“সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ এবং সাবেক যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকারকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ এবং সাবেক যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকারকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রোববার (৬ জুলাই) বিকেলে নোয়াখালীর সেনবাগে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফারুক বলেন,
“আমি হারুন ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, কিন্তু এখনো তারা গ্রেফতার হয়নি। তারা যে অন্যায় করেছে, তার বিচার হওয়া উচিত। আমি আজকের অনুষ্ঠান থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবো, তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করুন। তারা কোথায় আছে তা খুঁজে বের করুন। আওয়ামী লীগের পেতাত্মারা যদি তাদের লুকিয়ে রাখে, তাহলে তাদেরও গ্রেফতার করুন।”
বিএনপির সিনিয়র নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “আল্লাহর রহমতে এই বয়সেও আমি হারুন-বিপ্লবের মতো নেতৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি ধরে রেখেছি। আমার বিষয়ে দুশ্চিন্তার কোনো প্রয়োজন নেই। দলের যে নেতাকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সেনবাগে প্রার্থী করা হবে, তার পক্ষেই আমরা কাজ করবো। তবে আমি এটুকু স্পষ্ট করে বলতে চাই—সেনবাগে যাদের রাজনৈতিকভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে, কলেজে প্রবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, কিংবা মাইজদী কারাগারে দিনের পর দিন মানবেতর জীবন কাটাতে হয়েছে—তাদের কণ্ঠও শোনা উচিত। এই দলের ইতিহাস, ত্যাগ, ও সংগ্রাম ভুলে গেলে চলবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কাউকে উসকাতে চাই না, তবে যারা সেনবাগ থেকে সংসদ সদস্য হতে চান, তাদের উচিত মাঠে নেমে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে হবে। বিদেশ থেকে বিমানে এসে নামলেই নেতৃত্ব অর্জন করা যায় না। টাকা দিয়ে নেতৃত্ব কেনা গেলেও কর্মী কেনা যায় না। আজও আমার একমাত্র শক্তি—আমার ঈমান।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “জনগণ যে দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পণ করেছে, তা যথাযথভাবে পালন করুন। মৃত ব্যক্তির ভোট যেন আর না হয়—এই দেশের মানুষ এবার সঠিক নির্বাচন চায়। আমার ভোট আমি নিজে দিবো, যাকে ইচ্ছা তাকে দিবো—এটাই গণতন্ত্র। আমাদের নেতা তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই নির্বাচনে কোনো মৃত ব্যক্তির ভোট নয়; এমন নির্বাচন চাই, যাতে বিএনপি জনগণের রায়ে সরকার গঠন করতে পারে। লন্ডন বৈঠকের পর আমরা আশা করেছিলাম, আর কোনো ষড়যন্ত্র হবে না। তাই আমরা দাবি জানাই—শীঘ্রই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নয়, আমরা চাই জাতীয় নির্বাচন।”
বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “আল্লাহর অশেষ কৃপায় আজও এই বয়সে আমি হারুন-বিপ্লবের মতো নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকার শক্তি রাখি। আমার বিষয়ে কোনো দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। দলের যাকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে সেনবাগে মনোনয়ন দেওয়া হবে, আমরা তার পক্ষেই নির্বাচনী মাঠে থাকবো। তবে এটি মনে রাখতে হবে—সেনবাগে যেসব নেতাকর্মী রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, কলেজে প্রবেশ করতে পারেননি, বা কারাবরণ করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতাও দলের মূল্যায়নের অংশ হওয়া উচিত। ত্যাগ আর সংগ্রামের এই ইতিহাস আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কারও বিরুদ্ধে উসকানি দিতে চাই না। তবে যারা সেনবাগে সংসদ সদস্য হতে চান, তাদের জনগণের পাশে থেকে নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যে নেতাকর্মীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। কেবল বিদেশ থেকে ফিরে এসে বা অর্থবলের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায় না। টাকা দিয়ে নেতৃত্ব কেনা সম্ভব হলেও আদর্শনিষ্ঠ কর্মী তৈরি করা যায় না। আজও আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার ঈমান, জনগণের ওপর বিশ্বাস।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “জনগণ আপনার ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তা আন্তরিকভাবে পালন করুন। এই দেশে আর মৃত মানুষের নামে ভোট চলবে না। আমার ভোট আমি নিজে দিব, যাকে বিশ্বাস করি তাকে দিব—এটাই গণতন্ত্র। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এবার এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে কোনো ধরনের কারসাজি থাকবে না এবং বিএনপি জনগণের রায়ে সরকার গঠন করতে পারবে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম যে, আর কোনো ষড়যন্ত্র হবে না। সেই প্রত্যাশা পূরণে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, এখন প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন।”

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
জয়নুল আবদিন ফারুক কেন হারুন-বিপ্লবের নাম উল্লেখ করেছেন?
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “আল্লাহর রহমতে এই বয়সেও আমি হারুন-বিপ্লবের মতো নেতৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি ধরে রেখেছি।” এখানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বয়স হলেও এখনো তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় এবং দলের ভেতরের নেতৃত্বসংক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাহস ও সক্ষমতা রাখেন।
এই বক্তব্যে তিনি কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, দলের প্রার্থী নির্ধারণে কেবল পরিচিত মুখ নয়, ত্যাগী, নির্যাতিত ও স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। হারুন-বিপ্লবের নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি সতর্ক করেছেন যে, ঢাকা বা বিদেশনির্ভর রাজনীতি না করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।
ফারুকের মতে কারা উপেক্ষিত হচ্ছেন সেনবাগে?
তিনি বলেন, “যাদের দোকান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, মাইজদী কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে—তাদের কণ্ঠও শুনতে হবে।” অর্থাৎ, ত্যাগী নেতাকর্মীরা বারবার অবমূল্যায়িত হচ্ছেন।
হারুন-বিপ্লবের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলেছেন কি?
না, তিনি সরাসরি কারো নাম করে অপমানজনক কিছু বলেননি। তবে নেতৃত্ব প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গে ‘হারুন-বিপ্লবের মতো’ বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এমন নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি এখনো লড়াই করার মানসিকতা ও শক্তি রাখেন।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দলকে কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
তিনি দলকে সতর্ক করেছেন যেন শুধু অর্থবিত্ত বা প্রবাসী পরিচয়ে নেতৃত্ব তৈরি না হয়। স্থানীয়ভাবে ত্যাগী, নিষ্ঠাবান ও নিপীড়িত নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ কর্মীদের মতামত ও ইতিহাসকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
উপসংহার
জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে দলের ভেতরে নেতৃত্ব বাছাই নিয়ে তাঁর উদ্বেগ, অভিজ্ঞতা এবং প্রত্যাশা। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, রাজনীতি কেবল অর্থ, অবস্থান বা প্রবাসী পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত নয়; বরং ত্যাগ, নিষ্ঠা ও মাঠপর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতাই হওয়া উচিত নেতৃত্বের আসল ভিত্তি। হারুন-বিপ্লব প্রসঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন— সত্যিকারের কর্মীবান্ধব ও ত্যাগী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে।
একইসঙ্গে তিনি দেশবাসী ও নির্বাচন পরিচালনাকারী দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বলেছেন, একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন ছাড়া দেশের গণতন্ত্র চরম সংকটে পড়বে। তাঁর বক্তব্য ছিল শক্তিশালী, কিন্তু সংযত—যেখানে দলীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আহ্বানই ছিল মূল সুর।