১৭তম ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিতদের দাবি দ্রুত মেনে না নিলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

১৭তম ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিতদের দাবি দ্রুত মেনে না নিলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েও সুপারিশবঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা এ হুঁশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতি ও এনটিআরসিএর দাপ্তরিক জটিলতার কারণে এক বছরের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হতে প্রায় চার বছর সময় লাগে। ফলে ১৭তম নিবন্ধনধারী ৭৩৯ জনের বয়সসীমা শেষ হয়ে যায়। যদিও এনটিআরসিএ প্রদত্ত সনদের মেয়াদ তিন বছর, তবু বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে তারা একবারের জন্যও আবেদন করার সুযোগ পাননি।
একইভাবে, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়াতেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। ২০২৩ সালের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে ২০২৫ সালের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পর্যন্ত দুই বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়, যার ফলে অনেক প্রার্থীর বয়সসীমা শেষ হয়ে যায়।
বলা হয়, এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে আইন মন্ত্রণালয় স্পষ্ট মতামত দিয়েছে যে, আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে সনদের মেয়াদ তিন বছর থাকলে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শুধুমাত্র ১৭তম ব্যাচের প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছরের মধ্যে এনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু আইনগত মতামতের এই নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এনটিআরসিএ অযথা বয়সসংক্রান্ত জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে আমাদের ৫ম গণবিজ্ঞপ্তির মতো ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতেও আবেদনের সুযোগ দেয়নি।
চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন, এনটিআরসিএর একটি দুঃখজনক দৃষ্টান্ত হলো, মেধাবীদের যাচাই-বাছাইয়ের পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যোগ্য প্রার্থীকে সুপারিশ না করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে পুনরায় কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করা। ১ম থেকে ১৬তম নিবন্ধনের মধ্যে প্রকাশিত নয়টি বিশেষ ও সাধারণ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে বয়স ৩৫ বছরের ঊর্ধ্ব প্রার্থীরাও আবেদন করার সুযোগ পেয়েছেন। এনটিআরসিএর গত ২২ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো রূপরেখাতেও এ তথ্য উল্লেখ রয়েছে। তবুও ১৭তম ও ১৮তম নিবন্ধনধারীদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ১৭তম ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা কবে এই অন্যায় ও হয়রানি থেকে মুক্তি পাব?”
তারা ঘোষণা দেন, আগামী ১২ নভেম্বর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
কেন এনটিআরসিএ শাটডাউন:
বাংলাদেশ গেজেট অনুযায়ী এক বছরে একটি পরীক্ষা ও একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ২০২০ সালের পরীক্ষা শেষ হতে চার বছর লেগেছে।
করোনাকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৩৯ মাসের বয়স ছাড়ের সুবিধা অন্য ব্যাচগুলো পেয়েছে, কিন্তু ১৭তম ও ১৮তম ব্যাচকে এনটিআরসিএ বয়স জটিলতার অজুহাতে বঞ্চিত করেছে।
এমপিও নীতিমালায় সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর হলেও কোন তারিখ থেকে বয়স নির্ধারণ করা হবে, সে বিষয়ে এনটিআরসিএর কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। অতীতে বিভিন্ন ব্যাচকে ‘ব্যাকডেট’ দিয়ে বয়সসীমার সুবিধা দেওয়া হলেও এবার বৈষম্য করা হয়েছে।
সম্প্রতি ১৮তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের পক্ষে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন—সনদের মেয়াদ তিন বছর হতে হবে। কিন্তু সেই রায়ের নির্দেশনা থাকলেও ১৭তম ও ১৮তম প্রার্থীদের একবারও আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
১৭তম ব্যাচের কোনো মামলা বিচারাধীন না থাকা সত্ত্বেও এনটিআরসিএ অন্য ব্যাচের মামলার অজুহাতে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতেও আবেদন করার সুযোগ দেয়নি।
অতীতে জাতীয় প্রেসক্লাব ও সচিবালয়ের সামনে একাধিকবার মানববন্ধন, অনশন ও স্মারকলিপি জমা দেওয়া হলেও কেবল আশ্বাসই পাওয়া গেছে। এমনকি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

শিক্ষক নিয়োগে বঞ্চিতদের
নটিআরসিএ শাটডাউন কর্মসূচির কারণ কী?
১৭তম ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ না পাওয়ায় প্রার্থীরা এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
কখন এই শাটডাউন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে?
আগামী ১২ নভেম্বর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীদের মূল দাবি কী?
তাদের দাবি—বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা পরিবর্তনের আগেই বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একবার আবেদন করার সুযোগ দেওয়া।
প্রার্থীরা এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তুলেছেন?
তারা অভিযোগ করেছেন, এনটিআরসিএ বয়সসীমা ও দাপ্তরিক জটিলতার অজুহাতে মেধাবী প্রার্থীদের বঞ্চিত করছে এবং নতুন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অযৌক্তিকভাবে রাজস্ব আদায় করছে।
আদালতের রায়ে কী বলা হয়েছিল?
আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষক নিবন্ধনের সনদের মেয়াদ তিন বছর। কিন্তু সেই মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও ১৭তম ও ১৮তম ব্যাচকে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
উপসংহার
১৭তম ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে প্রার্থীরা। তারা মনে করেন, আইনগত মতামত ও আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও এনটিআরসিএ অযথা জটিলতা সৃষ্টি করছে। তাই তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে ১২ নভেম্বর এনটিআরসিএ কার্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করে আন্দোলন আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।




