“নতুন বাংলাদেশ দিবস তখনই যথার্থভাবে উদযাপিত হবে, যেদিন মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষিত হবে এবং একটি আনুষ্ঠানিক জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ পাবে।”

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সম্ভাব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা—সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আখতার হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, “নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট নয়। সাধারণ ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগস্ট যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, সেটিকে সরকার কিংবা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।”
একই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনও। তিনি লেখেন, “নতুন বাংলাদেশ দিবস তখনই যথার্থ অর্থে স্বীকৃত হবে, যেদিন একটি আনুষ্ঠানিক জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হবে এবং মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ জুলাই সনদ প্রণীত হবে।”
নেতৃবৃন্দের এমন মন্তব্য ইঙ্গিত করে যে, ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণাকে ঘিরে রাজনৈতিক বলয়গুলোর মধ্যে মতানৈক্য ও প্রতীকী তারিখ নির্ধারণ নিয়ে মতবিরোধ বিদ্যমান রয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনকে কেন্দ্র করে ৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণায় আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির তিনজন শীর্ষ নেতা—সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আখতার হোসেন—ভিন্নমত পোষণ করে একে “ছাত্র–জনতার অর্জন কুক্ষিগত করার চেষ্টা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্টে এ অবস্থান তুলে ধরেন এনসিপি নেতারা।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, “নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৫ আগস্ট, ৮ আগস্ট নয়। সাধারণ ছাত্র–জনতার এই ঐতিহাসিক অর্জনকে সরকারের কুক্ষিগত করার চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”
সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “নতুন বাংলাদেশ দিবস সেদিনই হবে, যেদিন মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ জুলাই সনদ প্রকাশিত হবে।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান। সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন, “৮ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা শুরু হয়নি। বরং সেদিন থেকেই দ্বিতীয় স্বাধীনতা নষ্টের, ছাড় দেওয়ার এবং বিপ্লব বেহাতের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রকৃত নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে ৫ আগস্ট। তাই ৫ আগস্টই ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত হওয়া উচিত।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে। তিন দিন পর, ৮ আগস্ট অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
এ প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল একটি পরিপত্র জারি করে ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস’, ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ এবং ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন সেই গণ–আন্দোলনের প্রথম শহীদ, যিনি ১৬ জুলাই আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
পরিপত্রে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা প্রতিবছর যথাযথ মর্যাদায় এই দিবসগুলো পালন করবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
“নতুন বাংলাদেশ দিবস” কখন ঘোষণা করা হয়েছে এবং তা কী উপলক্ষে?
- উত্তর: ২৫ জুন ২০২৫ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করে তিনটি সরকারি দিবস ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৮ অগাস্টকে ঘোষণা করা হয় “নতুন বাংলাদেশ দিবস” হিসাবে, যেদিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল
- dhakamail.com
- +7
- samakal.com
- +7
- ajkalusa.com
- +7
- ।
আখতার হোসেন কী বলছেন এই নতুন দিবস নিয়ে?
উত্তর: আখতার হোসেন (জাতীয় নাগরিক পার্টি, সদস্য সচিব) ফেসবুকে জানান, “নতুন বাংলাদেশ দিবস” হওয়ার উপযুক্ত দিন হবে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিন, যখন “মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ” ঘোষণা হবে । অর্থাৎ, তার মতে ৮ অগাস্ট নয়; বরঞ্চ “জুলাই সনদ”-এর দিনটিই হওয়া উচিত।
সারজিস আলম কী যুক্তি দিয়েছেন?
- উত্তর: উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন,
- “৮ অগাস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা শুরু হয়নি; …বিপ্লব বেহাতের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ এবং ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’।”
samakal.com
ajkalusa.com
+10
dhakamail.com
+10
bbarta24.net
+10 - ফেসবুকে তার যুক্তি: ৮ অগাস্ট ছিল প্রকৃত পরিবর্তনের শুরু নয়, বরঞ্চ তা ছিল বিপ্লবের অধঃপতন।
হাসনাত আবদুল্লাহ কী বলেন?
- উত্তর: দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন:
- “নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৫ অগাস্টে। ৮ অগাস্ট না। …সাধারণ ছাত্র‑জনতার এই অর্জনকে সরকারের কুক্ষিগত করার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।”
sangbadsarabela.com
+7
dhakamail.com
+7
bbarta24.net
+7
তিনি রঙ্গে বুঝিয়েছেন যে, প্রকৃত গণঅভ্যুত্থানের দিনটিই (৫ অগাস্ট) হওয়া উচিত, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের দিন নয়।
তারা কেন ৫ অগাস্টকে সঠিক মনে করেন?
- উত্তর: ৫ অগাস্ট ২০২৪ তারিখে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” সংগঠিত হয়েছিল এবং এর ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে
- dhakamail.com
- +9
- samakal.com
- +9
- jugantor.com
- +9
- । জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা বিশ্বাস করেন এটি প্রকৃত বিপ্লবের দিন এবং সেটিকে “দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস” বা “নতুন বাংলাদেশ” হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত—৮ অগাস্ট নয়, যেদিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল।
উপসংহার
“নতুন বাংলাদেশ দিবস” ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আখতার হোসেন, সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহর আপত্তি মূলত তারিখ নির্বাচনের বৈধতা ও অর্থবোধকতা নিয়ে। তাদের মতে:
৮ অগাস্ট হচ্ছে একটি প্রশাসনিক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সূচনাদিন, যা জনগণের বিপ্লবের প্রতিফলন নয়।
আসল পরিবর্তন এসেছে ৫ অগাস্ট, যেদিন গণঅভ্যুত্থান এবং জনগণের সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় বড় পরিবর্তন আসে।
এই কারণে তারা চান ৫ অগাস্টকে “নতুন বাংলাদেশ দিবস”, বা “দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস” হিসাবে চিহ্নিত করা হোক।
এই বিতর্কে একটি বিষয় পরিষ্কার—এই তিন নেতা চান গণ-ইচ্ছা ও বিপ্লবের ইতিহাসকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হোক, যেন ইতিহাস বিকৃতি না ঘটে এবং গণতান্ত্রিক অর্জনের যথার্থ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।




