১০ প্রকল্পে ৪৬ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে অন্তর্বর্তী সরকার

১০ প্রকল্পে ৪৬ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে অন্তর্বর্তী সরকার

“সরকার কী করছে?”—এই প্রশ্নটি প্রায়ই শোনা যায়। আমরা বিভিন্ন সময়ে এর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি, তবে অনেকেই তা গ্রহণ করেন না। আজ মনে হলো একটি নির্দিষ্ট উদাহরণ ও তথ্যসহ বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পুনঃমূল্যায়ন করে দেখতে পায়, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই অযৌক্তিকভাবে ব্যয় অনুমান (এস্টিমেট) করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে ব্যয় অনাবশ্যকভাবে বেশি ধরা হয়েছিল। সরকার এসব প্রকল্পে খরচ যৌক্তিক মাত্রায় কমিয়ে এনেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় পুনঃমূল্যায়ন করে ব্যাপক ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নেয়। এই প্রক্রিয়ার আওতায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে মোট ৪৬,৩০৮.০৪ কোটি টাকার ব্যয় হ্রাস করা হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এ তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি লিখেন, “সরকার কী করছে?”—এই প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে। আমরা ব্যাখ্যা দিই, তবুও অনেকেই তা মানতে চান না। আজ মনে হলো একটি নির্দিষ্ট উদাহরণ ও তথ্য সবার সামনে তুলে ধরা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনঃমূল্যায়ন করে দেখতে পায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অযৌক্তিকভাবে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল। এসব প্রকল্পে সরকার ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমিয়ে এনেছে।

বিভাগভিত্তিক ব্যয় সংকোচনের বিবরণ নিম্নরূপ:

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ: ১০,৮৫৪.৩২ কোটি টাকা

সেতু বিভাগ: ৭,৫৩৭ কোটি টাকা

রেলপথ মন্ত্রণালয়: ৮,০৩৬.৯০ কোটি টাকা

বিদ্যুৎ বিভাগ: ৭,৪৫৪.৩১ কোটি টাকা

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ: ১২,৪২৫.৫১ কোটি টাকা

এই পদক্ষেপ সরকারের খরচ নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়পত্র খতিয়ে দেখে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রকল্পে অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যয় অনুমান (প্রাক্কলন) করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পগুলোর পুনঃমূল্যায়নের মাধ্যমে পাঁচটি প্রধান খাতে ৪৬ হাজার ৩০৮.০৪ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন বা সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি লেখেন:

“এই টাকাটা মূলত লুটপাটের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। সরকার জনগণের এই অর্থ রক্ষা করেছে। এই সাশ্রিত অর্থ দিয়েই জ্বালানি খাতের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেই বকেয়ার পরিমাণ এখন শূন্যে।”

ব্যয় সংকোচনের খাতভিত্তিক চিত্র:
১. সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ:
সাশ্রিত মোট ব্যয়: ১০,৮৫৪.৩২ কোটি টাকা

ভূঞাপুর-তারাকান্দি মহাসড়ক উন্নয়ন: ৫৪.১৪ কোটি টাকা

বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প: ১৫৭৬.৫০ কোটি টাকা

আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন উন্নয়ন: ৬৫৪ কোটি টাকা

ওয়েস্টার্ন ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প: ৬১৫.৪৭ কোটি টাকা

ময়মনসিংহ মহাসড়ক উন্নয়ন: ৪৫.৫৩ কোটি টাকা

ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ মহাসড়কসমূহ উন্নয়ন: ২৪০.৪৫ কোটি টাকা

এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন: ২১ কোটি টাকা

হবিগঞ্জ অংশের চারটি প্যাকেজ বাতিল: ৪৪২.৭৭ কোটি টাকা

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ডেভেলপমেন্ট (লাইন-৫, সাউদার্ন রুট): ৬৮৭২.৪৬ কোটি টাকা

মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রো রেল স্টেশন মেরামত: ৩৩২ কোটি টাকা

২. সেতু বিভাগ:
সাশ্রিত ব্যয়: ৭,৫৩৭ কোটি টাকা

৩. রেলপথ মন্ত্রণালয়:
সাশ্রিত ব্যয়: ৮,০৩৬.৯০ কোটি টাকা

৪. বিদ্যুৎ বিভাগ:
সাশ্রিত ব্যয়: ৭,৪৫৪.৩১ কোটি টাকা

৫. জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ:
সাশ্রিত ব্যয়: ১২,৪২৫.৫১ কোটি টাকা

সরকারি প্রকল্পে ৪৬,৩০৮ কোটি টাকার ব্যয় সংকোচন: দুর্নীতি রোধে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর নজরদারি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ের প্রতিটি খাত পুনঃমূল্যায়ন করে প্রকল্পভিত্তিক অযৌক্তিক ব্যয় কাটছাঁট শুরু করে। ফলস্বরূপ, পাঁচটি বড় খাতে মোট ৪৬,৩০৮.০৪ কোটি টাকা ব্যয় সংকোচন বা সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, এই অর্থ জনগণের, এবং এই ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে একটি বড় ধরনের অপচয় ও লুটপাট প্রতিরোধ করা গেছে।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফেসবুকে লেখেন:

“এই টাকাটা লুটপাটের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। সরকার জনগণের এ টাকাটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ টাকা দিয়ে জ্বালানি খাতে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে।”

বিভাগভিত্তিক ব্যয় সংকোচনের বিবরণ:
১. সেতু বিভাগ
মোট সাশ্রয়: ৭,৫৩৭ কোটি টাকা

পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় হ্রাস: ১,৮৩৫ কোটি টাকা

মিঠামইন উপজেলায় উড়াল সড়ক প্রকল্প: ৫,৫০০ কোটি টাকা

কর্ণফুলী টানেল রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি পুনর্বিবেচনা: ১২৭ কোটি টাকা

পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি পুনর্বিবেচনা: ৭৫ কোটি টাকা

২. রেলপথ মন্ত্রণালয়
মোট সাশ্রয়: ৮,০৩৬.৯০ কোটি টাকা

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (২য় সংশোধিত): ৬২১.৮৯ কোটি টাকা

দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইন (২য় সংশোধিত): ৬,৬৯৮.৫০ কোটি টাকা

আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন: ৫১৮.০৯ কোটি টাকা

রোলিং স্টক সংগ্রহ প্রকল্প: ৩৯.১২ কোটি টাকা

আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ (বাংলাদেশ অংশ): ১৫৯.২৮ কোটি টাকা

৩. বিদ্যুৎ বিভাগ
মোট সাশ্রয়: ৭,৪৫৪.৩১ কোটি টাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিকল্পিত ১০% ব্যয় হ্রাস: ১,৫০০ কোটি টাকা

জ্বালানি আমদানির সার্ভিস চার্জ ৯% → ৫% কমিয়ে: ৪৭০ কোটি টাকা

আমদানিকৃত তরল জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে শিপমেন্ট ব্যয় হ্রাস: ৩৫৪ কোটি টাকা

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ট্যারিফ হ্রাসের ফলে: ২,৫০০ কোটি টাকা

সরকারি কোম্পানির ট্যারিফ হ্রাস: ২,৬৩০.৩১ কোটি টাকা

৪. জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ
মোট সাশ্রয়: ১২,৪২৫.৫১ কোটি টাকা

এলএনজি ক্রয়ে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে ১৭টি কার্গো আমদানি: ১২৬.৭৬ কোটি টাকা

বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি (১৮টি কূপ): ২,১৯০ কোটি টাকা

পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে কার্যকর দরপত্র নেগোসিয়েশন: ৯,৮১৪ কোটি টাকা

গ্যাস বিতরণ প্রকল্প (রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ): ৫৬.২৫ কোটি টাকা

প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন (কেজিডিসিএল): ৩৩.৫৩ কোটি টাকা

চট্টগ্রামে মেঘনা ভবন নির্মাণ (১৯ তলা): ৫৮.৬৮ কোটি টাকা

বগুড়া-সৈয়দপুর গ্যাস পাইপলাইন: ১১৭.৭২ কোটি টাকা

ফৌজদারহাট-মীরসরাই পাইপলাইন: ১৮.৮৩ কোটি টাকা

ইআরএল ট্যাংক ফার্মে ফ্লো মিটার প্রকল্প: ৯.৭৪ কোটি টাকা

৫. সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ
মোট সাশ্রয়: ১০,৮৫৪.৩২ কোটি টাকা

ভূঞাপুর-তারাকান্দি মহাসড়ক: ৫৪.১৪ কোটি টাকা

সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প: ১,৫৭৬.৫০ কোটি টাকা

আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন: ৬৫৪ কোটি টাকা

ওয়েস্টার্ন ব্রিজ উন্নয়ন: ৬১৫.৪৭ কোটি টাকা

ময়মনসিংহ মহাসড়ক: ৪৫.৫৩ কোটি টাকা

ডোমার-জলঢাকা মহাসড়কসমূহ উন্নয়ন: ২৪০.৪৫ কোটি টাকা

এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র: ২১ কোটি টাকা

হবিগঞ্জ অংশের ৪টি প্রকল্প বাতিল: ৪৪২.৭৭ কোটি টাকা

মেট্রো লাইন-৫ (সাউদার্ন রুট): ৬৮৭২.৪৬ কোটি টাকা

মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন মেরামত: ৩৩২ কোটি টাকা

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

উদাহরণ হিসেবে কোন প্রকল্পগুলোর ব্যয় কমানো হয়েছে?

  • কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকল্প যেখানে বড় অঙ্কে ব্যয় সংকোচন হয়েছে:
  • মিঠামইন উড়াল সড়ক: ৫,৫০০ কোটি টাকা
  • ঢাকা মেট্রোরেল (লাইন-৫): ৬,৮৭২.৪৬ কোটি টাকা
  • পদ্মা সেতু নির্মাণ: ১,৮৩৫ কোটি টাকা
  • কর্ণফুলী টানেল রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি: ১২৭ কোটি টাকা
  • দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইন: ৬,৬৯৮.৫০ কোটি টাকা
  • বিদ্যুৎ কেন্দ্র ট্যারিফ হ্রাস: ২,৫০০ কোটি টাকা
  • পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে দরপত্রে সাশ্রয়: ৯,৮১৪ কোটি টাকা

এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে?

এই পদক্ষেপ সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পথে বড় অগ্রগতি। ভবিষ্যতে এই ধরনের নিয়মিত মূল্যায়ন ও ব্যয় সংকোচন অব্যাহত থাকলে জাতীয় অর্থনীতি আরও বেশি টেকসই ও দায়িত্বশীল হবে।

উপসংহার

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় যে কার্যকর ব্যয় সংকোচন বাস্তবায়ন করেছে, তা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রকল্পভিত্তিক বিশ্লেষণ করে যে ৪৬,৩০৮ কোটি টাকার মতো বিশাল অঙ্কের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে, তা দেখায়—দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছ প্রশাসন এবং জবাবদিহিতা থাকলে উন্নয়ন খাতে টেকসই ও কার্যকর অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

এই সাশ্রিত অর্থের ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই জ্বালানি খাতের বকেয়া পরিশোধ, খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় দেখা গেছে। ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি রোল মডেল হয়ে থাকবে—কীভাবে একটি সরকার জনগণের অর্থ সুরক্ষা করে উন্নয়নের সঠিক পথে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top