“উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরের বঞ্চনার ক্ষতিপূরণ এক বা দুই বছরের বাজেট দিয়েই মেটানো সম্ভব নয় — বিষয়টি বোঝানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। বেসরকারি খাতের বেতন কাঠামোকে আজই সরকারি বেতনের সমান করে দেওয়ার দাবিটি ন্যায্য হলেও, বাস্তবতার নিরিখে এক বছরের বাজেট দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বৈষম্য দূর করা কঠিন। তবে, পরিবর্তনের সূচনা অবশ্যই প্রয়োজন। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ সূচনাটিই আমরা করে যাচ্ছি।’”

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর দিয়েছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি জানিয়েছেন, এ বছরের ঈদুল আজহার সময় থেকেই শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়ি ভাড়া ভাতা ও চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ানো হবে। এ ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি আগামী অর্থবছরের বাজেটেও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের বিদায় এবং নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরারের যোগদান উপলক্ষে।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগেই আমি সবাইকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, আমাদের আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে থেকে চলতি ও আগামী অর্থবছরের বাজেটে আমরা যতটা সম্ভব শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণের চেষ্টা করব। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরের বঞ্চনা এক বা দুই বছরের বাজেট দিয়ে দূর করা সম্ভব নয়—এটি বোঝানো সহজ নয়। বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনকে সরকারি শিক্ষকদের সমমানের করা একটি যৌক্তিক দাবি, তবে বাস্তবতা হলো—এক বছরের বাজেট দিয়েই দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসন করা যায় না। তবুও পরিবর্তনের একটি সূচনা প্রয়োজন, এবং সেই সূচনাটিই আমরা করে যাচ্ছি।’
তিনি পরিষ্কার করে জানান, ভাতা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট অঙ্ক এখনই ঘোষণা করা সম্ভব না হলেও, এ বছর এবং পরবর্তী বাজেটে এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ভাতা নিশ্চিত করতে একটি পৃথক তহবিল গঠনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এ তহবিলের একটি অংশ চলতি অর্থবছরেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং আগামী বাজেটে আরও বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে ফান্ডকে টেকসই করতে দীর্ঘমেয়াদী বাজেট পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই তহবিল এক বা দুই বাজেটে পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতের তিন থেকে চারটি বাজেটের মধ্যেই এটি একটি স্থায়ী ও কার্যকর কাঠামো পাবে বলে আশা করছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘পূর্বে অবসর ও কল্যাণ ভাতার তহবিল ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি ব্যাংকে রাখা হয়েছিল, যার আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল। ফলে কিছু অর্থ ইতোমধ্যেই অন্য খাতে চলে গেছে।’
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কল্যাণ ভাতা ও অবসর ভাতা তাদের সবচেয়ে ন্যায্য দাবি। অথচ, তারা সংগঠিত নন, রাস্তায় নামেননি, প্রতিবাদও করেননি। কিন্তু আমি মনে করি, তাদের এই দাবিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল এবং সেই দিকেই আমরা অগ্রসর হয়েছি।’
তবে অন্যদিকে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি নজর না দেওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেক শিক্ষক। বিদায়ী উপদেষ্টার এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো অবস্থান না নেওয়ায় অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করছেন, বিশেষ করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
ঘন ঘন জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
কোন কোন ভাতা বাড়ানো হচ্ছে?
- উত্তর: বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বাড়ানো হচ্ছে —
- বাড়ি ভাড়া ভাতা
- উৎসব ভাতা
- বিনোদন ভাতা
- চিকিৎসা ভাতা
এই ভাতাগুলোর বৃদ্ধি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে।
কবে থেকে এই নতুন ভাতা কাঠামো কার্যকর হবে?
উত্তর: ২০২৫ সালের ঈদুল আজহা থেকে কিছু ভাতার বৃদ্ধি কার্যকর হবে। বাকি অংশ পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে।
এই বাড়তি ভাতা সকল শিক্ষকের জন্য প্রযোজ্য কি?
উত্তর: প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা এই সুবিধা পাবেন। সরকারি শিক্ষকরা ইতোমধ্যেই এসব ভাতা পান।
এই ভাতা বৃদ্ধির জন্য বাজেটে কী পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হয়েছে?
নির্দিষ্ট অঙ্ক এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিদায়ী উপদেষ্টা জানিয়েছেন, চলতি ও আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (বরাদ্দ) রাখা হয়েছে।
অবসর ও কল্যাণ ভাতার বিষয়ে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
একটি স্থায়ী তহবিল গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এ বছর আংশিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং আগামী ৩-৪টি বাজেটের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই তহবিল গঠনের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
উপসংহার
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রেক্ষিতে সরকার ধাপে ধাপে ভাতা বৃদ্ধির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। বাড়ি ভাড়া, উৎসব, বিনোদন ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি যেমন স্বীকৃতির প্রতিফলন, তেমনি অবসর ও কল্যাণ ভাতার জন্য স্থায়ী তহবিল গঠন শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে। যদিও সম্পূর্ণ সমাধান সময়সাপেক্ষ, তবুও এই সূচনাই ভবিষ্যতের আশার আলো।




