোগুলো তার মুখের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলল। আমার মনে বড় লাগল।”
এটি ছফার অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, যেখানে তিনি প্রকৃতির একটি ক্ষুদ্র, অথচ গভীর পার্থক্য — শহর ও গ্রাম — উপলব্ধি করেন। তাঁর লেখায় এটি স্পষ্ট যে, মানব সম্পর্কের মতোই প্রকৃতির মধ্যেও নানা ধরনের পার্থক্য, যা কখনো আমাদের অবাক করে, কখনো বা গভীর মনোযোগের দাবি করে।
আহমদ ছফা সত্যিই মানবতাবাদী একজন লেখক, যিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি দিককে সাধারণ মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে প্রভাবিত করেছেন। তাঁর উপন্যাসে তিনি সবার উপরে মানবতা, সহানুভূতি এবং নৈতিক দায়িত্বের কথা বলেছেন। তাঁর “পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ” এবং অন্যান্য কাজের মাধ্যমে ছফা ভাই যে মানবিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা তুলে ধরেছেন, তা শুধু সাহিত্য নয়, বাস্তব জীবনেও গূঢ় প্রভাব ফেলেছে।
এই উদ্ধৃতিটি, যেখানে তিনি আকাশের পাখি ও মাটির মানুষের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে মানব সমাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁর গভীর দর্শন ও বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে স্পষ্ট করে। ছফা বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের জীবনে হিংস্রতা ও জাতিবৈষম্যের মধ্যে থেকেও, একজন মানুষ হিসেবে সমাজের জন্য কাজ করার দায়বদ্ধতা থেকে পিছিয়ে আসা যায় না।
“শুভ জন্মদিন আহমদ ছফা” — এমন এক মহৎ ব্যক্তিত্বের জন্মদিনে তাঁর লেখার মাধ্যমে আজও আমরা শিক্ষা নিচ্ছি, প্রেরণা পাচ্ছি। তিনি না থাকলেও তাঁর সৃষ্টি এবং চিন্তা আমাদের মনে জ্বলজ্বলে থাকবে।
কেন আহমদ ছফার বইয়ের প্রচ্ছদে তাঁর ছবি বা প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়নি?
আহমদ ছফা নিজে প্রচ্ছদ নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতেন না এবং তাঁর লেখার প্রতি ছিল অগাধ আস্থা। বইয়ের বিষয়বস্তু তার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফলে, তাঁর প্রচ্ছদে ছবি বা প্রতিকৃতির ব্যবহার ছিল না, বরং অনেক সময় তাঁর বইয়ের প্রচ্ছদে অন্য শিল্পীদের আঁকা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
আহমদ ছফার বইয়ে প্রচ্ছদ পরিবর্তন কেন হয়?
ছফার প্রয়াণের পর বিভিন্ন প্রকাশক বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশ করার সময় বিভিন্ন প্রচ্ছদ ব্যবহার করেছেন। এই পরিবর্তনগুলো প্রায়ই লেখকের দর্শন ও বইয়ের মূল বিষয়বস্তু থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। কিছু প্রচ্ছদ হয়তো জনপ্রিয়তার দিক থেকে আকর্ষণীয়, তবে বেশিরভাগ পাঠক মনে করেন যে, প্রথম প্রকাশকালের প্রচ্ছদেই বইটির গভীরতা বেশি ছিল।
আহমদ ছফা কি নিজে বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে কোন মন্তব্য করেছেন?
আহমদ ছফা নিজে প্রচ্ছদ নিয়ে কোনো বড় মন্তব্য করেননি। তাঁর কাছে বইয়ের বিষয়বস্তু, লেখার গভীরতা ও তার দর্শনই ছিল প্রধান। তিনি কখনো প্রচ্ছদে খুব বেশি মনোযোগী ছিলেন না, বরং বইয়ের আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক মানেই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।
ছফা ভাইয়ের বইয়ের প্রথম প্রচ্ছদ কি কখনও পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে?
কিছু বইয়ের প্রচ্ছদ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, বিশেষত ছফার মৃত্যুর পর। তবে, মূল বইয়ের প্রথম প্রচ্ছদটি অনেক পাঠকের কাছে এখনও বিশেষ এবং গভীর অর্থ বহন করে, যেটি লেখকের জীবনদৃষ্টি এবং তার সাহিত্যিক ভাবনাকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল।
কিভাবে ছফার বইয়ের প্রচ্ছদ পরিবর্তন এবং তার প্রভাব বইয়ের মূল উদ্দেশ্য বা বিষয়বস্তুর উপর?
প্রচ্ছদ পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় বইয়ের মূল উদ্দেশ্য এবং বিষয়বস্তু কিছুটা বিকৃত হতে পারে। কারণ, প্রচ্ছদই পাঠকদের প্রথম দর্শন দেয় বইটির প্রতি আগ্রহ তৈরি করার জন্য। ছফার বইয়ে যে গভীর চিন্তা ও দর্শন ছিল, সেটা মাঝে মাঝে নতুন প্রচ্ছদে ঠিকভাবে প্রকাশিত হতে পারেনি।
উপসংহার
উপসংহারে বলা যায়, আহমদ ছফা ছিলেন এক মানবতাবাদী, দার্শনিক ও সাহিত্যিক, যাঁর লেখার গভীরতা ও চিন্তা বর্তমান যুগে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ছফার বইয়ের প্রচ্ছদ, বিশেষত তাঁর জীবদ্দশায়, সেভাবে তার লেখার সঙ্গী বা অংশ হয়ে ওঠেনি, কারণ তিনি মূলত বইয়ের বিষয়বস্তু এবং তার গভীরতা নিয়ে চিন্তা করতেন। তবে তাঁর মৃত্যুর পর প্রচ্ছদে বিভিন্ন পরিবর্তন হলেও, মূল কাজের প্রাধান্য অপরিবর্তিত থাকে। আহমদ ছফার সাহিত্য আমাদের সমাজ, মানবতা, এবং প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন উপলব্ধি ও চিন্তা দেয়, এবং তাঁর কাজগুলোকে অমর করে রেখেছে তার চিন্তার প্রভাব।