সামিয়ার চাচা মাহমুদুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, সামিয়ার শরীরে আগুন লাগার পর শিক্ষকেরা তাৎক্ষণিকভাবে পানি দেননি বা আগুন নেভানোর কোনো চেষ্টা করেননি।

চাঁদপুরের কচুয়ায় তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে সামিয়া রহমান (৫) নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যালয়ের আট শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, প্রধান শিক্ষক মাসুক হাসানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের তালিকা:
সাহিদা আক্তার
ফারুক হোসেন
জসিম উদ্দিন
রোকেয়া আক্তার
সুমি আক্তার
কাজী শাকিরীন
ফয়েজুন নেছা
ফাতেমা আক্তার
গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সামিয়া রহমানের দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় জানা যায়, এক পর্যায়ে আগুন তার পরনের কাপড়ে লেগে যায়, যার ফলে তার শরীরের অন্তত ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়।
তার চাচা মাহমুদুল হাসান অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকেরা সামিয়ার শরীরে আগুন লাগার পরপরই দ্রুত ব্যবস্থা না নিয়ে পানি দেননি বা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেননি। বরং তারা কাপড় কাটার জন্য কাঁচি আনতে গিয়েছিলেন, যার ফলে সামিয়া আরও বেশি দগ্ধ হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তার বড় বোন লামিয়ার মাধ্যমে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবারের সদস্যরা সামিয়াকে প্রথমে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়, যেখানে ২৬ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, এটি একটি দুর্ঘটনা, কিন্তু এতে শিক্ষকদের অবহেলা ছিল।’’ তিনি আরও জানান, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আট শিক্ষককে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, সুমন মজুমদার নামে এক কর্মচারীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ‘‘তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা এবং আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কীভাবে সামিয়া আগুনে দগ্ধ হলো?
সামিয়া রহমানের শরীরে আগুন তার পরনের কাপড়ে লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়। শিক্ষকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে কাপড় কাটার জন্য কাঁচি আনতে যান, যার কারণে সামিয়া আরও বেশি দগ্ধ হয়।
কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে?
এ ঘটনায় ৮ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হয়েছে, এবং এক কর্মচারীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি কীভাবে এই ঘটনার তদন্ত করছে?
পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও, শিক্ষকদের অবহেলা পাওয়া গেছে, যার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসার জন্য সামিয়াকে কোথায় পাঠানো হয়েছিল?
সামিয়াকে প্রথমে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠন এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপসংহার
চাঁদপুরের কচুয়ায় সামিয়া রহমান নামের এক শিশুর আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা ছিল। এই দুর্ঘটনায় ৮ শিক্ষক সাময়িকভাবে বরখাস্ত এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি প্রস্তাব করা হয়েছে, যা তাদের দায়িত্বে অবহেলার স্বীকৃতি। যদিও এটি একটি দুর্ঘটনা, তবে শিক্ষকদের অবহেলা ও দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া সামিয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী।
এ ঘটনার পর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, এবং তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরও সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।