শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, “সরকারের খামখেয়ালিপনা আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং এর জন্য আপনারাই (সরকার) দায়ী।”

শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্দোলনরত তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হামিদ বলেন, “উপদেষ্টার আজকের বক্তব্য সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা ও আগের ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে।”
এর আগে, পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “তিতুমীর কলেজকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।”
একইসঙ্গে তিনি আরও জানান, ৭ কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্য’ আজ এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। সংগঠনটির ফেসবুক পেজে আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলা হয়েছে—
“এখন মানে এখনই ব্যারিকেড। সবাই তাহবান্দে আসুন।”
“দাবি আদায়ের এক পথ, রাজপথ রাজপথ।”
“সবাই আমতলী মুভ করুন, সড়ক ও রেল অবরোধ হবে।”
“কাল নয়, আজই ব্যারিকেড হবে। এখন মানে এখনই, সবাই দ্রুত চলে আসুন।”
এদিকে, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, “সরকারের খামখেয়ালিপনা আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করছে। আমাদের আন্দোলনের ফলে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তার জন্য দায়ী আপনারাই (সরকার)।”
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। দাবি আদায়ে তারা মিছিল, সড়ক ও রেল অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান এবং ক্লাস বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়। তবে, আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে গত ২৯ জানুয়ারি (বুধবার) বিকেলে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন এবং তাদের ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন—
তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবি:
তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম চালু করতে হবে।
শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় তাদের আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে অন্তত দুটি নতুন বিষয়—‘আইন’ ও ‘জার্নালিজম’ সংযোজন করতে হবে।
একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাগার নির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে?
উত্তর: তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, প্রশাসন গঠন এবং অন্যান্য সুবিধার দাবি জানিয়েছে।
আন্দোলনকারীরা কী ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে?
উত্তর: মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান এবং ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কী বলেছেন?
উত্তর: তিনি বলেছেন, “তিতুমীর কলেজকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই,” এবং ৭ কলেজ নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
.আন্দোলনকারীদের বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, “সরকারের খামখেয়ালিপনা আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে,” এবং তারা দাবি আদায়ে আরও কঠোর আন্দোলন করবে।
শিক্ষার্থীরা কী ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেবে?
উত্তর: শিক্ষার্থীরা ‘ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং রাজপথ অবরোধসহ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
উপসংহার
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তারা আন্দোলনকে আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে, এবং শিক্ষার্থীরা বলেছে যে তারা সরকারের খামখেয়ালিপনা ও অবহেলার জন্য জনগণের দুর্ভোগের দায় নিতে প্রস্তুত। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এবং তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে।




