পেশাদার ভাষায় বাংলায় পুনর্লিখন:
বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপটি ছিল ‘অস্থিরতা সৃষ্টি করার মতো’ এবং এটি আইনসম্মত নয় বলে প্রতীয়মান হয়। তিনি আরও মন্তব্য করেন, এই সিদ্ধান্ত মামলার বাদী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ‘গভীর বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করে ফেডারেল আদালত সেটি বাতিল করেছেন। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’ স্থগিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বার্তায় জানান, আইন অনুসরণে ব্যর্থ হওয়ায় হার্ভার্ডের ওই কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই পদক্ষেপ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
ওই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে অচলাবস্থা আরও গভীর হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেয় এবং তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেডারেল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করেন।
আইনি পদক্ষেপের আগে হার্ভার্ড এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়:
“বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আগত আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের আমরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। তারা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেন, তা অপরিসীম। হার্ভার্ড এই বহুজাতিক শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের দ্রুত ও কার্যকর নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদানে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। প্রশাসনের এই প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্ত হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী, গবেষক এবং বৃহত্তর সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করছে এবং আমাদের একাডেমিক ও গবেষণা মিশনকে দুর্বল করে দিচ্ছে।”
পেশাদার ভাষায় বাংলায় পূর্ণাঙ্গ ও সংক্ষিপ্তসারধর্মী পুনর্লিখন:
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছয় হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ছিলেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পরপরই হার্ভার্ড ক্যাম্পাসজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ান ছাত্রী সারাহ ডেভিস, যিনি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ককাসের সভাপতি, বলেন, “এই সিদ্ধান্ত হাজারো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে তুলেছে।” তিনি জানান, এই ঘোষণা আসে এমন এক সময়ে, যখন তাদের স্নাতক সমাপ্তির মাত্র পাঁচ দিন বাকি। সিদ্ধান্তটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ও কাজ করার সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সুইডিশ স্নাতক শিক্ষার্থী লিও গেরডেন জানান, “আমরা এখনও অপেক্ষা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনো বার্তা আসে কিনা।” তিনি বলেন, হার্ভার্ডে ভর্তির দিনটি ছিল তার জীবনের সেরা দিন, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মর্যাদাপূর্ণ এই যাত্রার এমন পরিণতি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি। গেরডেন আরও বলেন, “হোয়াইট হাউস ও হার্ভার্ডের সংঘাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একপ্রকার ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে। এটি একেবারেই অমানবিক।”
ট্রাম্প প্রশাসন এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর তদন্ত শুরু করেছে এবং হার্ভার্ডসহ প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করছে। তারা হার্ভার্ডের নিয়োগ, ভর্তি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার দাবিতে একাধিক শর্ত আরোপ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের করমুক্ত মর্যাদা বাতিল ও সরকারি অনুদান স্থগিত করার হুমকি দেয়।
তবে হার্ভার্ড প্রশাসন দাবি করে, তারা ইহুদি-বিরোধিতার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং সরকারের এই চাপে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে গত এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়, যদিও প্রশাসন পরে বলে দেয় যে, তাদের পক্ষ থেকে পাঠানো দাবির তালিকা ছিল ‘ভুলবশত প্রেরিত’।
এপ্রিলেই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হুঁশিয়ারি দেন, প্রশাসনের রেকর্ড সংক্রান্ত অনুরোধ না মানলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট ভিসা প্রোগ্রাম’ বাতিল করে দেওয়া হবে।
এই ঘটনাপ্রবাহ এখন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নীতিমালা ও একাডেমিক স্বাধীনতা ঘিরে ক্রমবর্ধমান অচলাবস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধী কর্মকাণ্ড রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগ, ভর্তি ও শিক্ষাদান নীতিতে পরিবর্তন দাবি করে। সেই সঙ্গে হুমকি দেয়, দাবি পূরণ না হলে হার্ভার্ডের করমুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহার এবং কোটি কোটি ডলারের সরকারি অনুদান স্থগিত করা হবে।
এই বছরের শুরুতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ইহুদি-বিরোধিতার বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সরকারের এই চাহিদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।
এপ্রিলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হুঁশিয়ারি দেন, হার্ভার্ড প্রশাসন যদি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকারের বিশদ রেকর্ড অনুরোধ পূরণ না করে, তবে তাদের ছাত্র ভিসা প্রোগ্রামের অধিকার প্রত্যাহার করা হবে।
পরবর্তীতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) হার্ভার্ডকে একটি চিঠিতে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে হলে নির্দিষ্ট কিছু দাবি মেনে চলতে হবে। এই দাবির মধ্যে ছিল গত পাঁচ বছরে ভর্তি হওয়া অ-অভিবাসী শিক্ষার্থীদের সকল শৃঙ্খলাভঙ্গ সংক্রান্ত রেকর্ড, তাদের ‘অবৈধ’, ‘বিপজ্জনক’ বা ‘সহিংস’ কার্যকলাপের ইলেকট্রনিক রেকর্ড, ভিডিও ও অডিও উপাত্ত সরকারকে সরবরাহ করা। এসব শর্ত মানতে হার্ভার্ডকে মাত্র ৭২ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়।
এই ধরনের চাপ ও নজরদারির মধ্যে, ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসার সংখ্যা হ্রাসের নীতিও গ্রহণ করে, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভ্রান্তি ও আইনি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে। কিছু ক্ষেত্রে, পূর্বে ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের মতো অপরাধে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের ভিসাও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল আদালত এই নীতির বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করে, যার ফলে প্রশাসন আপাতত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আইনি মর্যাদা বাতিল করতে পারছে না।
এই প্রসঙ্গে হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক ছাত্র লিও গেরডেন বলেন,
“আমরা এখানে এসেছি সেই মূল্যবোধের জন্য যা আমেরিকা প্রতিনিধিত্ব করে—বাকস্বাধীনতা, একাডেমিক স্বাধীনতা এবং একটি চিন্তাশীল, প্রাণবন্ত কমিউনিটি। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসন এসব মৌলিক নীতিকে হুমকির মুখে ফেলছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড আর আগের সেই হার্ভার্ড থাকে না।”
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
ট্রাম্প প্রশাসন কেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?
ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছিল যে, হার্ভার্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়োগ, ভর্তি ও শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় আইনি বিধি অমান্য করছে এবং ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর ভিত্তিতে তারা হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট ভিসা প্রোগ্রাম’ স্থগিত করার দাবি জানায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কি কারণে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে?
হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ ও ‘অবৈধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং বলেছে যে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে। তাই তারা ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করে এই সিদ্ধান্ত স্থগিতের আবেদন করে।
আদালত কি কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে?
আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে, প্রশাসনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর অযথা প্রভাব ফেলছে এবং তাদের আইনি অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে। তাই আপাতত ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে পারে।
এই বিতর্কের কারণে হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কী ধরনের প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছেন?
অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন, কারণ তাদের ভিসা, পড়াশোনা ও ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের ওপর প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অচলাবস্থাও শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এই বিতর্কের পরবর্তী ধাপ কী হতে পারে?
আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আদালত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে যে, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বৈধ কিনা। একই সঙ্গে হার্ভার্ড প্রশাসন তাদের ভর্তি ও শিক্ষাদান নীতি সংশোধন করবে কিনা, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উপসংহার
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে স্থগিতাদেশ প্রাপ্তি উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব ও আইনি অধিকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই বিতর্ক শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষানীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রতিফলন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যত নিরাপদ রাখতে সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত সমাধানের প্রয়োজনীয়তা আজ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।