“বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা অধিকাংশ ছাত্রীই বিবাহিত ছিল। সংসার ও অন্যান্য পারিবারিক দায়িত্বের কারণে তারা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেনি, ফলে ফলাফল খারাপ হয়েছে।”

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলে পিরোজপুর জেলার দুইটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুজখোলা সম্মিলিত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (পিরোজপুর সদর) ও মধ্য চড়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ভান্ডারিয়া) — এই দুটি বিদ্যালয় থেকে মোট ১০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এবং সবাই ফেল করেছেন।
পিরোজপুরে দুই স্কুলে শূন্য পাস, শিক্ষকের গাফিলতি ও বাল্যবিয়ের অভিযোগ
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পিরোজপুরের দুইটি স্কুলে পাসের হার দাঁড়িয়েছে শতভাগ শূন্য। বিদ্যালয় দুটি থেকে অংশগ্রহণকারী ১০ জন শিক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছেন। স্থানীয়ভাবে এ নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
পরীক্ষার পরিসংখ্যান
জানা গেছে,
সদর উপজেলার জুজখোলা সম্মিলিত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫ জন।
ভান্ডারিয়া উপজেলার মধ্য চড়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৭ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও অংশ নেয় ৫ জন।
তবে এই ১০ জন পরীক্ষার্থীর কেউই পাস করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, উভয় স্কুলই এমপিওভুক্ত এবং সেখানে মোট ১০ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য
জুজখোলা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম হালদার বলেন,
“আমাদের রেজিস্ট্রেশনকৃত সব ছাত্রী বিবাহিত ছিলো। সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তারা ঠিকমতো ক্লাসে আসেনি এবং লেখাপড়া করতে পারেনি, তাই সবাই ফেল করেছে।”
অন্যদিকে মধ্য চড়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান,
“৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। স্কুলটি গ্রামীণ এলাকায় হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনিয়মিত এবং বাসায় পড়াশোনাতেও অনাগ্রহী ছিল। তাই কেউ পাস করতে পারেনি।”
স্থানীয়দের অভিযোগ
স্থানীয়রা জানান, এমপিওভুক্তির পরেও প্রতিষ্ঠান দুটিতে শিক্ষকদের অবহেলা ও দায়হীনতা প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে। তারা স্কুলে উপস্থিত থাকলেও নিয়মিত পাঠদান করেন না। এছাড়া জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকি একেবারে অনুপস্থিত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান
পিরোজপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন,
“আমরা এখনো এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো তথ্য পাইনি। সাধারণত এসব তথ্য বোর্ডে থাকে। বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা এলে আমরা তদনুযায়ী পদক্ষেপ নেবো। পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক অবস্থা, পাঠদানের পরিবেশ ও শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা খতিয়ে দেখা হবে।”

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
কোন স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেছে?
পিরোজপুর জেলার জুজখোলা সম্মিলিত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রেজিস্ট্রেশন করা সব ছাত্রী বিবাহিত ছিল এবং পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছে।
পরীক্ষায় কয়জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে?
বিদ্যালয়টি থেকে ১২ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫ জন। এদের সবাই ফেল করে, ফলে পাসের হার দাঁড়ায় ০%।
কেন ফলাফল এমন হলো বলে মনে করছেন শিক্ষকরা?
প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, সব ছাত্রী বিবাহিত হওয়ায় তারা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হয়নি এবং পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেনি। ফলে এমন ফল হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন কী বলছে?
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, তারা এখনো অফিসিয়ালভাবে ফলাফল পাননি। বোর্ডের নির্দেশনা পেলে প্রশাসনিক তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ কী?
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষকদের অবহেলা ও তদারকির অভাব, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখছে।
উপসংহার
স্কুলের সব ছাত্রীর বিবাহিত হওয়া এবং তাদের পরীক্ষায় শূন্য পাস শুধু ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, এটি সমাজে বাল্যবিয়ে, শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা ও প্রতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনার গভীর সংকটকে তুলে ধরে। শিক্ষক ও প্রশাসনের যৌথ দায়বদ্ধতা ছাড়া এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফেরাতে পরিবার ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা।




