অর্থ পাচার, খুন, ঘুষ ও দুর্নীতির মতো বিভিন্ন অপরাধে বিচারাধীন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই জুলহাজ মান্নান সম্পর্কে অনেকেরই জানা আছে। জুলহাজ মান্নান ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের প্রথম সমকামীদের পত্রিকা “রূপবান” এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৬ সালে ঢাকার কলাবাগানে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
এই হত্যার পর মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট জানিয়েছিল, “জুলহাজ মান্নানের উপর এই বর্বর আক্রমণে আমরা ক্ষুব্ধ। তিনি আমাদের দূতাবাস পরিবারের একজন প্রিয় সদস্য এবং এলজিবিটিদের অধিকার আদায়ের সাহসী অধিবক্তা ছিলেন।”

সমকামিদের প্রতি উৎসাহিত করার অভিযোগ রয়েছে ইউনাইটেড ন্যাশন্স হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)-এর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের কান্ট্রি অফিস খোলার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ, যা ঢাকার ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তার জন্য বিশাল প্যাকেজ অফার করা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, তামিল বিদ্রোহের ছুতোয় শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকারের কান্ট্রি অফিস খোলার প্রস্তাব ছিল জাতিসংঘের, কিন্তু কলম্বো সেই চাপ মেনে নেয়নি। শ্রীলঙ্কার ব্যর্থতার পর ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে অফিস খোলার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সেখানেও সফলতা মেলেনি। তাই এবার টার্গেট বাংলাদেশ।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের ঢাকা সফর, যেখানে ওএইচসিএইচআর’র ঢাকা অফিস খোলার বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হবে।
প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সব উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবেন ভলকার তুর্ক। তিনি গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য গঠিত ১০টি কমিশনের প্রধান এবং গুম কমিশনের সকল সদস্যের সঙ্গে একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকে অংশ নেবেন।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গেও মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে তার। জেনেভাস্থ অফিস অব দ্য ইউএন হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) এর আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার তুর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেবেন।
যেখানে তিনি সাম্প্রতিক ছাত্র-আন্দোলনে যুক্ত প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, সেখানে ভলকার তুর্ক ঢাকায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সফরের সমাপনীতে একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন, যা উন্মুক্ত নয়; কেবলমাত্র প্রবেশাধিকার পাওয়া মিডিয়ার প্রতিনিধিরাই এতে অংশ নিতে পারবেন।
১৯৯৩ সালে জেনেভায় অফিস অব দ্য ইউনাইটেড ন্যাশন্স হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে ওএইচসিএইচআর কান্ট্রি অফিস খুলতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংককসহ কিছু স্থানে তাদের সীমিত স্কেলে রিজিওনাল অফিস রয়েছে। কান্ট্রি অফিস রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, গুয়েতেমালা, গায়েনা, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া এবং ইয়েমেন অন্তর্ভুক্ত।
দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওএইচসিএইচআর-এর প্রস্তাবটি আত্মঘাতী হতে পারে। এটি গ্রহণ করলে এবং অফিস খোলার চুক্তি স্বাক্ষর করলে বাংলাদেশের ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রথমত, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই ওএইচসিএইচআর-এর অফিস খোলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে ৩৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর থেকে স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। ওএইচসিএইচআর-এর প্রস্তাব এসেছে ৫ই আগস্টের এক মাসের মাথায়, যা বিভিন্ন দিক থেকে চাপের মধ্যে রয়েছে। তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে জাতিগত কোনো সংঘাত হয়নি যে, এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খুলতে হবে। সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে সাধারণত ওএইচসিএইচআর-এর অফিস স্থাপন করা হয়।
এছাড়া, এই অফিসের বিরুদ্ধে সমকামিতার মতো সংবেদনশীল বিষয় প্রমোট করার অভিযোগ রয়েছে, যা সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। যদি সরকার অফিস খুলে এই বিষয়টি প্রচারের সুযোগ দেয়, তাহলে দেশের ধর্মভীরু জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারে। ফলে, নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টির আশঙ্কাকে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ কেন ঢাকায় মানবাধিকার অফিস খোলার পরিকল্পনা করছে?
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও উন্নত করার জন্য অফিস খোলার প্রস্তাব দিয়েছে।
এই অফিস খোলার বিরুদ্ধে কি ধরনের উদ্বেগ রয়েছে?
কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে যে, অফিস খোলার ফলে সমকামিতার মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো প্রচারের সুযোগ পেতে পারে, যা দেশের ধর্মভীরু জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করবে।
কী ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলতে পারে এই অফিস?
অফিস খোলার ফলে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর।
অফিস খোলার ফলে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে কি পরিবর্তন আসতে পারে?
কিছু কর্মকর্তার মতে, অফিস খোলার ফলে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে বৃহত্তর রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হতে হতে পারে।
বাংলাদেশের সরকার এই প্রস্তাব সম্পর্কে কী বলছে?
সরকার প্রস্তাবটি আত্মঘাতী হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছে যে, এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য একটি জটিল ও উদ্বেগজনক বিষয়। কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, এই অফিসের মাধ্যমে সমকামিতার মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো প্রচারের সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা দেশের ধর্মভীরু জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করবে। তাছাড়া, এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্যও বিপদের কারণ হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে, সরকার এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে সঠিক সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে মানবাধিকার উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি।