কমিটির সুপারিশ অনুসারে, কর্মজীবনের সূচনায় ‘শিক্ষক’ পদে নিয়োগের পর পরবর্তী পদোন্নতি হিসেবে ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রদান এবং উচ্চতর বেতন কাঠামো নির্ধারণের বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে।

প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটি দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান কাঠামোয় পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে। কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে এন্ট্রি লেভেলে ‘শিক্ষক’ পদ সংরক্ষণ করা হবে এবং এই পদে কর্মরতদের জন্য ১২তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হবে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ৯ সদস্যবিশিষ্ট পরামর্শক কমিটি তাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
কমিটির সুপারিশ অনুসারে, কর্মজীবনের সূচনায় ‘শিক্ষক’ পদে নিয়োগ পাওয়ার পর পরবর্তী পদোন্নতি হিসেবে ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রদান এবং উচ্চতর বেতন কাঠামো নির্ধারণের বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পরামর্শক কমিটির উত্থাপিত প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা এই সুপারিশের সঙ্গে একমত নন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ-এর সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পরামর্শক কমিটির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) গত ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের দাবি বাস্তবায়নের দায়িত্ব তারা নিজের কাঁধে নিয়েছেন। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য “মার্চ ফর ডিগনিটি” কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, পরামর্শক কমিটির প্রস্তাবনায় সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ১০ম গ্রেড অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণেই তারা এই সংস্কার প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করছেন। ভবিষ্যতে আলোচনা সাপেক্ষে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন কমিটির সুপারিশসমূহ বিশ্লেষণ করা হবে এবং শিক্ষকদের বেতন ও পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা যদি এসব সুপারিশের সঙ্গে একমত হন, তবে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে, কারণ কর্মরত শিক্ষকদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা কেন বেতন বাড়ানোর সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন?
সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ১০ম গ্রেডে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন। তবে, পরামর্শক কমিটির প্রস্তাবনায় এই দাবি উপেক্ষা করে ১২তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। তাই তারা এই সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কোন সংগঠন এই সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে?
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ এই সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে।
শিক্ষক নেতারা কী বলেছেন?
শিক্ষক নেতা মু. মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আশ্বাস দিয়েছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়টি তাদের দায়িত্বে রয়েছে। ফলে শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচি “মার্চ ফর ডিগনিটি” আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, শিক্ষকদের বেতন ও পদোন্নতির বিষয়ে প্রস্তাব বিশ্লেষণ করা হবে। শিক্ষকদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা একমত হলে সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?
সহকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আলোচনা করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তারা চান, ১০ম গ্রেডে বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিটি পূরণ হোক এবং পরামর্শক কমিটির প্রস্তাবনা সংশোধন করা হোক।
উপসংহার
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা পরামর্শক কমিটির বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ এতে তাদের ১০ম গ্রেডের দাবিটি উপেক্ষা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা আন্দোলনের পরও ১২তম গ্রেডের সুপারিশ তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
অন্যদিকে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং সুপারিশ পর্যালোচনার কথা বলেছেন। ফলে, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে আলোচনা ও আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের পথ নির্ধারণ করবেন।
অতএব, শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিক সমাধান এবং প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা প্রয়োজন। এতে শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণ হবে এবং দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাও আরও সুসংগঠিত হবে।




