১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে অকৃতকার্য প্রার্থীরা সনদ প্রদানের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয় ঘেরাও করেছেন।

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলে অকৃতকার্য প্রার্থীরা সনদ প্রদানের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার (২৯ জুন) সকালে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডের বোরাক টাওয়ারে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন তারা। ফলাফলে ‘চরম বৈষম্য’ হয়েছে দাবি করে তারা দ্রুত ফলাফল সংশোধনের দাবি জানান।
প্রার্থীদের বক্তব্য, এনটিআরসিএ যে প্রশ্ন কাঠামো ও মানবণ্টনের কথা জানিয়েছিল, তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিখিত পরীক্ষায় বিকল্প প্রশ্নহীন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপরও তারা উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ভাইভা বোর্ডে অধিকাংশেরই ১২ নম্বর প্রাপ্তি ছিল। এসব প্রেক্ষিতে তারা মানবিক বিবেচনায় অন্তত পাস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি জানান।
তাদের হুঁশিয়ারি, ফলাফল সংশোধন না হলে বহু মেধাবী ও পরিশ্রমী তরুণ শিক্ষকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং এনটিআরসিএ ও শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হবে।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলে অনুত্তীর্ণ প্রার্থীরা নিচের দাবিগুলো উত্থাপন করেছেন:
ভাইভা নম্বরে পাসের শর্ত পূরণ: এনটিআরসিএর প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী ভাইভা পরীক্ষায় পাসের জন্য মোট নম্বরের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ প্রাপ্তি আবশ্যক। আন্দোলনকারী প্রার্থীদের দাবি, যাদের ভাইভা ও প্রশ্নোত্তর মিলিয়ে এই ৪০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর রয়েছে, তাদের সবাইকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে ই-সনদ প্রদান: যেহেতু শিক্ষক নিবন্ধনের ই-সনদ কেবলমাত্র লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রদান করা হয়ে থাকে, এবং ভাইভা অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছেন—তাই সবাইকে ই-সনদ প্রদান করার দাবি জানানো হয়েছে।
প্রশ্নপত্রে অনিয়মের অভিযোগ: প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, এনটিআরসিএ নির্ধারিত ‘প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন’ অনুসরণ না করে বিকল্প ও প্রশ্নবিহীন কাঠামোয় লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। তা সত্ত্বেও তারা সফলভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, এবং অধিকাংশ প্রার্থী ভাইভাতে ১২ নম্বর পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় তাদের পাস করানো উচিত।
৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে অংশগ্রহণের সুযোগ: আন্দোলনরত প্রার্থীদের দাবি, ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে একটি সম্মিলিত মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সকল প্রার্থীকে নিয়োগ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
অনুত্তীর্ণ প্রার্থীরা কেন এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন?
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলে ‘ফেল’ করা প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন যে, মূল্যায়নে বৈষম্য ও প্রশ্নপত্রে অনিয়ম হয়েছে। তারা দাবি করছেন, অনেকেই লিখিত পরীক্ষায় ৪০% বা তার বেশি নম্বর পেয়ে ভাইভা দিয়েও উত্তীর্ণ হননি। তাই সনদের দাবিতে তারা এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
তাদের মূল দাবি কী?
তাদের প্রধান দাবি হলো:
যাদের লিখিত ও ভাইভা মিলিয়ে পাসের যোগ্যতা রয়েছে, তাদের সবাইকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হোক।
লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে সকল উত্তীর্ণ প্রার্থীকে ই-সনদ প্রদান করা হোক।
৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক।
ভাইভা পরীক্ষায় পাসের ন্যূনতম মানদণ্ড কী?
এনটিআরসিএর বিধিমালা অনুযায়ী, ভাইভায় মোট নম্বরের কমপক্ষে ৪০% পেলে পাস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা। অনেক আন্দোলনকারী দাবি করছেন, তাদের ভাইভা নম্বরপত্রে ১২ (৩০-এর মধ্যে), অর্থাৎ ৪০% রয়েছে, তবুও তারা চূড়ান্তভাবে ফেল করেছেন।
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে তাদের অভিযোগ কী?
প্রার্থীরা বলছেন, লিখিত পরীক্ষায় পূর্বনির্ধারিত প্রশ্ন কাঠামো এবং মানবণ্টনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিকল্প প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেখানে অনেক প্রশ্ন ছিল প্রশ্নবিহীন বা কাঠামোবিচ্যুত। এ ধরনের অনিয়ম সত্ত্বেও তারা লিখিত অংশে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা যদি উত্তীর্ণ না হন, তাহলে কী পরিণতি হতে পারে?
আন্দোলনরত প্রার্থীদের মতে, চূড়ান্ত ফলাফল সংশোধন না হলে বহু মেধাবী ও পরিশ্রমী তরুণ শিক্ষকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এছাড়া, এনটিআরসিএ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতি শিক্ষার্থী ও সমাজের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে।
উপসংহার
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে অসন্তুষ্ট একদল অনুত্তীর্ণ প্রার্থী সনদ প্রদানের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছেন। তারা মনে করেন, প্রক্রিয়াগত অনিয়ম, মানবণ্টনের ব্যত্যয় এবং মূল্যায়নে বৈষম্য তাদের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে মানবিক ও ন্যায্য ভিত্তিতে ফল পুনর্বিবেচনা করে তাদের পাস হিসেবে বিবেচনায় এনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে সমাধান না হলে শিক্ষকতার প্রতি তরুণদের আগ্রহ ও বিশ্বাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।