“এই প্রেক্ষাপটে, চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের শিক্ষাসচিব ক্রিস্টিন চোই শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।'”

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপটে হংকং ঘোষণা করেছে যে, তারা আরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
হংকং থেকে এএফপি জানিয়েছে, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মর্যাদাপূর্ণ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মধ্যকার দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এর ফলে বিপাকে পড়েছেন হাজারো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজস্ব আয়ে। তবে এক মার্কিন বিচারকের রায়ে হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষেধাজ্ঞা আপাতত স্থগিত রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, শুক্রবার হংকংয়ের শিক্ষাসচিব ক্রিস্টিন চোই ঘোষণা দেন, “বিশ্বের প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।”
বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও জানিয়েছে, “শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-যাত্রা যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে উদ্দেশ্যে আমরা শর্তহীন ভর্তি প্রস্তাব, সহজতর ভর্তি প্রক্রিয়া এবং একাডেমিক সহায়তা চালু করেছি।”
‘ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট’-এর সাম্প্রতিক র্যাঙ্কিং অনুসারে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। অপরদিকে, হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (HKUST) অবস্থান করছে ১০৫তম স্থানে।
অনলাইন শিক্ষাসেবা ও সহায়তা চালু থাকলেও, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপমূলক নজরদারির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “হার্ভার্ড উগ্র উদারপন্থা এবং ইহুদি-বিরোধিতার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।”
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এ প্রসঙ্গে বলেন, হার্ভার্ডকে “সহিংসতায় উসকানি, ইহুদি-বিরোধিতা এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার” অভিযোগে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
এই পরিস্থিতিকে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বেইজিং কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, ‘এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১,৩০০ চীনা শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লক্ষাধিক চীনা শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। তাদের দৃষ্টিতে এসব প্রতিষ্ঠান একাডেমিক উৎকর্ষ, গবেষণায় নেতৃত্ব এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার অন্যতম প্রধান প্রতীক।
শিক্ষা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খবর সবার আগে জানতে সাবস্ক্রাইব করুন দৈনিক আমাদের বার্তা’র ইউটিউব চ্যানেল। নতুন ভিডিও মিস করতে না চাইলে এখনই চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল আইকনে ক্লিক করুন। বেল আইকন সক্রিয় করলে, আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে আমাদের প্রতিটি নতুন ভিডিওর নোটিফিকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যাবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
🇺🇸 হাভার্ডে নিষেধাজ্ঞা: মার্কিন প্রশাসনের পদক্ষেপ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে প্রায় ৬,৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। হাভার্ড প্রশাসন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে, দাবি করে যে এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে। যদিও একটি ফেডারেল বিচারক সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছেন, তবে শিক্ষার্থীরা এখনও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন ।
হংকংয়ের প্রতিক্রিয়া: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ
হংকং সরকার হাভার্ডের প্রভাবিত শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (HKUST) তাদেরকে “অবশ্যই” ভর্তি ও সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। হংকংয়ের শিক্ষা সচিব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিভা আকর্ষণের জন্য ভর্তি শর্ত শিথিল করতে উৎসাহিত করেছেন ।
হংকংয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নীতি
হংকং সরকার ২০২৪/২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি কোটা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে, যা হংকংয়ের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ শিক্ষার্থী বৃদ্ধি করবে । এছাড়াও, ২০২৪ সালের নভেম্বরে, হংকং সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম কাজের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে, যা তাদের কর্মসংস্থান সুযোগ বাড়িয়েছে ।
উপসংহার
হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা একটি বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্ষেত্রে। এই সিদ্ধান্ত বহু শিক্ষার্থীকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিয়েছে, যারা উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে চেয়েছিল। তবে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে হংকং এক বিকল্প আশ্রয়স্থল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন HKUST—বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে, সহজ শর্তে ভর্তি এবং সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। পাশাপাশি, দেশটির সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিভা আকর্ষণের জন্য নীতিমালায় নমনীয়তা এনেছে, কোটা দ্বিগুণ করা এবং পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ বাড়ানোর মতো উদ্যোগ নিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, হংকং শুধু একাডেমিক বিকল্প নয়—বরং একটি কৌশলগত গন্তব্য হয়ে উঠছে, যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা একদিকে উচ্চমানের শিক্ষা, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ উপভোগ করতে পারবে। সুতরাং, হাভার্ডে নিষেধাজ্ঞা এক দিক দিয়ে হংকং-এর জন্য সম্ভাবনার নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানচিত্রে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে পারে।




