যুক্তরাষ্ট্রে আটকের ঝুঁকিতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা

“গত এক মাসের কম সময়ের মধ্যে দেশের ১৬০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১,০২৪ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল বা তাদের আইনি মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

“গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন এক হাজারেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা অথবা তাঁদের আইনি মর্যাদা বাতিল করেছে। এর ফলে, বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আসা শিক্ষার্থীরা এখন আটক বা নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়েছেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।”

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এক মাসেরও কম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১,০২৪ জন শিক্ষার্থীর ভিসা অথবা আইনি মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের অধিকার হরণ করার পেছনে পর্যাপ্ত কারণ উপস্থাপন করা হয়নি।

হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডের মতো স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মেরিল্যান্ড ও ওহাইও স্টেটের মতো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—কোনটিই ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন ও শিক্ষার্থী-বিরোধী কঠোর নীতির আওতামুক্ত থাকেনি। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) জানিয়েছে, তাঁদের নয়জন বিদেশি ছাত্র ও গবেষকের ভিসা এবং অভিবাসন স্ট্যাটাস পূর্ব কোনো সতর্কতা ছাড়াই বাতিল করা হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলন দমনে নির্ধারিত সরকারি নির্দেশনা মানা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জন্য বরাদ্দ ২.৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল ইতিমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা সরকারের দাবির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে।

অতীতে, কোনো শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারতেন এবং পড়াশোনা শেষ করার সুযোগ পেতেন, যতক্ষণ না তিনি দেশত্যাগ করতেন। কিন্তু বর্তমানে, ভিসা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের আটক করার ক্ষমতা পাচ্ছে আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট)-এর মতো ফেডারেল সংস্থাগুলো।

আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের গভর্নমেন্ট রিলেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারাহ স্প্রেইটজার জানিয়েছেন, ‘ভিসা প্রত্যাহারের পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ স্পষ্ট না থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি হতে পারে।’

কেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে?

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কঠোরতা, ছাত্র আন্দোলন দমনের চেষ্টা, এবং নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুসরণে ব্যর্থতার অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।

ভিসা বাতিল মানেই কি অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে?

পূর্বে শিক্ষার্থীরা ভিসা বাতিল হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে, ভিসা বাতিলের ফলে শিক্ষার্থীরা আইসিই (ICE)-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে আটক ও নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়ছেন।

কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর আওতায় এসেছে?

হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি, মেরিল্যান্ড, ওহাইও স্টেটসহ অন্তত ১৬০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রভাবিত হয়েছে। হার্ভার্ডের ২.৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিলও স্থগিত করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন?

অনেক শিক্ষার্থী হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের দাবি, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনেই তাদের বৈধ অবস্থান বাতিল করা হয়েছে, যা অন্যায্য।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের প্রতিনিধি সারাহ স্প্রেইটজার বলেন, স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে, যা উচ্চশিক্ষার পরিবেশের জন্য হুমকি।

উপসংহার

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা বর্তমানে অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তা ও আইনি জটিলতার মুখে পড়েছেন। ভিসা বাতিল ও আইনি মর্যাদা প্রত্যাহারের মাধ্যমে শুধু তাঁদের একাডেমিক ভবিষ্যৎই নয়, বরং মৌলিক মানবাধিকারও হুমকির মুখে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী যে বহুত্ববাদ ও মুক্তচিন্তার পরিচায়ক, বর্তমান পরিস্থিতি তা থেকে একটি বিপজ্জনক সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এসব সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করা হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আস্থা যেমন কমবে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বমানের শিক্ষাখাতও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top