কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৬ জন অভিযুক্ত শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন আরবি সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক মো. জিয়াদ আলী এবং ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান শামিম।

খুলনা মেট্রোপলিটন কলেজে জাল সনদের মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে সরকারি এমপিও সুবিধা ভোগের অভিযোগ উঠেছে ১৬ জন শিক্ষক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে। তারা বছরের পর বছর ধরে নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে বেতন-ভাতা গ্রহণ করে আসছেন বলে জানা গেছে।
২০০২ সালে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার সবুজবাগ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মেট্রোপলিটন কলেজটি। ২০০৪ সালে কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৫০ জন, যার মধ্যে সাধারণ শাখায় ৩৯ জন ও বিএম শাখায় ১১ জন রয়েছেন। তবে ডিগ্রি শাখাটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি।
অভিযোগে উঠে এসেছে, আরবি সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক মো. জিয়াদ আলী এবং ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান শামিম জাল সনদে চাকরি নিয়েছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা না থাকলেও পদার্থবিজ্ঞানের প্রদর্শক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন ঠাকুর দাস মণ্ডল। কলেজে অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায় উদ্যোগ ও ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এম ডি সাইদুজ্জামান।
এছাড়া, অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়ের কার্যক্রম স্থগিত থাকা অবস্থায়ও শিক্ষক হিসেবে বহাল রয়েছেন শরিফুল আলম। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও কম্পিউটার বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন মনিরা জামান, যা নিয়োগবিধির পরিপন্থী। প্রযোজ্য প্রশিক্ষণ সনদ না থাকা সত্ত্বেও কম্পিউটার প্রদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ মইন উদ্দিন। এমনকি ছয় মাসের ডিপ্লোমা কোর্সের সনদ ছাড়াই সাচিবিকবিদ্যার ল্যাব সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শরিফুজ্জামান মোল্লা।
খুলনা মেট্রোপলিটন কলেজে জাল সনদের মাধ্যমে ১৬ জন শিক্ষক ও কর্মচারীর নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘ ২১ বছর ধরে চাকরি করে সরকার থেকে বেতন-ভাতা বাবদ আদায় করেছেন প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং হিসাব ও নিরীক্ষা দপ্তরসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ ও প্রমাণপত্র জমা দিয়েছেন কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক দাতা সদস্য এস এম মমিনুল ইসলাম। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব কাগজপত্র দাখিল করা হয়।
কলেজের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা কৌশলে বছর ধরে চাকরি করে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ ভোগ করেছেন, যা নৈতিক ও আইনগত দিক থেকে সম্পূর্ণ অনুচিত। তারা বলেন, এই অর্থ ফেরত নেওয়া উচিত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিবাকর বাওয়ালী জানান, ২০২৩ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে শিক্ষক-কর্মচারীদের সনদ ও নিয়োগপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকলেও আশা প্রকাশ করেন যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর দ্রুত এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
কী অভিযোগ উঠেছে খুলনা মেট্রোপলিটন কলেজের ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে?
অভিযোগ অনুযায়ী, ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী জাল সনদপত্রের মাধ্যমে কলেজে চাকরি গ্রহণ করে বছরের পর বছর সরকারি এমপিও সুবিধা ভোগ করেছেন। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতির মুখে পড়ে।
এই জালিয়াতির ঘটনা কতদিন ধরে চলছে?
এই অনিয়ম প্রায় ২১ বছর ধরে চলে আসছে। অভিযুক্তরা ২০০৪ সাল থেকে কলেজে চাকরি করছেন এবং এ পর্যন্ত আনুমানিক ১৩ কোটি টাকার বেশি সরকারি অর্থ বেতন-ভাতা হিসেবে নিয়েছেন।
কোন কোন বিষয়ে এই অনিয়ম বেশি লক্ষ করা গেছে?
বিশেষভাবে দেখা গেছে, অনুমোদনবিহীন বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ, অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও ভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ ছাড়াই কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ—এসব ক্ষেত্রে অনিয়ম বেশি হয়েছে।
এই বিষয়ে কে বা কারা অভিযোগ করেছেন এবং কোথায়?
কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক দাতা সদস্য এস এম মমিনুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ ও প্রমাণ জমা দিয়েছেন।
বর্তমানে এই ঘটনার তদন্ত বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো অগ্রগতি আছে কি?
২০২৩ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। কলেজের অধ্যক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
উপসংহার
খুলনা মেট্রোপলিটন কলেজে জাল সনদপত্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ এবং সরকারি অর্থ ভোগের ঘটনাটি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর এক গভীর আঘাত। এটি শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং দেশের শিক্ষা খাতের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। যথাযথ তদন্ত, অর্থ ফেরতের উদ্যোগ এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই অনিয়মের দৃষ্টান্তমূলক সমাধান না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নীতিনৈতিকতা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।




