সরকার বেসরকারি স্কুল ও কলেজের বেতন/টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য সব ফি নির্ধারণ করেছে। এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে চারটি ক্যাটাগরিতে:
মাধ্যমিক (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
মাধ্যমিক (নন-এমপিও)
কলেজ (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
কলেজ (নন-এমপিও)
মহানগরের স্কুলের বেতন ও টিউশন ফি নির্ধারণের দায়িত্ব থাকবে মহানগর কমিটির ওপর, আর জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলার স্কুলের ফি নির্ধারণ করবে জেলা কমিটি। নির্ধারিত বেতন তালিকা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন: মফস্বলের স্কুল-কলেজে যে হারে বেতন ও বার্ষিক ফি
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি নীতিমালা ২০২৪ অনুযায়ী, বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখা গত রোববার রাতে এই নীতিমালা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। তবে, নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী গত ২৭ অক্টোবর পরিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখ থেকে এটি কার্যকর হবে। ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে:
১. মহানগর
২. জেলা সদর, পৌরসভা ও উপজেলা সদর
৩. মফস্বল
এই বিভাজন অনুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বেতন এবং অন্যান্য ফি নির্ধারণ করতে হবে, যাতে একটি সুষম ও সুসংগঠিত ফি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মহানগর (সিটি করপোরেশন এলাকা) এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেতন/টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য ২৩টি খাতে এক শিক্ষার্থী থেকে বছরে সর্বমোট ২ হাজার ৪৬৫ টাকা আদায় করা যাবে। এই ফি গুলি বিভিন্ন খাতে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হলো:
অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা: প্রতি পত্রে ৪০ টাকা
টিফিন: মাসে ১৫০ টাকা
মুদ্রণ: বছরে ২০০ টাকা
ম্যাগাজিন: ৭৫ টাকা
ক্রীড়া: ১৫০ টাকা
সাংস্কৃতিক উৎসব: ৭৫ টাকা
জাতীয় দিবস উদ্যাপন: ৭৫ টাকা
ক্লাব গঠন: ২৫ টাকা
লাইব্রেরি: ২০ টাকা
কল্যাণ/দরিদ্র তহবিল: ২৫ টাকা
আইসিটি: ২৪০ টাকা (মাসে ২০ টাকা)
বাগান: ৬০ টাকা
ল্যাবরেটরি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে): ৪০ টাকা
কমনরুম: ৩০ টাকা
পরিচয়পত্র: ৫০ টাকা
নবীনবরণ-বিদায় সংবর্ধনা: ৫০ টাকা
চিকিৎসা: ১০ টাকা
বিবিধ: ৫০ টাকা
উন্নয়ন: ১০০০ টাকা
বিদ্যুৎ: ৩০ টাকা
শিক্ষা সফর: ৫০ টাকা
সাঁতার প্রশিক্ষণ ফি: ১০ টাকা
এই ফিগুলোর মধ্যে কিছু খাতে মাসিক এবং কিছু খাতে বার্ষিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীর সার্বিক ব্যয় বাড়াবে। তবে, এই ফি গুলি বেতন/টিউশন ফি ছাড়াই আদায় করা হবে, অর্থাৎ বেতন আলাদা এবং এগুলি অতিরিক্ত খরচ হিসেবে ধরা হবে।
আরো পড়ুন: পৌর এলাকার স্কুল-কলেজে যে হারে বেতন ও বার্ষিক ফি
জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের এমপিওভুক্ত স্কুলে কয়েকটি ক্ষেত্রে ফি কিছুটা কমেছে। এসব এলাকার একজন শিক্ষার্থীকে বেতন ছাড়া অন্যান্য খাতের জন্য বছরে সর্বমোট ১ হাজার ৮৫০ টাকা দিতে হবে। মফস্বলের স্কুলে এই খরচ হবে ১ হাজার ৪০৫ টাকা।
মহানগর এলাকার নন-এমপিও স্কুলের ক্ষেত্রে বেতন ছাড়া অন্যান্য খাতের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে বছরে ৪ হাজার ২৫ টাকা দিতে হবে। জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের নন-এমপিও স্কুলে এই খরচ ২ হাজার ৭০৫ টাকা। মফস্বলের নন-এমপিও স্কুলের ক্ষেত্রে এটি ১ হাজার ৮৬০ টাকা হবে।
মহানগর এলাকার এমপিওভুক্ত কলেজে বেতন/টিউশন ফি ছাড়া ২৬টি খাতে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে মোট ৩ হাজার ৬৬০ টাকা আদায় করা যাবে। জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের এমপিওভুক্ত কলেজে এটি ২ হাজার ৫৭৫ টাকা হবে, আর মফস্বলের এমপিওভুক্ত কলেজে এই খরচ হবে ১ হাজার ৬৪৫ টাকা।
এখানে ফি কাঠামো অনুযায়ী, মহানগর এবং জেলা সদর এলাকায় কিছুটা বেশি খরচ নির্ধারণ করা হলেও, মফস্বল এলাকার স্কুল ও কলেজগুলোর ফি তুলনামূলকভাবে কম রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন: মহানগরীর স্কুল-কলেজে যে হারে বেতন ও বার্ষিক ফি
মহানগরের নন-এমপিও কলেজে বেতন ছাড়া ২৬টি খাতে প্রতি শিক্ষার্থীকে বছরে ৪ হাজার ৩৩০ টাকা আদায় করা যাবে। জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের নন-এমপিও কলেজের ক্ষেত্রে এই খরচ হবে ২ হাজার ৯৯৫ টাকা, এবং মফস্বলের নন-এমপিও কলেজে এটি ১ হাজার ৯৯০ টাকা।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, টিউশন ফি নির্ধারণের দায়িত্ব মহানগর ও জেলা কমিটির ওপর থাকবে। মহানগর কমিটিতে ১০ সদস্য থাকবেন, যার সভাপতি হবেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি/সার্বিক) এবং সদস্যসচিব হবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপপরিচালক। জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলা সদর এলাকার কমিটিতে সদস্য সংখ্যা হবে ৭, এবং সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক এবং সদস্যসচিব হিসেবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।
নীতিমালায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রতিবছর অক্টোবরের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রতিনিধিদের নির্বাচন করবেন এবং কমিটির সভাপতিকে অবহিত করবেন। এর পর, প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মাসিক বেতন নির্ধারণ করতে হবে।
এছাড়া, বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম রয়েছে: সমস্ত আদায়কৃত অর্থ অবশ্যই তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট হিসাবে রাখতে হবে। এবং, এসব অর্থ অবশ্যই খাতভিত্তিক খরচ করতে হবে, অর্থাৎ এক খাতের জন্য আদায়কৃত অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা যাবে না।
সরকার কেন স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া অন্য সব ফি নির্ধারণ করেছে?
সরকারের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো, বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক অর্থের বোঝা কমানো। বেতন ছাড়া অন্যান্য ফি নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় পরিচালনার জন্য বাধ্য করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।
এফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে?
সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে:
মাধ্যমিক (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
মাধ্যমিক (নন-এমপিও)
কলেজ (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
কলেজ (নন-এমপিও)
প্রতিটি শ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে ভিন্ন ভিন্ন এলাকার প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত ফি কাঠামো নিশ্চিত করা যায়।
মহানগর এলাকায় স্কুল ও কলেজে কত টাকা ফি আদায় করা যাবে?
মহানগর (সিটি করপোরেশন) এলাকার এমপিওভুক্ত স্কুলে বেতন ছাড়া মোট ২ হাজার ৪৬৫ টাকা এবং নন-এমপিও স্কুলে ৪ হাজার ২৫ টাকা আদায় করা যাবে। এমপিওভুক্ত কলেজে, বেতন ছাড়া ৩ হাজার ৬৬০ টাকা এবং নন-এমপিও কলেজে ৪ হাজার ৩৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফি আদায়ের জন্য কোন কমিটি দায়িত্বে থাকবে?
মহানগর এবং জেলা কমিটি নির্ধারণ করবে বেতন ও অন্যান্য ফি। মহানগরের কমিটিতে ১০ সদস্য থাকবেন, যার মধ্যে সভাপতি হবেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা), এবং জেলা কমিটিতে ৭ সদস্য থাকবে, যার সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক। কমিটি প্রতি বছর ফি কাঠামো পর্যালোচনা এবং নির্ধারণ করবে।
ফি আদায়ের অর্থ কোথায় রাখা হবে এবং কীভাবে ব্যবহার হবে?
আদায়কৃত সব অর্থ তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট হিসাবে রাখতে হবে। এই অর্থ অবশ্যই খাতভিত্তিক খরচ করতে হবে; অর্থাৎ, যে খাতে ফি সংগ্রহ করা হয়েছে, তা ওই খাতেই ব্যবহার করতে হবে। এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা যাবে না, যা খরচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
উপসংহার
সরকারের নতুন নীতিমালা বেসরকারি স্কুল ও কলেজের বেতন এবং অন্যান্য ফি কাঠামো নির্ধারণের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা ও সুষম ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েছে। এই নীতিমালার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমানোর পাশাপাশি, ফি আদায়ের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ নিশ্চিত করা হবে। মহানগর, জেলা সদর, পৌর এলাকা এবং মফস্বলের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা ফি কাঠামো প্রবর্তন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এছাড়া, ফি সংগ্রহ এবং খরচের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলী ও কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। এটি শিক্ষাব্যবস্থায় পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে এবং ছাত্রদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে, এই নীতিমালা বাস্তবায়নে নজরদারি ও স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া জরুরি, যাতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় করতে না পারে।




