“কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে হলে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ এবং নির্ধারিত পাসের হার বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত বা বাতিলের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হতে পারে।”

সারাদেশের মতো নওগাঁ জেলাতেও বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার দুটি এবং আত্রাই উপজেলার একটি মাদরাসা থেকে কেউই পাস করেনি, যা স্থানীয়ভাবে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
- শূন্য পাসপ্রাপ্ত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো:
- সোনাকুড়ি মালাহার মহিলা দাখিল মাদরাসা, মহাদেবপুর
- সফাপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসা, মহাদেবপুর
- ফটকিয়া বাঁশবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা, আত্রাই
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের এমপিও নীতিমালার ৫(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে হলে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং নির্ধারিত পাসের হার বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। এই শর্ত পূরণ না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত বা বাতিল করার বিধান রয়েছে।
সারা দেশের মতো নওগাঁ জেলায়ও বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলা থেকে সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে মোট ৫,৪৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৩,৭৫১ জন পাস করলেও ১,৬৭৯ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়।
এর মধ্যেই সবচেয়ে হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে তিনটি মাদ্রাসা থেকে—যেখানে শতভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে।
শূন্য পাসের তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠান:
সোনাকুড়ি মালাহার ইসলামিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা (মহাদেবপুর) – ১৭ জন পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল
সফাপুর আলিম মাদরাসা (মহাদেবপুর) – ১৬ জন অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি
ফটকিয়া বাঁশবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা (আত্রাই, নন-এমপিওভুক্ত) – ২ জন অংশ নিলেও কেউ পাস করেনি
ফটকিয়া মাদরাসার সুপার গোলাম মোস্তফা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,
“চারজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন পরীক্ষায় অংশই নেয়নি। একজন দুর্ঘটনার কারণে পুরো পরীক্ষা দিতে পারেনি এবং একজন ফেল করেছে। দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা পাঠদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।”
এমপিও বাতিলের শঙ্কা
মাদ্রাসা এমপিও নীতিমালার ৫(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে হলে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং ন্যূনতম পাসের হার বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। এই শর্ত পূরণ না হলে প্রতিষ্ঠানটির এমপিও স্থগিত বা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
কোন তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি?
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সোনাকুড়ি মালাহার ইসলামিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা, সফাপুর আলিম মাদরাসা এবং আত্রাই উপজেলার ফটকিয়া বাঁশবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা—এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পাসের ঘটনা ঘটেছে।
মোট কতজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল?
তিনটি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট ৩৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়—সোনাকুড়ি থেকে ১৭ জন, সফাপুর থেকে ১৬ জন এবং ফটকিয়া মাদরাসা থেকে ২ জন।
শূন্য পাসের ফলে এমপিও বাতিলের সম্ভাবনা কেন?
মাদ্রাসা এমপিও নীতিমালার ৫(৩) ধারা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পাসের হার ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বজায় না থাকলে প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত বা বাতিল হতে পারে।
ফটকিয়া মাদরাসায় পাস না হওয়ার পেছনে কারণ কী?
মাদ্রাসার সুপার জানিয়েছেন, চার পরীক্ষার্থীর মধ্যে দুজন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, একজন দুর্ঘটনায় পড়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারেনি এবং একজন ফেল করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকেরাও পাঠদানে আগ্রহ হারিয়েছেন।
এখন কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা রয়েছে?
জেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডে জানাবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তদন্ত ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এমপিও বাতিলসহ প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
উপসংহার
নওগাঁর তিনটি মাদরাসায় এসএসসি পরীক্ষায় শূন্য পাসের ঘটনা শুধু ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা নয়, বরং তা গোটা অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান সংকটের প্রতিফলন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী পাসের হার ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারিত মানের নিচে নামলে এমপিও বাতিল হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়, যা এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখন প্রয়োজন, দ্রুত তদন্ত, বাস্তব পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ—যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্বল ফলাফল আর না ঘটে।




