“গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২৫-এর সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ভারত চতুর্থ এবং পাকিস্তান দ্বাদশ স্থান ধরে রেখেছে। ভারতের অগ্রগামী অবস্থানের পেছনে এর বিশাল জনসংখ্যা, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।”

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২৫-এর তালিকা অনুযায়ী, সামরিক শক্তির বিচারে পাকিস্তান দ্বাদশ স্থানে আর ভারত চতুর্থ স্থানে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। ভারতের উন্নত ও বৃহত জনসংখ্যা, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং কৌশলগত অবস্থানের কারণে দেশটি সামরিক শক্তিতে এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’র।
**”যুদ্ধের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বৈশ্বিকভাবে চতুর্থ বৃহত্তম। বিপরীতে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ৭৬৪ কোটি ডলার, যা বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে ৩৮তম স্থানে। এই পার্থক্যের পেছনে জিডিপি, জনসংখ্যা, সামরিক সক্ষমতা এবং ক্রয়ক্ষমতার মতো মোট ৬০টি সূচকের প্রভাব রয়েছে। এই সূচকগুলোর ভিত্তিতেই গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সে ভারতকে পাকিস্তানের তুলনায় অনেক এগিয়ে রাখা হয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই ব্যবধান সুস্পষ্ট। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম, যেখানে পাকিস্তান রয়েছে ৭১তম স্থানে—যার ফলে এই সূচকে ভারত পাকিস্তানের থেকে ৬৬ ধাপ এগিয়ে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রসদ সংগ্রহ এবং অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার সক্ষমতায়ও এই ব্যবধান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এমনকি যদি পাকিস্তান তাদের সমস্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করে অস্ত্র সংগ্রহে মনোযোগী হয়, তবুও ভারতের সামর্থ্য তুলনামূলকভাবে প্রায় ১৪ গুণ বেশি থাকবে।”**
**”যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লোকবল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ কেবল সামরিক সদস্যরাই নয়, অসামরিক জনগণের ভূমিকাও সংকটকালীন মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ওয়াল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বর্তমানে ভারতের অবস্থান শীর্ষে, যার জনসংখ্যা প্রায় ১৪৬ কোটি। এই বিপুল জনসংখ্যার একটি অংশ দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।
ভারতের মোট সামরিক জনবল বর্তমানে ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০ জন, যেখানে পাকিস্তানের রয়েছে ৩১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে ভারতের সক্রিয় সেনাসদস্য ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৫০, পাকিস্তানে এই সংখ্যা ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার। সংরক্ষিত বাহিনীর দিক থেকেও ভারত এগিয়ে—১১ লক্ষ ৫৫ হাজার সেনা সদস্য সংরক্ষণে রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানে রয়েছে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার। আধা-সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রেও ব্যবধান স্পষ্ট: ভারতে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫ লক্ষ ২৭ হাজার, আর পাকিস্তানে ৫ লক্ষ।
এই পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরক্ষা কাঠামো তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সক্ষম ও সুসংগঠিত।”**
**”বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী ও স্থলবাহিনীর সামরিক সক্ষমতার দিক থেকেও ভারত পাকিস্তানের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে রয়েছে। ভারতের মোট সামরিক বিমানের সংখ্যা ২,২২৯টি, যেখানে পাকিস্তানের আছে ১,৩৯৯টি। ভারতের ফাইটার জেট রয়েছে ৫১৩টি, পাকিস্তানের ৩২৮টি; অ্যাটাক বিমানে ভারতের আছে ১৩০টি, পাকিস্তানে ৯০টি। পরিবহন বিমানে ভারতে ২৭০টি, পাকিস্তানে মাত্র ৬৪টি; হেলিকপ্টারে ভারতের ৮৯৯টির বিপরীতে পাকিস্তানের সংখ্যা ৩৭৩টি, যার মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ভারতের ৮০টি ও পাকিস্তানের ৫৭টি।
স্থলবাহিনীর শক্তির দিক থেকেও ভারত এগিয়ে। ভারতের কাছে রয়েছে ৪,২০১টি ট্যাঙ্ক, পাকিস্তানে এর সংখ্যা ২,৬২৭টি। ভারতের সাঁজোয়া যান প্রায় ১,৪৮,৫৯৪টি, পাকিস্তানের মাত্র ১৭,৫১৬টি।
নৌবাহিনীর ক্ষেত্রেও ব্যবধান লক্ষণীয়। ভারতের যুদ্ধজাহাজ সংখ্যা ২৯৩টি, পাকিস্তানের ১২১টি। বিমানবাহী রণতরীতে ভারতের দুটি (আইএনএস বিক্রমাদিত্য ও আইএনএস বিক্রান্ত) সক্রিয়, যেখানে পাকিস্তানের নেই কোনোটি। সাবমেরিন ভারতের ১৮টি, পাকিস্তানের ৮টি। ডেস্ট্রয়ার ভারতের ১৩টি, পাকিস্তানে নেই। ফ্রিগেট ও করভেট উভয় ক্ষেত্রেই ভারত এগিয়ে—ভারতের ফ্রিগেট ১৪টি ও করভেট ১৮টি, যেখানে পাকিস্তানের রয়েছে যথাক্রমে ৯টি ও ৯টি।
বিমানবন্দর ও বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দরের সংখ্যাতেও ভারতে রয়েছে স্পষ্ট অগ্রগামিতা। ভারতের ৩১১টি বিমানবন্দরের বিপরীতে পাকিস্তানে রয়েছে ১১৬টি; বাণিজ্যিক জাহাজ ভারতের ১,৮৫৯টি, পাকিস্তানের ৬০টি; এবং সমুদ্রবন্দর ভারতের ৫৬টি, পাকিস্তানে মাত্র ৩টি।
যদিও উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর, তাই একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘর্ষের সম্ভাব্য পরিণতি হতে পারে মারাত্মক ও বিপর্যয়কর। সামরিক সক্ষমতার ব্যবধান যতই থাকুক না কেন, পরমাণু অস্ত্রের উপস্থিতি যুদ্ধ পরিস্থিতিকে বহুগুণ বেশি জটিল করে তোলে।”**
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের তুলনায় কত শক্তিশালী?
ভারত:
- মোট সেনা সদস্য: ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০
- সক্রিয় সেনা: ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৫০
- সংরক্ষিত সেনা: ১১ লক্ষ ৫৫ হাজার
- আধা-সামরিক বাহিনী: ২৫ লক্ষ ২৭ হাজার
- পাকিস্তান:
- মোট সেনা সদস্য: ৩১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০
- সক্রিয় সেনা: ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার
- সংরক্ষিত সেনা: ৫ লক্ষ ৫০ হাজার
- আধা-সামরিক বাহিনী: ৫ লক্ষ
- উত্তর: ভারতে সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা এবং আধা-সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি।
ভারত ও পাকিস্তানের বিমানবাহিনী তুলনায় কেমন?
ভারত:
- মোট সামরিক বিমান: ২,২২৯
- ফাইটার জেট: ৫১৩
- অ্যাটাক বিমান: ১৩০
- হেলিকপ্টার: ৮৯৯
- পাকিস্তান:
- মোট সামরিক বিমান: ১,৩৯৯
- ফাইটার জেট: ৩২৮
- অ্যাটাক বিমান: ৯০
- হেলিকপ্টার: ৩৭৩
- ভারতের বিমানবাহিনী পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী, বিশেষত ফাইটার জেট এবং হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রে।
নৌবাহিনীতে ভারতের অবস্থান কীভাবে পাকিস্তানের তুলনায়?
ভারত:
- যুদ্ধজাহাজ: ২৯৩
- সাবমেরিন: ১৮
- ডেস্ট্রয়ার: ১৩
- ফ্রিগেট: ১৪
- কামানবাহী রণতরী: ১৮
- টহলদারি ভেসেল: ১৩৫
- বন্দর: ৫৬
- পাকিস্তান:
- যুদ্ধজাহাজ: ১২১
- সাবমেরিন: ৮
- ডেস্ট্রয়ার: ০
- ফ্রিগেট: ৯
- কামানবাহী রণতরী: ৯
- টহলদারি ভেসেল: ৬৯
- বন্দর: ৩
- উত্তর: নৌবাহিনীতে ভারত পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী, বিশেষ করে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং ডেস্ট্রয়ারের ক্ষেত্রে।
বিমানবন্দর ও বন্দর ব্যবস্থায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পার্থক্য কী?
ভারত:
- বিমানবন্দর: ৩১১
- বন্দর: ৫৬
- বাণিজ্যিক জাহাজ: ১,৮৫৯
- পাকিস্তান:
- বিমানবন্দর: ১১৬
- বন্দর: ৩
- বাণিজ্যিক জাহাজ: ৬০
- উত্তর: ভারতের বিমানবন্দর, বন্দর এবং বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি, যা তাদের সামরিক শক্তিতে অবদান রাখে।
পরমাণু শক্তির দিক থেকে ভারত ও পাকিস্তান কী অবস্থানে আছে?
- ভারত: পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে পরিচিত।
- পাকিস্তান: পাকিস্তানও পরমাণু শক্তিধর দেশ, তবে ভারতের তুলনায় সামরিক সামর্থ্যে পিছিয়ে।
- উত্তর: উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর, ফলে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পরিণতি মারাত্মক হতে পারে, তবে ভারত সামরিক শক্তিতে অনেক এগিয়ে রয়েছে।
উপসংহার
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তির তুলনায় স্পষ্ট ব্যবধান রয়েছে, যেখানে ভারত বিভিন্ন দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর শক্তি, টেকনোলজি, সংস্থান এবং সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ভারত উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী। বিশেষ করে, ভারতের বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সংখ্যা ও আধুনিকতায় পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে।
তবে, দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর হওয়ায়, তাদের সামরিক শক্তি পরস্পরের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য সত্ত্বেও একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং অনির্দেশ্য হতে পারে। তাই, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ভারতে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও, পরমাণু অস্ত্রের উপস্থিতি এবং যুদ্ধের সম্ভাব্য পরিণতি উভয় দেশের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে।




