বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতে, সরকারি বা শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মবিদ্বেষী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতে, সরকারি বা শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মবিদ্বেষী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সংগঠনটির কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স সেলের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আইনী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ধর্ম, মহান আল্লাহ এবং রাসূল (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রকাশ করে চলেছে। এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশেষত পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটির একজন সদস্যের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রকাশিত আপত্তিকর মন্তব্য দেশের সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে এবং ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। সংগঠনটির মতে, এই ধরনের কার্যক্রম মুক্তচিন্তা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না; বরং এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং অবমাননাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে, সরকারি বা শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মবিদ্বেষী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে শহীদদের আত্মত্যাগ রয়েছে। এই আন্দোলনের মূল প্রেরণা ছিল ন্যায়বিচার ও সাম্যের চেতনা, যা ইসলাম ধর্মের মৌলিক শিক্ষা। তাই সংগঠনটি আশা করে, সরকার জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান জানাবে এবং ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এছাড়া, বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধে আঘাত হানার যে কোনো অপচেষ্টা কখনোই সহ্য করা হবে না। জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে উপেক্ষা করা হলে তা জাতীয় স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে, যা কারোই কাম্য নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানিয়েছে, তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে যে, অনতিবিলম্বে এ ধরনের কটূক্তি ও অবমাননাকর কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি, দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাস রক্ষায় সরকার সম্পূর্ণভাবে সচেষ্ট থাকবে।
কেন শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মবিদ্বেষীদের স্থান দেওয়া উচিত নয়?
শিক্ষাক্ষেত্র হল ন্যায়, সাম্য ও সহনশীলতার শিক্ষার কেন্দ্র। ধর্মবিদ্বেষী মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ধর্মবিদ্বেষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ধর্মবিদ্বেষ বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবজ্ঞাসূচক, কটূক্তিমূলক বা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ও কর্মকাণ্ড। এটি ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে।
শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মবিদ্বেষের উপস্থিতি কীভাবে প্রভাব ফেলে?
এটি শিক্ষার পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং সুস্থ ও সহনশীল চিন্তাচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়া, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করতে পারে, যা সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
এ ধরনের ধর্মবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
সরকারি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের উচিত ধর্মবিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা, শিক্ষাক্রমে নৈতিক ও সহনশীলতার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সরকার কীভাবে ধর্মবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে?
সরকার শিক্ষা নীতিতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে পারে, শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারে এবং ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্য বা কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। এছাড়া, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রচারণা ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনাও গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মবিদ্বেষীদের স্থান দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি শিক্ষার মৌলিক নীতিমালা—সহনশীলতা, ন্যায়বিচার ও সাম্যের পরিপন্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই একটি শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে সব ধর্ম ও মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে।
ধর্মবিদ্বেষী মনোভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত কঠোর আইন প্রয়োগ, নৈতিক শিক্ষা প্রসার এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রেখে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।




