এমপিও নীতিমালায় স্কুল-কলেজও শিক্ষা ক্যাডার নিযুক্তির সুযোগ : বেসরকারিদের প্রতিবাদ

এমপিও নীতিমালায় স্কুল-কলেজও শিক্ষা ক্যাডার নিযুক্তির সুযোগ : বেসরকারিদের প্রতিবাদ

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে অধিদপ্তরটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারছেন কি না—এমন প্রশ্ন উঠছে। তারা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, যদি মূল অধিদপ্তরই সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে দক্ষভাবে পরিচালিত হবে। নতুন নীতিমালার সংশ্লিষ্ট ধারা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রয়োজন হলে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

নতুন এমপিও নীতিমালা–২০২৫-এ বেসরকারি স্কুল ও কলেজের প্রধান হিসেবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জনবল কাঠামো ও নীতিমালায় বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। যদিও বহু বছর ধরেই সরকার নীতিমালাবহির্ভূতভাবে এ ধরনের প্রেষণ দিয়ে আসছিল।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রয়োজন মনে করলে সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা বা বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তাকে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ দিতে পারবে।

এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি শিক্ষক নেতারা। কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা জাকির আহমেদ খান অভিযোগ করেন, শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা সরকারি কলেজই সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন না; ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তাদের হাতে দিলে সংকট আরও বাড়বে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সব পদেই তারা আছেন, তবু অধিদপ্তর কি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে?” তিনি আরও জানান, নতুন নীতিমালার এই ধারা বাদ না দিলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, মাউশির বিভিন্ন পদে প্রেষণে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মতো দক্ষ ব্যক্তিদেরও নিয়োগ দেওয়া উচিত। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব পদে বেসরকারি শিক্ষকদের যেমন নিয়োগ দেওয়া হয়।

নীতিমালার ১৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, বেতন-ভাতার সরকারি অংশ উত্তোলনে অসংগতি বা অন্য অনিয়মের কারণে কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা সাময়িক স্থগিত, আংশিক বা সম্পূর্ণ কাটছাঁট কিংবা বাতিল করার ক্ষমতা থাকবে মন্ত্রণালয়ের। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পর মাউশি সকল তথ্য-প্রমাণসহ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান বা পরিচালনা কমিটির সভাপতি চাইলে মন্ত্রণালয়ে আপিল করতে পারবেন।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতা নজরুল ইসলাম বলেছেন, মাউশি অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে প্রেষণে এমপিওভুক্ত যোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, যেমনভাবে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে, তেমনি মাউশির ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞ বেসরকারি শিক্ষকরা দায়িত্ব পাওয়ার যোগ্য।

নীতিমালার ১৮ নম্বর ধারায় বেতন-ভাতার সরকারি অংশ স্থগিত, কর্তন, বাতিল বা পুনঃছাড়করণের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, নিয়োগে অনিয়ম, সরকারি অংশ উত্তোলনে অসংগতি বা ধারা ১৮.১-এ বর্ণিত অন্য কোনো অনিয়মের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা কিংবা প্রতিষ্ঠানটির এমপিও কোড সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বা অধিদপ্তর।

অনিয়ম প্রমাণিত হলে মাউশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সভাপতির নামসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, কর্মচারী বা পরিচালনা কমিটির সভাপতি চাইলে মন্ত্রণালয়ে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

নতুন এমপিও নীতিমালায় কী পরিবর্তন আনা হয়েছে?

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রয়োজন মনে করলে স্কুল-কলেজের প্রধান হিসেবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

বেসরকারি শিক্ষকরা কেন এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন?

তাদের দাবি, সরকারি কলেজই সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারা শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান করা হলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন সংকট তৈরি হবে।

বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলোর প্রধান উদ্বেগ কী?

তারা মনে করছেন, এ ধারা চালু থাকলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ শিক্ষকরা বঞ্চিত হবেন এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে।

শিক্ষক নেতারা কী দাবি তুলেছেন?

শিক্ষক নেতারা বলছেন, মাউশি অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে যেমন বেসরকারি শিক্ষকদের প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়, তেমনি স্কুল-কলেজের প্রধান পদেও এমপিওভুক্ত অভিজ্ঞ শিক্ষককে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিতর্কিত ধারার বিষয়ে তারা কী পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন?

বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, নতুন নীতিমালার এ ধারা বাতিল না হলে তারা আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

উপসংহার

এমপিও নীতিমালায় স্কুল-কলেজে শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগের সুযোগ তৈরি হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এ উদ্যোগ বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও পেশাগত নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। ফলে নীতিমালাটিকে পুনর্বিবেচনার দাবিতে তাঁরা জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top