শিক্ষকদের অপমান করে উন্নয়ন সম্ভব নয় : ড. মঈন খান

শিক্ষকদের অপমান করে উন্নয়ন সম্ভব নয় : ড. মঈন খান

“শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষক তার আত্মা”— মন্তব্য করে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, “আমরা শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে বিবেচনা করি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যে দেশ শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারেনি, দক্ষ শিক্ষক ও মেধাবী ছাত্র তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, সে দেশ কখনোই অগ্রগতির পথে এগোতে পারেনি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, “আজ দেশে শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে—এর চেয়ে লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক কিছু হতে পারে না। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলতে চাই, এটি শুধু ব্যক্তিগত আঘাত নয়, এটি শিক্ষার প্রতি গভীর অবমাননা। শিক্ষকদের অসম্মান করে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্যের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

ড. মঈন খান বলেন, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষক তার আত্মা। আমরা শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর বলে সম্মান জানাই। ইতিহাস সাক্ষী—যে দেশ শিক্ষায় অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি, দক্ষ শিক্ষক ও যোগ্য ছাত্র তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, সে দেশ কখনোই উন্নতির পথে এগোতে পারেনি।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১৫ বছরে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট—যদি শিক্ষাকে ধ্বংস করা যায়, তাহলে পুরো জাতিকেও ধ্বংস করা সম্ভব। কারণ, তখন মানুষ আর যুক্তি দিয়ে ভাবতে পারবে না, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে পারবে না এবং প্রতিবাদ করার ক্ষমতাও হারাবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান অভিযোগ করেছেন, বিগত সরকার পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, “একটি ফ্যাসিবাদী সরকার সবসময় চায় মানুষ যেন অন্ধ, নির্বাক ও অসচেতন থাকে। সেই লক্ষ্যেই তারা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশে একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ের ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, “জার্মানির ইতিহাস আমাদের শেখায়—জ্ঞান, শিক্ষা ও শিক্ষক—এই ত্রয়ীই জাতির মূল শক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসের পরও তারা শিক্ষার শক্তিতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি শেষ করার কোনো সময়সীমা ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল একটাই—নিজেকে যোগ্য করে তোলা এবং সমাজকে আলোকিত করা। সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক বিষয় হলো, সেখানকার ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে একটাই কথা বলত—‘আমি শিক্ষক হবো’। এটাই ছিল তাদের জাতীয় দর্শন।”

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল আমাদের গর্বের প্রতীক। সেখানে টিউটোরিয়াল ব্যবস্থা, গবেষণার সুযোগ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারস্পরিক সম্পর্ক—সবকিছুই ছিল আদর্শ ও অনুসরণীয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় একসময় গোটা উপমহাদেশে শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে জ্বলেছে।”

বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি উল্লেখ করে ড. মঈন খান বলেন, “আজকের বিশ্বের প্রথম ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে ৬০–৭০টি প্রতিষ্ঠান। অনেকে বলেন, আমেরিকা শক্তিশালী কারণ তাদের সামরিক ক্ষমতা। কিন্তু আমি বলি, তাদের প্রকৃত শক্তি শিক্ষায়—সেখানে শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও মেধাবী ছাত্ররাই তাদের আসল সম্পদ।”

‘শিক্ষকদের অপমান করে উন্নয়ন সম্ভব নয়’—এ কথা পুনরায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজ দেশে শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হচ্ছে—এর চেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলতে চাই, এটি শুধু ব্যক্তিগত আঘাত নয়, এটি শিক্ষার প্রতি গভীর অবমাননা।”

সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে ড. মঈন খান বলেন, “যখন সরকার শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা ঘোষণা করে, তখন সেটিই তাদের শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। আজকের বাংলাদেশে কি কোনো শিক্ষক এই টাকায় বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন?”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা সংস্কারের নামে অসংখ্য কমিটি গঠন করা হয়েছে, অসংখ্য সভা-সেমিনার হয়েছে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। শিক্ষার মানে কোনো বাস্তব উন্নতি ঘটেনি।”

শেষে ড. মঈন খান বলেন, “জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে শিক্ষাকে আবার রাষ্ট্রের প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষককে দিতে হবে মর্যাদা, ছাত্রকে মানসম্মত শিক্ষা, আর বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দিতে হবে তার হারানো গৌরব।”

টি সাধারণ প্রশ্নোত্তর

আব্দুল মঈন খান কেন বলেছেন, শিক্ষকদের অপমান করে উন্নয়ন সম্ভব নয়?

তিনি মনে করেন, শিক্ষকরা জাতির আত্মা ও মানুষ গড়ার কারিগর। তাই তাদের প্রতি অবমাননা মানে শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতির প্রতি অসম্মান, যা কখনোই উন্নয়নের পথ তৈরি করতে পারে না।

তিনি কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন?

দেশে শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি এই বক্তব্য দেন।

মঈন খানের মতে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের কারণ কী?

তার মতে, বিগত সরকার পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে, যাতে জনগণ চিন্তা, প্রশ্ন ও প্রতিবাদ করতে না পারে।

তিনি কোন দেশের উদাহরণ দিয়েছেন শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে?

তিনি জার্মানির উদাহরণ দিয়েছেন, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদার মাধ্যমে দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি কী পরামর্শ দিয়েছেন?

তিনি বলেছেন, জাতিকে টিকিয়ে রাখতে শিক্ষাকে রাষ্ট্রের প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে, শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হবে।

উপসংহার

ড. আব্দুল মঈন খানের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, একটি জাতির টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা। শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান, অবমূল্যায়ন বা নির্যাতন শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো জাতিকেই পিছিয়ে দেয়। তাই উন্নত ও সচেতন বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষকদের সম্মান, মানসম্মত শিক্ষা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top