শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ

আজ শেখ হাসিনা ও আরও একজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই শুনানি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

বিচারিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরও একজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আদালত অবমাননার মামলায় একজন অ্যামিকাস কিউরি (আইনি সহায়তাকারী) নিয়োগ দিয়েছে।

সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের অভিজ্ঞ সদস্য এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন), ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ প্রদান করে।

একইসঙ্গে, আজ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানিতে শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার যুবলীগ নেতা শাকিল আহমেদ বুলবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি হবে।

উল্লেখযোগ্য, গত ৩ জুন এই মামলার জন্য শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

মামলার প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, গত ৩০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে এক প্রসিকিউটর ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স’ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য তুলে ধরে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা আদালত অবমাননার মামলায় গত ২৫ মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং গাইবান্ধার যুবলীগ নেতা শাকিল আহমেদ বুলবুলকে ৭ দিনের মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন।

তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও, নির্ধারিত দিনে — ৩ জুন — neither শেখ হাসিনা nor শাকিল আহমেদ বুলবুল বা তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি।

উল্লেখ্য, মামলাটি প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ৩০ এপ্রিল দায়ের করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনা ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন, যা আদালতের প্রতি অবমাননাকর।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাটি কী নিয়ে?

মামলাটি দায়ের করা হয় ৩০ এপ্রিল, যেখানে শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বক্তব্য—”২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স”—আদালতের প্রতি অবমাননাকর বলে দাবি করে প্রসিকিউশন। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের হয়।

অ্যামিকাস কিউরি কী এবং কেন নিয়োগ দেওয়া হয়?

অ্যামিকাস কিউরি (Amicus Curiae) অর্থ “আদালতের বন্ধু”। এটি এমন একজন স্বাধীন ও অভিজ্ঞ আইনজীবী যিনি আদালতকে আইনি মতামত দিয়ে সহায়তা করেন, বিশেষ করে যেখানে মামলার পক্ষসমূহ আদালতে সঠিকভাবে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন বা কোনো জটিল আইনি বিষয় থাকে।

এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান-কে এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

শেখ হাসিনা বা অন্য আসামি কি ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়েছেন?

না। ট্রাইব্যুনাল থেকে ২৫ মে দুই আসামিকে ৭ দিনের মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ৩ জুন শুনানির দিন, শেখ হাসিনা ও শাকিল আহমেদ বুলবুল অথবা তাঁদের কোনো প্রতিনিধিও আদালতে উপস্থিত হননি।

এই মামলার পরবর্তী ধাপ কী হতে পারে?

এখন অ্যামিকাস কিউরি আদালতকে মামলার আইনি দিক বিশ্লেষণ করে মতামত দেবেন। এরপর আদালত প্রয়োজনীয় আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে—যেমন, একতরফা শুনানি, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি বা মামলার নিষ্পত্তি।

উপসংহার

আদালতের মর্যাদা রক্ষা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ দুই আসামির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আদালত অবমাননার মামলায় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আসামিপক্ষ আদালতে অনুপস্থিত থাকায় অ্যামিকাস কিউরির মতামত মামলাটির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ঘটনা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top