ইরানকে সমঝোতায় আসতে হবে, সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই : ট্রাম্প

ইরানকে সমঝোতায় আসতে হবে, সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই : ট্রাম্প

“ইরানকে অবশ্যই সমঝোতার পথে আসতে হবে—এবং তা হওয়া উচিত চূড়ান্ত ধ্বংসের আগেই। যত দ্রুত সম্ভব শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে হবে। আর নয় ধ্বংস, আর নয় মৃত্যু। ঈশ্বর সকলকে সুরক্ষা ও আশীর্বাদ করুন।”

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে ‘অবশ্যই’ সমঝোতায় আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই বিষয়ে যদি ইরান দ্বিধায় থাকে, তবে দেশটিকে ইসরায়েলের আরও ভয়াবহ হামলা, ধ্বংস ও প্রাণহানির মুখোমুখি হতে হবে।

শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প লেখেন,
“ইতোমধ্যে (ইরানে) অনেক মৃত্যু ও ধ্বংস হয়েছে। পরবর্তী হামলাগুলো আরও নিষ্ঠুর হবে এবং সব কিছু শেষ করে দেবে। কিন্তু এখনও এই ধ্বংস থামানোর সুযোগ আছে।”

তিনি আরও বলেন,
“ইরানকে অবশ্যই সমঝোতায় আসতে হবে, এবং সেটি হতে হবে সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই। যত দ্রুত সম্ভব শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসুন। আর কোনো ধ্বংস নয়, কোনো মৃত্যু নয়। ঈশ্বর আপনাদের সবাইকে আশীর্বাদ করুন।”

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বার্তা কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি সামরিক চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল হতে পারে, যা বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই ইরানের ওপর বড় ধরনের সামরিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার ভোররাতে রাজধানী তেহরানসহ অন্তত আটটি শহরে বোমা হামলা চালানো হয়, যাকে বিশ্লেষকরা বলছেন—মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক সংঘাতের শুরু।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার অন্তত ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। হামলায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভোল্যুশনারী গার্ডের প্রধান কমান্ডার হোসাইন সালামি, পরমাণু বিজ্ঞানী ফেরেয়দুন আব্বাসি ও মোহাম্মদ তেহরানচি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েল দাবি করেছে, এই হামলা একটি দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের সূচনা, যার লক্ষ্য—তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। তাদের ভাষ্য, ‘এই পদক্ষেপ ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে দিতে সাহায্য করবে।’

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও সমঝোতার আহ্বান
এর আগে বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন,
“ইরান কখনই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারে না। আমি আশা করি তারা আবারও কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে আসবে।”

পরদিন শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,
“ইতোমধ্যে অনেক ধ্বংস ও প্রাণহানি ঘটেছে। পরবর্তী হামলা আরও ভয়াবহ হবে। এখনো সময় আছে সমঝোতায় আসার—আর নয় ধ্বংস, আর নয় মৃত্যু।”

নেতানিয়াহুর ঘোষণা: ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দিয়েছেন নতুন সামরিক অভিযানের নাম—‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’।
তিনি বলেন,
“আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। যতক্ষণ না ইরান থেকে হুমকি বন্ধ হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের অভিযান চলবে।”

পাল্টা হামলার শঙ্কা ও জরুরি অবস্থা
ইরানি সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার পরপরই তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ-এ বিস্ফোরণ ঘটে। ইরানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

ঘন ঘন জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

ট্রাম্প কেন বলছেন, ইরানকে সমঝোতায় আসতে হবে?

উত্তর: ট্রাম্প মনে করেন, ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় না আসে, তাহলে আরও ভয়াবহ হামলার শিকার হবে এবং দেশটির ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে। তাই সময় থাকতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বেছে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি এই বার্তা কোথায় ও কবে দিয়েছেন?

২০২৫ সালের ১৩ জুন, শুক্রবার ভোরে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই বার্তাটি পোস্ট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের মতে, ইরান যদি সমঝোতায় না আসে তাহলে কী হবে?

উত্তর: ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পরবর্তী হামলা আরও নিষ্ঠুর হবে, যা “সব কিছু শেষ করে দিতে পারে।” তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক ধ্বংস হয়েছে, এখনো এই ধ্বংস থামানোর সুযোগ আছে।

ট্রাম্প কি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলাকে সমর্থন করছেন?

তিনি সরাসরি হামলার পক্ষে অবস্থান না নিলেও, তার বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে তিনি ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন এবং ইরানের প্রতি চাপ সৃষ্টি করছেন।

ট্রাম্প শান্তির জন্য কী বার্তা দিয়েছেন?

উত্তর: তিনি বলেন, “আর কোনো ধ্বংস নয়, কোনো মৃত্যু নয়। ঈশ্বর আপনাদের সবাইকে আশীর্বাদ করুন।” এ বক্তব্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।

উপসংহার

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top