“অনুমোদন ছাড়া হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি ব্যক্তি, তবে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।”

রোববার (১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হজ পালনের উদ্দেশ্যে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৮ জন, তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের সে প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে।
সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুমোদন ছাড়া হজে অংশগ্রহণ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অবৈধভাবে মক্কায় প্রবেশ ও হজ পালনের পরিকল্পনার অভিযোগে এসব ব্যক্তিকে নগরী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য এ ধরনের অননুমোদিত অংশগ্রহণকারীরাই অনেকাংশে দায়ী। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত বছরের প্রচণ্ড গ্রীষ্মে প্রায় ১,৩০০ হজযাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার পেছনেও এই অননুমোদিত হাজিদের একটি বড় ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়।
এই ব্যাপক বহিষ্কারের ঘটনা হজ পালনের প্রতি বিশ্ব মুসলিমের গভীর আগ্রহ এবং অনুমোদনহীন হজযাত্রার বিস্তারকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
বর্তমানে মক্কায় আনুমানিক ১৪ লাখ নিবন্ধিত হজযাত্রী অবস্থান করছেন এবং আশা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে আরও অনেকে সেখানে পৌঁছাবেন।
সৌদি আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া হজ পালনের চেষ্টা করলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৫,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা এবং নির্বাসনের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই আইন কেবল বিদেশি নাগরিকই নয়, সৌদি নাগরিক ও দেশটিতে বসবাসকারী অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি হজ নিরাপত্তা কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আল-ওমারি জানান, “হজযাত্রীদের প্রতি আমাদের নজরদারি রয়েছে। যারা নিয়ম লঙ্ঘন করবেন, তারা আমাদের নজরদারির আওতায় চলে আসবেন।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হজ সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে ইতোমধ্যে ২৩ হাজারের বেশি সৌদি বাসিন্দাকে জরিমানা করা হয়েছে এবং প্রায় ৪০০টি হজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
ঘন ঘন জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
কেন দুই লাখ ৬৯ হাজার মানুষ মক্কায় ঢুকতে পারেননি?
তারা হজ পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি না নিয়ে মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন ছাড়া কারো হজে অংশগ্রহণ করতে দেয় না।
সৌদি সরকার এই অননুমোদিত হাজিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
নিরাপত্তা বাহিনী তাদের মক্কায় প্রবেশ থেকে বিরত রেখেছে ও অনেককে শহর থেকে বের করে দিয়েছে। একইসঙ্গে, নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে জরিমানা ও বহিষ্কারের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
অনুমতি ছাড়া হজ করতে গেলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে?
হজের অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা এবং দেশ থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। এই আইন সৌদি নাগরিকদের জন্যও প্রযোজ্য।
কেন এত মানুষ অনুমতি ছাড়াই হজে যেতে চান?
হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, তাই বহু মুসলমান হজ পালনে আগ্রহী। তবে সীমিত কোটা ও কঠোর অনুমোদন ব্যবস্থার কারণে অনেকে অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করেন।
সৌদি কর্তৃপক্ষ আর কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে ২৩ হাজারের বেশি সৌদি বাসিন্দাকে জরিমানা করা হয়েছে এবং প্রায় ৪০০টি হজ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। মক্কায় প্রবেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
উপসংহার
সৌদি আরবে হজ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত এবং সংগঠিত প্রক্রিয়া, যেখানে অনুমতি ছাড়া হজ পালনের কোনো সুযোগ নেই। এ বছর দুই লাখ ৬৯ হাজারের বেশি ব্যক্তি অনুমতি না নিয়ে মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করলেও, কর্তৃপক্ষের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফলে তারা সফল হননি। এই ঘটনা যেমন বিশ্ব মুসলিমদের হজ পালনের আগ্রহের প্রতিফলন ঘটায়, তেমনি অননুমোদিত হজযাত্রার চ্যালেঞ্জও সামনে নিয়ে আসে। মানুষের নিরাপত্তা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং পবিত্র হজের পবিত্রতা বজায় রাখতে সৌদি সরকারের এই পদক্ষেপ এক ধরনের বার্তাও দেয়—নিয়ম মেনে অংশগ্রহণই হজের প্রকৃত সম্মান রক্ষা করে।




