রাবিতে মুক্তিযোদ্ধার ‘নাতি-নাতনি’ কোটা বাতিল

রাবিতে মুক্তিযোদ্ধার ‘নাতি-নাতনি’ কোটা বাতিল

নানা বিতর্ক ও সমালোচনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনী কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, এই কোটা শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য থাকবে। এছাড়া, পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও খেলোয়াড় কোটার ক্ষেত্রে পূর্বের নিয়মাবলী বহাল থাকবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মঈন উদ্দীন এ সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মঈন উদ্দীন বলেন, “আমরা এবারের ভর্তি পরীক্ষা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজন করতে যাচ্ছি, কারণ এবারের পরীক্ষা রাজশাহীসহ পাঁচটি বিভাগীয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। পোষ্য কোটা ৩ শতাংশ করা হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনী কোটা বাতিল করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা সহ অন্যান্য কোটার নিয়ম আগের মতোই বহাল থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন এক শিফটে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ১২ এপ্রিল থেকে। ভর্তি ফি এবং ইউনিটের নিয়ম অপরিবর্তিত থাকবে, এবং দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগও রাখা হয়েছে।”

আজ (বৃহস্পতিবার) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। প্রাথমিক আবেদন গ্রহণ করা হবে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রাথমিক আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে ১ লাখ ৮ হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত আবেদন করতে পারবেন।

এছাড়া, জানা গেছে, ২০২৪-২৫ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা, রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ, বি ও সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১২ এপ্রিল ‘বি’ ইউনিট (ব্যবসা), ১৯ এপ্রিল ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) এবং ২৬ এপ্রিল ‘সি’ ইউনিট (বিজ্ঞান) পরীক্ষার দিন নির্ধারিত হয়েছে। প্রতিদিন এক শিফটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বছরও প্রাথমিক আবেদন ফি ৫৫ টাকা এবং চূড়ান্ত আবেদন ফি হিসেবে ‘বি’ ইউনিট (বাণিজ্য) জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, এবং ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) ও ‘সি’ ইউনিট (বিজ্ঞান) জন্য ১ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় মেধা মূল্যায়ন হবে ১ ঘণ্টার সময়সীমায় ৮০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের মাধ্যমে।

এর আগে, মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কোটা সংস্কার বিষয়ক কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ (মোট কোটার) নির্ধারণ করা হবে এবং মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনী কোটা বাতিল করা হবে।

কেন মুক্তিযোদ্ধার ‘নাতি-নাতনি’ কোটা বাতিল করা হয়েছে?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনী কোটা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এটি বিভিন্ন বিতর্ক ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে। এই কোটা শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য থাকবে, যার ফলে কোটা ব্যবস্থাকে আরও সুষম ও ন্যায্য করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এখন কীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা প্রযোজ্য হবে?

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য আগের মতোই কোটা ব্যবস্থা থাকবে। তবে, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি আর কোটা সুবিধা পাবেন না। অর্থাৎ, শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এই কোটা সুবিধা পাবেন।

পোষ্য কোটা পরিবর্তন হয়েছে কিনা? হ্যাঁ, পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে, এটি মোট কোটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং অন্যান্য কোটা, যেমন শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং খেলোয়াড় কোটার নিয়ম আগের মতোই বহাল থাকবে।

এ বছর ভর্তি পরীক্ষার ফি কেমন?

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদন ফি ৫৫ টাকা, এবং চূড়ান্ত আবেদন ফি ‘বি’ ইউনিট (বাণিজ্য) জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) ও ‘সি’ ইউনিট (বিজ্ঞান) জন্য ১ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে এবং কীভাবে হবে?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। এবারের ভর্তি পরীক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা, রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষাটি এক শিফটে হবে এবং মেধা মূল্যায়ন করা হবে ১ ঘণ্টার মধ্যে ৮০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের মাধ্যমে।

উপসংহার

উপসংহার হিসেবে বলা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধার ‘নাতি-নাতনি’ কোটা বাতিল করা এবং পোষ্য কোটা ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তগুলিকে ভর্তি পরীক্ষার সুষ্ঠু ও ন্যায্য আয়োজনের অংশ হিসেবে তুলে ধরেছে। এছাড়া, ভর্তি ফি, পরীক্ষা পদ্ধতি এবং পরীক্ষার সময়সূচীও নির্ধারিত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে। এ পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আরও কার্যকরী ও প্রগতিশীল ভর্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে চায়, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top