বিদায়ী ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে মার্চ মাসের শেষে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামানকে জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। ৩১ মার্চ তার বাসায় অবৈধ সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির কারখানা পাওয়া যায়। এছাড়া, দৈনিক কালের কণ্ঠের শিক্ষা রিপোর্টার শরীফুল আলম সুমন ৮ লাখ টাকা, দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষা সাংবাদিক নিজামুল হক ৬ লাখ টাকা এবং দৈনিক সমকালের শিক্ষা সাংবাদিক সাব্বির নেওয়াজ ৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ ছিলো এক অস্থির ও বিপর্যস্ত বছর। সার্বিকভাবে, এ বছরটি বাংলাদেশের শিক্ষাখাতের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল, যেখানে নানা ধরনের সংকট এবং ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থাকে অস্থির করেছে। নতুন শিক্ষাক্রমের নামে সরকারের ভুল পদক্ষেপ এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরবর্তী গণঅভ্যুত্থান, যা সরকারের পতন ঘটায়, এই বছরটির বড় ঘটনা ছিল।
এ বছরের প্রথম দিকে, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার, এরপর পাঠ্যবই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। তবে বই ছাপা নিয়ে আবারও অস্থিরতা তৈরি হয় এবং দুই দফায় ৮০ হাজার মানহীন বই জব্দ করা হয়।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশজুড়ে শিক্ষকরা হেনস্তা ও লাঞ্ছনার শিকার হন। এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে অটোপাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেন, এছাড়া ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের শিক্ষকরা গণধোলাই দেন।
এছাড়া, পেনশন ইস্যু, তাপপ্রবাহ, বন্যার কারণে শিক্ষাসূচির ব্যাঘাত, এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত হওয়া, এবং বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মতো বড় ঘটনা ছিলো আলোচনায়। তবে, বছরের শেষ দিকে এসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব বিপর্যয়ের অনেকটা সমাধান করতে সক্ষম হয়, যেমন বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসার বদলি নীতিমালা জারি এবং এমপিও শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেয়ার ব্যবস্থা।
এই সমস্ত ঘটনা ও সমস্যা নিয়ে ২০২৪ সালের শিক্ষাখাতের অবস্থা বিশ্লেষণ করলে, একটি পরিপূর্ণ সালতামামি প্রাপ্ত হয় যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সরকারের কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে।
বিদায়ী বছরে বাংলাদেশে শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক অস্থিরতা ও আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। আগের বছর যখন শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের আপত্তি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখন তা ছিল একটি বিতর্কিত উদ্যোগ। বিদায়ী বছরে, এ উদ্যোগের ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায় এবং নবম শ্রেণির বিভাগ বিভাজন বাতিল করে একমুখী শিক্ষার ধারণা গ্রহণ করা হয়। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং সে কারণে এটি বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তবর্তী সরকার।
এই নতুন সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে, ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ভিত্তি করে পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জন করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা নতুন পরিমার্জিত বই হাতে পাবেন। তাছাড়া, ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য পরিমার্জিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে আবারও নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এছাড়া, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে সর্বশেষ পাঠ্যবই পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতি ও জুলাই বিপ্লব সম্পর্কিত বিভিন্ন রচনা যুক্ত করার মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক পরিমার্জন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ২০২২ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য অনুমোদন করা হবে। পাশাপাশি, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য যুগোপযোগী শিক্ষাক্রমের আলোকে শিখন সামগ্রী প্রণয়নের লক্ষ্যে দ্রুত ‘শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন কমিটি’ গঠন এবং একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
শিক্ষাক্রমের এমন পরিবর্তনে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা প্রশাসন এখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছে।
পরবর্তীতে ১ এপ্রিল শামসুজ্জামানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকেও পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়ার পর সেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর কিছু দিন পর, শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি অবৈধ সনদ বাণিজ্যের খবর চাপা দিতে ঘুষ নেয়া সাংবাদিকদের নাম প্রকাশ করেন। তিনি জানান, দৈনিক কালের কণ্ঠের শিক্ষা রিপোর্টার শরীফুল আলম সুমন ৮ লাখ, দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষা সাংবাদিক নিজামুল হক ৬ লাখ এবং দৈনিক সমকালের শিক্ষা সাংবাদিক সাব্বির নেওয়াজ ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
এছাড়া, বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ডিবিসির মাহমুদ সোহেল ৪.৫ লাখ, এশিয়ান টিভির জাকির হোসেন পাটোয়ারি ২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। অন্যান্য সাংবাদিকদের মধ্যে হাসমত ২ লাখ টাকা এবং রুবেল নামে এক সাংবাদিক বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন বলে শামসুজ্জামান স্বীকার করেছেন।
এছাড়া, আবু জাফর সূর্য নামে এক সাংবাদিক নেতা ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দাবি করে শামসুজ্জামান তার জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানান, এসব সাংবাদিক রিপোর্ট প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। টাকা দেয়ার পরও রিপোর্ট হতো না এবং তারা অন্য সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করতেন।
পরে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে এসব সাংবাদিকদের শামসুজ্জামানের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানানো হয়, কিন্তু নাম আসা কোনো সাংবাদিকই শামসুজ্জামানের সঙ্গে মুখোমুখি হতে রাজি হননি।
সম্প্রতি জানা গেছে যে, শামসুজ্জামান জামিন পেয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী, যারা সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই আন্দোলনই পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। তাদের এক দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালান।
এরপর দেশের সংকটময় সময়ে, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের হাল ধরেন এবং তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নাহিদ ইসলাম এবং সজীব ভূঁইয়া। নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, আর সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পরে, সরকার পতন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মো. মাহফুজ আলমও উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন।
বিদায়ী ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল পুনরায় প্রকাশ এবং ফলাফলে ত্রুটি সংশোধনের দাবিতে গত অক্টোবরে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। ২৩ অক্টোবর বুধবার, দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে তারা সচিবালয়ে প্রবেশ করেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে শ্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা “আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই”, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “মুগ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই”, “তুমি কে আমি কে ছাত্র-ছাত্র”, “আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম” ইত্যাদি শ্লোগান দেন।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন, কিন্তু তারা সরে না যাওয়ায় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে এবং লাঠিপেটাও করা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের তাড়া খেয়ে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান, আর কিছু শিক্ষার্থী সচিবালয়ের ভেতরে আটকা পড়েন। তাদের আটক করে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তুলে নেয়। সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৫৩ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। পরে, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং বাকীদের নামে মামলা দায়ের করে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিম্নমানের কাগজে ছাপানোয় ৮০ হাজার পাঠ্যবই বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে, ১০ ডিসেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ফরাজী প্রেস অ্যান্ড পাবলিকসন্সের মাধ্যমে ছাপানো প্রায় ৩০ হাজার কপি প্রাথমিকের পাঠ্যবই এনসিটিবির মনিটরিং টিম হাতেনাতে ধরে বাতিল করে। কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর না মানা এবং উজ্জ্বলতা কম হওয়ায় ফরাজী প্রেসকে শোকজ করা হয়।
এছাড়াও, নোয়াখালীর চৌমুহনীতে দুটি প্রেসে প্রাথমিকের পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজে ছাপানোর ঘটনা এনসিটিবির কর্মকর্তারা ধরেন। এসব প্রেসে ছাপানো প্রায় ৫০ হাজার পাঠ্যবই বাতিল করা হয়। দুটি প্রেসের মালিক একই ব্যক্তি, যিনি গত কয়েক বছর ধরে নিম্নমানের কাগজে বই ছেপেছেন। তবে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম এবং সাবেক সচিব মোসা. নাজমা বেগমের নাম জড়ানো একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেট ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন পানি জাহাঙ্গীর, চাঁদপুর পুরান বাজার কলেজের রতন মজুমদারের সহায়তায় বিষয়টি ম্যানেজ করে আসছে।
অবশেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে দেওয়া শুরু হয়েছে। গত ৩ অক্টোবর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে নয়টি অঞ্চলের নয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ইএফটি মাধ্যমে পাঠানো হয়। পাইলট প্রকল্প সফল হওয়ার পর, ১ জানুয়ারি থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ইএফটি মাধ্যমে বেতন দেওয়া শুরু হবে। আগামীকাল এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষায় এমন অস্থিরতা ও বিপর্যয় কখনো দেখেনি বাংলাদেশ?
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের বিদায়ী বছরে বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে অস্থিরতা ও বিপর্যয়ের যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, নানা সমস্যা, আন্দোলন এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে পড়েছিল। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও আন্দোলন নিম্নে আলোচনা করা হলো:
নতুন শিক্ষাক্রমের বিশৃঙ্খলা:
২০২৪ সালে সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম প্রবর্তনের ফলে ব্যাপক বিতর্ক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিক্ষাবিদদের আপত্তি উপেক্ষা করে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রাথমিক পাঠ্যবইয়ের মানহীনতা:
কুমিল্লা এবং নোয়াখালীর দুটি প্রেসে প্রাথমিক পাঠ্যবই নিম্নমানের কাগজে ছাপানো হয়, যা ব্যাপকভাবে বাতিল করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে এবং সরকারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন:
কোটা সংস্কার আন্দোলন, যা পরে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়, শিক্ষা খাতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।
এমপিও শিক্ষকদের বেতন ইএফটি মাধ্যমে প্রদান:
শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সঠিকভাবে প্রদান না হওয়ায় আন্দোলন হয়, তবে ২০২৪ সালের শেষে তাদের জন্য ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে বেতন প্রদান শুরু হয়, যা একটি স্বস্তির খবর হলেও তা শিক্ষাব্যবস্থার মূল সমস্যার সমাধান করেনি।
অভিযোগ ও দুর্নীতি:
শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে, যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য জাল সার্টিফিকেট বিক্রি, এবং কিছু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ। এসব ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থার অস্থিরতার মাত্রা আরও বৃদ্ধি করে।
এই বছরটি শিক্ষাখাতের জন্য সত্যিই এক অস্থির সময় ছিল, যেখানে সরকার, শিক্ষাবিদ, ছাত্ররা, এবং শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল।
উপসংহার
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন অস্থিরতা এবং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, যা আগের কোনো বছরে দেখা যায়নি। নতুন শিক্ষাক্রমের বিতর্ক, মানহীন পাঠ্যবইয়ের সঙ্কট, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ইস্যু, এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সব মিলিয়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারের পদক্ষেপের পরও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এবং শিক্ষাখাতের মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধান পেতে সময় লাগবে। তবে বছরের শেষের দিকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, শিক্ষাব্যবস্থা তার পূর্ণস্বাস্থ্য ফিরে পেতে আরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। আগামী বছরগুলোতে এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন।




