৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের

৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের

“দাবি পূরণের বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হলে, শিক্ষার্থীরা সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।”

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা ১৩ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিয়েছেন। দাবিগুলো মেনে নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হলে শিক্ষার্থীরা সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ইউজিসি কার্যালয়ে স্মারকলিপিটি জমা দেন ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা।

১৩ দফা দাবির অংশ হিসেবে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা জুলাই আন্দোলনে আহত ও নিহতদের স্মরণে দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের অন্যতম দাবি হলো—শহীদ ইরফান ভূঁইয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি এবং একাডেমিক ভবনের পঞ্চম তলার ৫০৬ নম্বর কক্ষটি তাঁর নামে নামকরণ করা।

শুধু তাই নয়, আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীর স্মরণে ক্যাম্পাসে একটি স্থায়ী ‘মেমোরিয়াল কর্নার’ স্থাপন করার প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা। সেখানে ছবি ও ভিডিও আকারে আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, “এটি গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।”

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তাদের ঐক্য, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মূল ফটকের বাইরে একটি ম্যুরাল স্থাপন করা প্রয়োজন, যা এই আন্দোলনের তাৎপর্যকে দৃশ্যমান করে তুলবে।

কোটা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি মওকুফসহ প্রশাসনিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনকেন্দ্রিক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তারা চলতি ট্রাইমেস্টারে টিউশন ফি ৩৫% থেকে ৫০% পর্যন্ত মওকুফের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে পুলিশি হেফাজতে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা ও প্রশাসনিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দাবি করা হয়েছে।

শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানের ওপরও জোর দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা চান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের সক্ষমতার ভিত্তিতে বিভাগ অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চালু করা হোক।

মিড টার্ম পরীক্ষার পর শিক্ষক পরিবর্তন বন্ধের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, কোর্স চলাকালীন কোনো শিক্ষককে অপসারণ বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই সেমিস্টার শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। একই সঙ্গে সেকশন সিলেকশন ও রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রতিটি কোর্সে শিক্ষক নির্ধারিত থাকতে হবে এবং পরে ফ্যাকাল্টি পরিবর্তন করা যাবে না। বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে ফ্যাকাল্টি পরিবর্তন হলে, শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ রিফান্ডের ভিত্তিতে কোর্স ড্রপ দিতে পারবে।

এছাড়াও, কোনো কোর্সের একটি শাখায় যদি প্রফেসর লেভেলের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে ওই কোর্সের অন্যান্য শাখাতেও সমমানের শিক্ষক নিশ্চিত করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নপ্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

শিক্ষার্থীরা কেন আন্দোলনে নেমেছেন?

ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, আর্থিক চাপ, এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাবের প্রতিবাদে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। এই দাবিগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তারা ইউজিসিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো কী?

দাবির মধ্যে রয়েছে—শহীদ ইরফান ভূঁইয়ার নামে কক্ষ ও লাইব্রেরির নামকরণ, টিউশন ফি মওকুফ, ‘Office of Student Affairs’ গঠন, শিক্ষক পরিবর্তনের নীতিমালা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ক্যাম্পাস, প্রকল্পের ফান্ডিং বৃদ্ধি, অ্যালামনাই ভোটাধিকার, এবং অর্থনৈতিক শর্ত শিথিলকরণ।

শিক্ষার্থীরা কত সময় দিয়েছেন দাবি পূরণের জন্য?

তারা ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না মিললে, তারা সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

তারা কী ধরনের কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন?

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সময়মতো দাবি পূরণ না হলে তারা ক্লাস, পরীক্ষা, রেজিস্ট্রেশনসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন এবং আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া এসেছে কি?

এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

উপসংহার

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের ১৩ দফা দাবি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা, প্রশাসন, আর্থিক ভারসাম্য এবং স্বচ্ছতা নিয়ে চলমান বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কেবল স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয়, বরং কাঠামোগত ও নীতিগত পরিবর্তনের দাবিও তুলেছেন, যা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের আন্দোলন যদি প্রশাসনের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছায়, তবে এটি হতে পারে একটি প্রগতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাপরিবেশ গঠনের মাইলফলক। এখন দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের—সন্তোষজনক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান নিশ্চিত করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top