“শত্রু” হিসেবে শয়তানকে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারণ সে মানুষকে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে সবসময়।

শয়তান মানুষের চিরকালীন শত্রু। সে সবসময় চেষ্টা করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে গুনাহর পথে টেনে নিতে। তাই আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে বলেছেন:
“নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তোমরাও তাকে শত্রু হিসেবেই গণ্য করো।”
(সূরা ফাতির: ৬)
একজন মুমিন যদি কখনও নিজের নিয়ন্ত্রণহীন নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় গুনাহে লিপ্ত হয়, কিন্তু পরে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়—তবে আল্লাহ তা কবুল করেন। কারণ, শিরক ছাড়া অন্য সব গুনাহ আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না, তবে এ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।”
(সূরা নিসা: ৪৮)
অনেকেই গুনাহ করার পর হতাশায় ভেঙে পড়েন। অথচ আল্লাহ নিজেই বান্দাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন:
“হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছ! তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে থাকেন। তিনিই তো অতিমাত্রায় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা যুমার: ৫৩)
আরেক স্থানে আল্লাহ বলেন:
“তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা নিসা: ১০৬)
শয়তান মানুষের চিরন্তন শত্রু। কোরআনে আল্লাহ বারবার আমাদের সতর্ক করেছেন যেন আমরা তাকে বন্ধু নয়, বরং শত্রুর মতোই গণ্য করি। তিনি বলেন:
“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরাও তাকে শত্রু হিসেবেই গণ্য করো।”
(সূরা ফাতির: ৬)
শয়তানের অন্যতম কৌশল হলো, মানুষকে গুনাহে লিপ্ত করে হতাশা ও নিরাশায় ফেলে দেওয়া। তবে ইসলামে গুনাহ যত বড়ই হোক, তাওবার দরজা সবসময় খোলা। যদি কেউ ভুল করে ফেলে, কিন্তু অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ফিরে আসে, তবে সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও দয়ালু রূপে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যে কেউ মন্দ কাজ করবে অথবা নিজের উপর জুলুম করবে, তারপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সে আল্লাহকে পাবে অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।”
(সূরা নিসা: ১১০)
এমনকি যারা গুনাহ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়, তাদের প্রতিও আল্লাহর আহ্বান:
“হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন।”
(সূরা যুমার: ৫৩)
তিনি আরও বলেন:
“তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা নিসা: ১০৬)
এবং:
“আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।”
(সূরা নুহ: ১০)

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
আমি যদি গুনাহ করি এবং পরে অনুতপ্ত হই, তাহলে কি আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন?
হ্যাঁ, কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি তাওবা করলে তিনি সব গুনাহ মাফ করে দেন।
“নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।” (সূরা যুমার: ৫৩)
আল্লাহ কোন গুনাহ কখনোই ক্ষমা করেন না?
শিরক (অন্যকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা) তাওবা ছাড়া ক্ষমাযোগ্য নয়।
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শিরককে ক্ষমা করেন না, তবে এ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” (সূরা নিসা: ৪৮)
অনুতপ্ত হওয়ার সঠিক পদ্ধতি কী?
খাঁটি অন্তর দিয়ে গুনাহ স্বীকার করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, ভবিষ্যতে আর না করার প্রতিজ্ঞা করা এবং গুনাহে ফিরে না যাওয়া।
যারা বড় গুনাহ করেছে, তাদের জন্যও কি ক্ষমার সুযোগ আছে?
আছে। যত বড় গুনাহই হোক না কেন, আন্তরিক তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
“যে কেউ মন্দ কাজ করে, তারপর তাওবা করে, সে আল্লাহকে পায় অতি ক্ষমাশীল।” (সূরা নিসা: ১১০)
বারবার গুনাহ করে আবার তাওবা করলে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?
হ্যাঁ, যদি প্রতিবারই তাওবা আন্তরিক হয় এবং গুনাহকে গুনাহ বলে স্বীকার করা হয়, তবে আল্লাহ ক্ষমা করতে থাকেন।
হাদীসে এসেছে: “বান্দা যতবার ফিরে আসবে, আল্লাহ ততবার ক্ষমা করবেন।”
উপসংহার
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের رب অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তিনি সত্যিকারের অনুতপ্ত বান্দাদের জন্য দরজা খুলে রেখেছেন। যত বড় গুনাহই হোক, আন্তরিক তাওবা ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষ নিজের ভুল মিটিয়ে নতুন করে জীবনের পথ চলা শুরু করতে পারে। তাই কখনোই হতাশ বা নিরাশ হবার প্রয়োজন নেই, কারণ আল্লাহর রহমত সবসময় আমাদের সাথে।




