মাদরাসাছাত্রের হাতের বন্দুকটি খেলনা ছিল

মাদরাসাছাত্রের হাতের বন্দুকটি খেলনা ছিল

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মোশাররফিয়া হাফেজিয়া ও ক্বওমী মাদরাসা মাঠে আয়োজিত একটি মাহফিল চলাকালে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনকারী এক মাদরাসা ছাত্রের হাতে অস্ত্রসহ একটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ঘটনাটি জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং এর পেছনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মোশাররফিয়া হাফেজিয়া ও ক্বওমী মাদরাসা মাঠে আয়োজিত মাহফিলে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বপালনকারী এক মাদরাসা ছাত্রের হাতে অস্ত্রসদৃশ একটি বস্তু নিয়ে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

মাদরাসাছাত্র মো. নাইমুল ইসলাম জানিয়েছেন, এটি আসলে একটি খেলনা পিস্তল যা তিনি ছোট বোনের জন্য ২২০ টাকায় কিনেছিলেন। তবে তিনি সেটি নিয়ে ভিড়ের মধ্যে বেশ কিছু সময় ঘোরাফেরা করেছেন, যা ভুল বোঝাবুঝির কারণ হয়েছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ দেশ-বিদেশের বহু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি শেয়ার করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটি আসলে একটি প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক।

লেখক তসলিমা নাসরীন এবং সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিনও এই ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তসলিমা নাসরীন লিখেছেন, “বাংলাদেশি জিহাদিরা এখন মারণাস্ত্র হাতে নিয়েই তাদের মিছিল-মিটিংয়ে যাচ্ছে। ইউনূস-আসিফ গ্যাং কি জিহাদিদের নিরস্ত্রীকরণের কথা একবারও বলবে না?”

এই ধরনের ভুল তথ্য বা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আলোচনা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বিষয়টির প্রকৃত সত্য যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজাদপুর উপজেলার মোশাররফিয়া হাফেজিয়া ও ক্বওমী মাদরাসা মাঠে প্রধান মেহমান সাইয়িদ শায়েখ নাসির বিল্লাহ আল মাক্কী হেলিকপ্টারে এসে মাহফিলের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর পর, প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক হাতে একটি যুবকের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।

ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠার পর, পুলিশ শাহজাদপুর উপজেলার বেলতল গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে মো. নাইমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুকটি জব্দ করা হয়।

শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসলাম আলী বলেন, “ঘটনাটি নিয়ে আমরা প্রথমে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলাম। সেখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছিল এবং একজন যুবক অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে ছবি প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্ত্রটি আসলে প্লাস্টিকের খেলনা।”

তিনি আরও জানান, মো. নাইমুল ইসলাম তার সহপাঠীদের সঙ্গে মাহফিলে যোগ দিতে এসে মাদরাসা মাঠের পাশের অস্থায়ী দোকান থেকে ২২০ টাকায় ছোট বোন সুমাইয়ার জন্য খেলনা বন্দুকটি কিনেছিলেন।

নাইমুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি জামিয়া রশিদিয়া হাফেজিয়া ও ক্বওমী মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মাহফিলে ব্যস্ত থাকার কথা জানান এবং মাদরাসার শিক্ষক মুফতি মোহাম্মদ হাসানের ফোন নম্বর দেন। মুফতি হাসানের ফোনে কল দিয়ে ‘হেদায়া’ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. নাইমুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়।

নাইমুল জানান, “শায়েখ যখন হেলিকপ্টার থেকে নামলেন, তখন ১২টা ২০ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যে ছিল সময়। তিনি যখন ঘোড়ার গাড়িতে উঠলেন, চারপাশে দায়িত্বশীলরা ছিলেন, আমি বন্দুকটি নিয়ে চলছিলাম। চলতে চলতে হঠাৎ আমার বন্দুকটি ভেঙে যায়। আপনি দেখতে পারেন, ওটার সামনে ভাঙা আছে। ভেঙে যাচ্ছিল আর মানুষের কষ্ট হবে, তাই আমি উঁচু করে রেখেছিলাম। পরে কীভাবে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমি জানি না। ভিড়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম, আর আমার কাছে রাখার জায়গা ছিল না, এটি তো আমার বাড়ি বা মাদরাসা না।”

এই মন্তব্যে তার মনের ভেতরের বিভ্রান্তি এবং পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা দেখা যায়।

শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “ছবিতে দেখা যাওয়া নাঈমুলের অস্ত্র এবং জব্দকৃত অস্ত্র একই। এটি একটি প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক। অপর ব্যক্তির প্রদর্শিত অস্ত্রটি ছিল তলোয়ার, তবে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদি এটি আসল অস্ত্র হতো, তবে তা সম্মুখে প্রদর্শন করা আইনগত অপরাধ ছিল। তবে এটি প্লাস্টিকের খেলনা, তাই এর উদ্দেশ্য অসৎ ছিল না। সেজন্য মুচলেকায় শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যজনকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

এএসপি কামরুজ্জামানের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল এবং আইনগতভাবে কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ছিল না।

মাদরাসাছাত্রের হাতে দেখা বন্দুকটি আসলে কী ছিল?

উত্তর: মাদরাসাছাত্রের হাতে থাকা বন্দুকটি আসলে একটি প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক ছিল, যা পরবর্তীতে পুলিশ কর্তৃক জব্দ করা হয়।

: বন্দুকটি কেন মাদরাসাছাত্র হাতে নিয়েছিল?

উত্তর: মাদরাসাছাত্র মো. নাইমুল ইসলাম তার ছোট বোনের জন্য একটি খেলনা বন্দুক ২২০ টাকায় কিনেছিলেন এবং তা মাহফিলের অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছিলেন।

বন্দুকটি নিয়ে কেন এত আলোচনা তৈরি হলো?

উত্তর: বন্দুকটি একটি মাহফিলের অনুষ্ঠানে হাতে নিয়ে উপস্থিত হওয়ায় এবং ছবি-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়।

পুলিশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

উত্তর: পুলিশ বন্দুকটি জব্দ করেছে এবং মাদরাসাছাত্রকে মুচলেকায় মুক্তি দিয়েছে, কারণ এটি একটি খেলনা বন্দুক ছিল এবং এর মাধ্যমে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।

: ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ কী মন্তব্য করেছে?

উত্তর: শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, এটি একটি প্লাস্টিকের খেলনা বন্দুক, যার প্রদর্শন আইনগত অপরাধ ছিল না, তাই মুচলেকায় শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উপসংহার

উপসংহারে, শাহজাদপুরে মাদরাসাছাত্র মো. নাইমুল ইসলামের হাতে দেখা বন্দুকটি আসলে একটি প্লাস্টিকের খেলনা ছিল, যা পরবর্তীতে পুলিশ কর্তৃক জব্দ করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তবে তদন্তের পর জানা যায়, এটি কোনো ধরনের আইনগত অপরাধ ছিল না। পুলিশ পরিস্থিতির সত্যতা নিশ্চিত করে, শিক্ষার্থীকে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়। এই ঘটনা মূলত একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল, এবং এর মাধ্যমে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বা অপরাধ সংঘটিত হয়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top