বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে। ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকরণের পর সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এই সরকারের আইনগত, গণতান্ত্রিক ও নৈতিক বৈধতা নেই। যাদের নিজেদেরই বৈধতা নেই, তাদের এই হাস্যকর কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চিন্তিত নয়। এই সরকারের হাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী এবং পুলিশের রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। নিজেদের গণহত্যার দায় আমাদের ওপর চাপানোর জন্যেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এদিকে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ সম্পর্কে প্রমাণস্বরূপ তথ্য দেশের প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, যেহেতু ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণের ওপর উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অনেকের জীবন বিপন্ন করেছে; এবং যেহেতু সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসাবে তালিকাভুক্ত করল। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার কারণ কী?
সরকার অভিযোগ করেছে যে ছাত্রলীগ আন্দোলনরত ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করেছে এবং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত।
ছাত্রলীগের সভাপতি কি এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট?
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এ সিদ্ধান্তকে অবিচার হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে থাকবে এবং নিষেধাজ্ঞা মেনে নেবে না।
সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া কেমন?
ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রস্তুত এবং জনগণের সমর্থন আদায় করতে কাজ করবে।
নিষিদ্ধের ফলে ছাত্রলীগের কার্যক্রম কীভাবে প্রভাবিত হবে?
নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংগঠনটি কার্যক্রম চালাতে পারবে না, তবে তারা জনগণের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
উপসংহার
নিষিদ্ধের পর ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সংগঠনটি নিজেদের প্রতি অযথা দোষ চাপানো এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ তাদের সংগঠনকে জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য প্রস্তুত। ফলে, সরকার ও ছাত্রলীগের মধ্যে এই সংঘাত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন রূপ নিতে পারে। আগামী দিনগুলোতে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ও সরকারের পদক্ষেপের দিকে নজর রাখা প্রয়োজন।




