২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিতদের চাকরি ফেরত দিতে নির্দেশ

২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিতদের চাকরি ফেরত দিতে নির্দেশ

এ বিষয়ে আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রায় প্রদান করেন।

২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১,১৩৭ জন প্রার্থীর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ নির্দেশ প্রদান করেন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ, হাইকোর্টের প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণাকারী রায় বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় প্রদান করেন।

জানা গেছে, এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২৭তম বিসিএসে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১,১৩৭ জন প্রার্থী চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পর তাদের চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। পরবর্তীতে, ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করেন।

প্রথম রায়ের বিরুদ্ধে নিয়োগবঞ্চিত ২৫ জন প্রার্থী আপিল বিভাগে দুটি লিভ টু আপিল করেন। অন্যদিকে, দ্বিতীয় রায়ের বিরুদ্ধে সরকার তিনটি লিভ টু আপিল দাখিল করে। এ বিষয়ে ২০৫ জন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণসহ সরকারের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন, যেখানে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়াকে সঠিক বলে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের ভিত্তিতে লিভ টু আপিল মঞ্জুর করা হয়। নিয়োগবঞ্চিত ১,১৩৭ জন প্রার্থীর পক্ষে পৃথক আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় প্রদান করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩,৫৬৭ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। তবে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ২০০৭ সালের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, পিএসসি ২০০৭ সালের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে এবং একই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে ৩,২২৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে, এই উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদান করা হয়।

কেন নিয়োগবঞ্চিতদের চাকরি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?

নিয়োগবঞ্চিত ১,১৩৭ জন প্রার্থীর পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানির পর আদালত তাদের চাকরি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার বৈধতার প্রশ্নে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর এই রায় প্রদান করা হয়েছে।

কখন প্রথম ও দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়?

প্রথম মৌখিক পরীক্ষা ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের কারণ কী ছিল?

তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা পিএসসি একই বছরের ১ জুলাই কার্যকর করে।

হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায় কী ছিল?

২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্ট প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করে। তবে, ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে, ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা বৈধ বলে চূড়ান্ত রায় দেন।

এখনকার রায়ের পরবর্তী প্রক্রিয়া কী?

উত্তর: আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে পিএসসি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়োগবঞ্চিত ১,১৩৭ জন প্রার্থীর চাকরিতে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করবে।

উপসংহার

২৭তম বিসিএসের নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আইনি জটিলতার অবসান ঘটিয়ে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় প্রদান করেছেন। এই রায়ের মাধ্যমে ১,১৩৭ জন প্রার্থীর চাকরি ফেরত পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি আইনি বিজয় নয়, বরং ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে এই রায় বাস্তবায়ন করলে নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবেন এবং দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে যোগ দিতে সক্ষম হবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top