সরকার ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘সুরক্ষা’ স্কিমে এখন থেকে পেনশন গ্রহীতারা ইচ্ছানুযায়ী বাড়তি চাঁদা জমা দিতে পারবেন।

সরকার ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘সুরক্ষা’ স্কিমে এখন থেকে পেনশন গ্রহীতারা বাড়তি চাঁদা জমা দিতে পারবেন। এতদিন এই স্কিমে মাসিক চাঁদার হার ছিল ৫ হাজার টাকা, তবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
এই স্কিম মূলত রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে ও তাঁতির মতো স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য প্রবর্তিত। তবে নিম্ন আয়ের পাশাপাশি এখন অনেক উচ্চ আয়ের পেশাজীবীও এর আওতায় আসছেন। তাঁদের আকৃষ্ট করতেই চাঁদার সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের তৃতীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আলোচ্য বিষয় উপস্থাপন করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন খান। সভায় অর্থ বিভাগের সচিবসহ পর্ষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও জানানো হয়, এখন থেকে আউটসোর্সিং সেবাকর্মীরাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। অর্থ বিভাগের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালার আওতায় এসব কর্মীরা ‘প্রগতি’ স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। বর্তমানে প্রগতি স্কিমের সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদা এক হাজার টাকা হলেও আউটসোর্সিং কর্মীদের সুবিধার্থে এই হার কমিয়ে পাঁচশ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সক্ষমতা অনুযায়ী তাঁরা চাইলে আরও বেশি চাঁদা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে পুরো অর্থ কর্মীর পক্ষ থেকেই জমা দিতে হবে, প্রতিষ্ঠান কোনো অংশে সহায়তা দেবে না।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক সংস্করণ চালুর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোত্তম চর্চা (বেস্ট প্র্যাকটিস) পর্যালোচনা করে একটি ধারণাপত্র (কনসেপ্ট পেপার) প্রস্তুত করার পর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিমা সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও ধারণাপত্র তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সভায় ২০২৪–২৫ অর্থবছরের মুনাফা ঘোষণা করা হয়। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার চাঁদাদাতা পেনশন স্কিমে প্রায় ১৮৮ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে অর্জিত মুনাফার পরিমাণ ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

টি সাধারণ প্রশ্নোত্তর
সর্বজনীন পেনশনের নতুন সিদ্ধান্ত কী?
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে ‘সুরক্ষা’ স্কিমে পেনশন গ্রহীতারা বাড়তি চাঁদা জমা দিতে পারবেন। আগের সর্বোচ্চ চাঁদা ছিল ৫ হাজার টাকা, যা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
কারা এই ‘সুরক্ষা’ স্কিমের আওতায় আসবেন?
রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে ও তাঁতির মতো স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এই স্কিমের আওতায় আসবেন। পাশাপাশি উচ্চ আয়ের পেশাজীবীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।
আউটসোর্সিং সেবাকর্মীরা কি স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন?
হ্যাঁ, আউটসোর্সিং সেবাকর্মীদের জন্যও ‘প্রগতি’ স্কিমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের জন্য সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
ইসলামিক সংস্করণ চালুর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে?
সভায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক সংস্করণ চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক বেস্ট প্র্যাকটিস অনুসারে একটি ধারণাপত্র তৈরি করে পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরে পেনশন স্কিমের মুনাফা কত হয়েছে?
২০২৪–২৫ অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মুনাফা হয়েছে ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ মুনাফার হার নির্দেশ করে।
উপসংহার
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো—চাঁদার সীমা বৃদ্ধি, আউটসোর্সিং কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি, ইসলামিক সংস্করণ ও বিমা সুবিধা চালুর উদ্যোগ—সবই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করার ইতিবাচক পদক্ষেপ। এতে স্বকর্মে নিয়োজিত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের পাশাপাশি উচ্চ আয়ের পেশাজীবীরাও দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সুরক্ষার আওতায় আসবেন।




