সরকারি বই বিক্রি: ধরা পড়ে শিক্ষক বললেন, ‘আমাদের ভুল হয়েছে’

সরকারি বই বিক্রি: ধরা পড়ে শিক্ষক বললেন, ‘আমাদের ভুল হয়েছে’

বুধবার রাতে স্কুলের সামনে একটি গাড়ি ও কয়েকজন ব্যক্তিকে অবস্থান করতে দেখা যায়, যা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় স্থানীয় কয়েকজনকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে ফেরিওয়ালাদের কাছে সরকারি পাঠ্যবই পাওয়া গেলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানান, বইগুলো সহকারী শিক্ষক মো. কাশেমের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্যবই ফেরিওয়ালার কাছে কেজি দরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ ও সহকারী শিক্ষক কাশেমের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার (২৫ জুন) রাতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে বিদ্যালয়ের সামনে একটি গাড়ি ও কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখা গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা আশপাশের কয়েকজনকে খবর দেন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফেরিওয়ালাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত সরকারি পাঠ্যবই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফেরিওয়ালারা জানান, তারা বইগুলো সহকারী শিক্ষক কাশেমের কাছ থেকে কিনেছেন।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ ও সহকারী শিক্ষক কাশেমের বিরুদ্ধে সরকারি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ফেরিওয়ালার কাছে কেজি দরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার (২৫ জুন) রাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, রাতের বেলায় বিদ্যালয়ের সামনে একটি গাড়ি ও কয়েকজন অচেনা ব্যক্তিকে দেখে সন্দেহ হলে আশপাশের কয়েকজনকে ডেকে আনা হয়। পরে ফেরিওয়ালাদের কাছে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সরকারি বই দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফেরিওয়ালারা জানান, তারা বইগুলো কিনেছেন সহকারী শিক্ষক কাশেমের কাছ থেকে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, “সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিয়ে থাকেন। অথচ প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বই এনে তা বিক্রি করেছেন। আমরা এই অনৈতিক ও অসৎ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা দাবি করছি।”

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক কাশেম গণমাধ্যমকে জানান, “প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদের নির্দেশেই বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ বই বিক্রির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এটি আমাদের একটি ভুল হয়েছে। আমি দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।”

ঘটনার বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, “সরকারি বই বিক্রি করা একটি গুরুতর অপরাধ। আমরা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে শোকজ করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

কোথায় এবং কখন ঘটেছে ঘটনাটি?

ঘটনাটি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে। সময় ছিল বুধবার, ২৫ জুন, রাতে।

কারা জড়িত ছিলেন এই ঘটনায়?

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ এবং সহকারী শিক্ষক কাশেম সরকারি বিনামূল্যের বই ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কীভাবে ঘটনাটি ধরা পড়ে?

স্থানীয়রা রাতে বিদ্যালয়ের সামনে গাড়ি ও কিছু লোক দেখে সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরে তারা গিয়ে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে সরকারি বই উদ্ধার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

অভিযুক্ত শিক্ষকরা কী বলেছেন?

সহকারী শিক্ষক কাশেম জানান, বই বিক্রি করা হয়েছে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে। প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এটি আমাদের ভুল হয়েছে, আমি ক্ষমা প্রার্থী।”

প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে শোকজ করেছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

উপসংহার

সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে বরাদ্দ করা হলেও, ইন্দুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিক্রির এই ঘটনা একটি বড় ধরনের অনিয়ম ও নৈতিক বিচ্যুতির দৃষ্টান্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমন কার্যকলাপ শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, এটি শিক্ষার মৌলিক নীতির বিরুদ্ধেও। স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগ বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক নজরদারি ও জবাবদিহিতা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে সচেতন অভিভাবক ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top