বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন। অবশিষ্ট সাড়ে ৭ শতাংশ আগামী অর্থবছর থেকে কার্যকর হবে।
চিঠিতে বেশ কিছু শর্তও উল্লেখ করা হয়েছে—
পরবর্তী বেতন কাঠামো প্রণয়নের সময় এই অতিরিক্ত সুবিধাটি সমন্বয় করতে হবে।
(খ) এমপিওভুক্ত ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’, এবং ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস্য ডিপ্লোমা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’—সহ সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন, আদেশ, পরিপত্র ও নীতিমালা অনুসরণপূর্বক নিয়োগের শর্তাবলি মানতে হবে।
বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো বকেয়া প্রদান করা হবে না।
ভাতা প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট সকল আর্থিক বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
এ সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে, বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ সেই অনিয়মের দায়ভার বহন করবেন।
প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা জি.ও-এর চারটি অনুলিপি অর্থ বিভাগে পৃষ্ঠাংকনের জন্য পাঠাতে হবে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজকের এই মুহূর্তটি শিক্ষা বিভাগের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য চলতি নভেম্বর মাস থেকে মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ (ন্যূনতম ২,০০০ টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা কার্যকর হবে এবং ২০২৬ সালের জুলাই থেকে আরও সাড়ে ৭ শতাংশ যুক্ত হয়ে মোট ১৫ শতাংশ ভাতা কার্যকর হবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারায় শিক্ষা উপদেষ্টা নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে সৌভাগ্যবান মনে করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষকরা আরও অধিক সম্মানের দাবিদার এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের অব্যাহতভাবে সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ ছিল না। নানা মতপার্থক্য, বিতর্ক ও অভিযোগের মধ্য দিয়েই কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। কোনো বিতর্কে না জড়িয়ে মন্ত্রণালয় একটি ন্যায্য ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছে। পর্দার আড়ালে থেকে শিক্ষা উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিরলসভাবে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে।
মন্ত্রণালয় মনে করে, এটি কারও একার অর্জন নয়—এটি একটি যৌথ সাফল্য। শিক্ষকদের আন্দোলন সরকারের কাছে বাস্তবতা তুলে ধরেছে, সরকারও দায়িত্বশীলভাবে সাড়া দিয়েছে। সম্মান, সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে আজকের এই সাফল্য এসেছে। এখন সময় ক্লাসে ফিরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর—আমাদের প্রকৃত দায়িত্বের জায়গায়। আজকের এই সমঝোতা হোক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও শিক্ষার ভিত্তিকে আরও মজবুত করার এক নতুন সূচনা।
পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও গুণগত শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব—এই বিশ্বাসেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

টি সাধারণ প্রশ্নোত্তর
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা কত শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে?
অর্থ মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে।
এই ভাতা কবে থেকে কার্যকর হবে?
চলতি নভেম্বর মাস থেকে মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ ভাতা কার্যকর হবে, আর বাকি সাড়ে ৭ শতাংশ ২০২৬ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
এই ভাতা বৃদ্ধির ফলে কি কোনো বকেয়া অর্থ প্রদান করা হবে?
না, এই ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো বকেয়া প্রদান করা হবে না।
এই ভাতা প্রদানের সময় কী কী নিয়ম মানতে হবে?
সকল আর্থিক বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম হলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছে?
শিক্ষা মন্ত্রণালয় একে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে। মন্ত্রণালয়ের মতে, এটি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির স্বীকৃতি ও পারস্পরিক সম্মান ও সংলাপের সফল ফলাফল।
উপসংহার
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি সরকারের একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। এটি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি পূরণের পাশাপাশি তাদের মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সিদ্ধান্ত পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সংলাপ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।




