পেনশন প্রত্যাহারের আন্দোলন রূপ নিলো মারামারিতে

পেনশন প্রত্যাহারের আন্দোলন রূপ নিলো মারামারিতে

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কর্মকর্তাদের মধ্যে বিবাদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন চলাকালীন, মঙ্গলবার ক্যাম্পাসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসা এবং ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূচনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দ্বিতীয় দিনের মতো লাগাতার পেনশন আন্দোলন শুরুর সময় ক্যাম্পাসে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ডিরেক্ট অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা তাদের ব্যানার টানিয়ে আন্দোলনে বসেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা এসে ব্যানারটি ছিঁড়ে ফেলে।

পরে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিরেক্ট অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আবার তাদের ব্যানার টানালে, প্রতিপক্ষের সদস্যরা এসে হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যেখানে চেয়ার ছোড়াছুড়ি এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এই সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৪ জন সদস্য আহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং দুটি গ্রুপকে আলাদা করে দেন।

প্রত্যেক পক্ষই নিজেদেরকে সঠিক সংগঠন দাবি করে এবং অন্য পক্ষকে প্রথমে হামলা করার অভিযোগ তোলে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। তাদের মতে, প্রতিপক্ষটি চলমান পেনশন আন্দোলনকে ব্যাহত করার জন্যই এই হামলা চালিয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ মন্তব্য করেন, “চলমান আন্দোলনকে পেছন থেকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। তাদের ববি ক্যাম্পাসে অবস্থান করার জন্য কোনো অনুমোদনও নেই।”

অন্যদিকে, ডিরেক্ট অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুব্রত কুমার বাহাদুর জানান, “চলমান কর্মসূচির সময় বিনা উসকানিতে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।” তিনি হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দাবি আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন।

বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর মুকুল বলেন, “নিজস্ব অবস্থান থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গ্রুপের কর্মকর্তারা পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়, যার ফলে পরিস্থিতি কিছুটা অশান্ত হয়ে ওঠে। তবে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম জানান, “ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপাচার্য স্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ এবং সম্মানিত সাংবাদিকদের কাছ থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণের কাজ শুরু করেছি।”

কেন পেনশন প্রত্যাহারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল?

পেনশন সুবিধা সংশোধন বা পুনর্বিবেচনার দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের একটি আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে পেনশন সুবিধার উন্নতি ও কিছু পরিবর্তন চেয়ে আন্দোলন করছিলেন।

এই আন্দোলন কেন সহিংস হয়ে উঠলো?

আন্দোলন চলাকালীন, দুইটি ভিন্ন গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে এবং ক্যাম্পাসে ব্যানার টাঙানোর বিষয়ে মতবিরোধের ফলে তা সংঘর্ষে পরিণত হয়। এক পক্ষের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার পর দুই পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়, যা শেষে মারামারিতে রূপ নেয়।

কতজন আহত হয়েছেন এই সংঘর্ষে?

সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৪ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন, তবে তাদের আঘাত গুরুতর না হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সংঘর্ষের ঘটনার পর তা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেজিস্ট্রার জানিয়ে দিয়েছেন যে, সিসিটিভি ফুটেজ এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি কী?

সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি কিছুটা অশান্ত ছিল, তবে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এবং দুই পক্ষ একে অপরকে দা

উপসংহার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পেনশন আন্দোলন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা একটি অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক মোড় নিয়েছে। আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ লক্ষ্য সফল না হয়ে সহিংসতায় পরিণত হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য এক বিপদজনক সংকেত। এই ধরনের সংঘর্ষের ফলে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ধ্বংস হতে পারে এবং ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে, এই ঘটনা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও পাওয়া যায়—সকল ধরনের আন্দোলন ও দাবির সংগ্রামকে সহিংসতার পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, যাতে কর্মচারী ও শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত হয় এবং ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top