সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিধিমালা পরিবর্তন করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত আসতে পারে, তবে চারটি চালু স্কিম অব্যাহত থাকবে এবং নতুন কোনো স্কিম অন্তর্ভুক্ত হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভা শেষে সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, পেনশন ব্যবস্থায় সংস্কারের সুযোগ সব সময় থাকে। যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে, কোনো পরিবর্তন অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়াবে, তবে তা করা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন যে, পরিবর্তন আনলে এই কর্মসূচি আরও আকর্ষণীয় হবে এবং সার্বিকভাবে কর্মসূচি জোরদার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পেনশন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে উদ্যোগ নিলে অংশগ্রহণ ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছিল। তবে গত কয়েক মাসে প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয়ে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে এই কার্যক্রম চাঙ্গা করতে একটু সময় লাগবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, চালু থাকা চারটি স্কিম অব্যাহত থাকবে এবং আপাতত নতুন কোনো স্কিম অন্তর্ভুক্ত হবে না। পেনশন স্কিমের অর্থ বিনিয়োগ করে যে মুনাফা হয়েছে, তা বণ্টনের বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মুনাফার হিসাব করে চলতি মাসেই গ্রহণকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। স্কিম গ্রহণকারীরা তাদের হিসাব ঢুকে জমা করা অর্থের পরিমাণ ও মুনাফা দেখতে পারবেন।

সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। প্রাথমিকভাবে চারটি স্কিম—প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নিয়ে এই পেনশন স্কিম শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সমজাতীয় সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালুর ঘোষণা দেওয়া হলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন দরিদ্র মানুষ, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। সমতা স্কিমের মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১,০০০ টাকা; এর মধ্যে ৫০০ টাকা স্কিম গ্রহণকারী প্রদান করেন এবং বাকি ৫০০ টাকা সরকার দেয়। এই স্কিমে নিবন্ধনের সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন, এবং জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ ৪১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা পেনশন স্কিমের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা দিয়েছেন। প্রগতি স্কিমে এখন পর্যন্ত চাঁদা জমা পড়েছে ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকা, এবং নিবন্ধনের সংখ্যা ২২ হাজার ৪১০ জন।
তবে, প্রবাসীরা চাঁদা দেয়ার দিক থেকে সবচেয়ে নিচে রয়েছেন। প্রবাস স্কিমে এখন পর্যন্ত ৯১০ জন ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার চাঁদা দিয়েছেন। এ ছাড়া, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষা স্কিমে ৬৩ হাজার ১৭৪ গ্রাহক ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা চাঁদা জমা দিয়েছেন।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে?
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে বিধিমালা পরিবর্তন করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং কিছু নতুন নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমানে কোন স্কিমগুলো অব্যাহত থাকবে?
চালু থাকা চারটি স্কিম—প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা, এবং সমতা—অব্যাহত থাকবে এবং আপাতত নতুন কোনো স্কিম অন্তর্ভুক্ত হবে না।
জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে প্রচারণা এবং নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
পেনশন স্কিমে জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ কী?
বর্তমানে বিভিন্ন স্কিমে নিবন্ধন করা লোকজনের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
মুনাফা বণ্টনের প্রক্রিয়া কেমন হবে?
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত যে মুনাফা হয়েছে, তা বণ্টন করে চলতি মাসেই গ্রহণকারীদের হিসাবে জমা করা হবে।
উপসংহার
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে আসন্ন পরিবর্তনগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসূচির কার্যকারিতা ও আকর্ষণ বাড়াতে সহায়তা করবে। বিধিমালা পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন সুযোগ-সুবিধা সংযোজনের পরিকল্পনা এবং চলমান স্কিমগুলোর অগ্রগতি কর্মসূচিটির সফলতা নিশ্চিত করবে।
জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব পরিবর্তন সফল হলে দেশের জনগণের জন্য একটি টেকসই ও কার্যকর পেনশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত হবে, যা ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।




