ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন যৌথভাবে একটি পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উন্নত গবেষণা সুযোগ ও আন্তর্জাতিক একাডেমিক সম্পৃক্ততার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। এটি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় দুই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। অবশেষে সেই দাবি পূরণের পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটল। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের যৌথ উদ্যোগে ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে একটি যৌথ পিএইচডি প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে।
সোমবার (তারিখ উল্লেখ করুন) এই যৌথ প্রোগ্রামের উদ্বোধন হয় লন্ডনে সোয়াস ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস এবং ঢাকার মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে একযোগে আয়োজিত দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। লন্ডনের অনুষ্ঠানে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন সোয়াস ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর প্রফেসর অ্যাডাম হাবিব এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল ফায়েজ, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা।
দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করলো। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের যৌথ উদ্যোগে ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে।
এই প্রোগ্রাম ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি অফ ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে পরিচালনা করবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং সোয়াসের ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনমিক্স ও ডিপার্টমেন্ট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ। এতে গবেষকরা টেকসই শাসন, সামাজিক উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মতো সমসাময়িক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ পাবেন।
প্রোগ্রামটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে তা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহজপ্রাপ্ত হয়। গবেষণা পরিচালিত হবে ব্র্যাক ও সোয়াসের যৌথ তত্ত্বাবধানে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ঢাকায় বা লন্ডনে গবেষণা করতে পারবেন এবং ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামোও ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রকল্পটির উদ্বোধন উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একে “অসাধারণ একটি উদ্যোগ” বলে আখ্যা দেন এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশনকে উচ্চশিক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখেন।
সোয়াসের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর অ্যাডাম হাবিব বলেন, “এই যৌথ প্রোগ্রাম বৈশ্বিক উন্নয়নে আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আমরা এমন গবেষণা পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই, যা কার্যকর সমাধান দিতে পারে বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জগুলোতে।”
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ বলেন, “এই উদ্যোগ গবেষণাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করবে। এতে বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের দ্বার উন্মুক্ত হবে।”
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর গবেষণায় প্রবেশাধিকার সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গবেষণা ও উন্নয়নে বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর অ্যাডাম হাবিব বলেন, “এই নতুন অংশীদারিত্ব আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে বৈশ্বিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এই সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এমন একটি গবেষণামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যা সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম।”
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ বলেন, “এই উদ্যোগ আমাদের মূল লক্ষ্য ‘গবেষণাভিত্তিক ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিত করার সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে অনন্য সুযোগ দিচ্ছে।”
শিক্ষাসহ সব ধরনের সংবাদ দ্রুত জানতে চান? তাহলে আজই সাবস্ক্রাইব করুন দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল, এবং বেল আইকনটি অন করুন। এর মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে ভিডিও নোটিফিকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছবে, কোনো খবর মিস হবে না।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং সোয়াস ইউনিভার্সিটির যৌথ পিএইচডি প্রোগ্রামটির প্রধান বিষয় কী?
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং যুক্তরাজ্যের সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের যৌথ উদ্যোগে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট বা বৈশ্বিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হবে।
এই পিএইচডি প্রোগ্রামটি কোথায় কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?
প্রোগ্রামটি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাস ও সোয়াসের লন্ডন ক্যাম্পাসে একযোগে পরিচালিত হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় ও লন্ডনে গবেষণা করতে পারবেন।
শিক্ষার্থীরা কী কী বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন?
শিক্ষার্থীরা টেকসই শাসনব্যবস্থা, সামাজিক উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এবং বৈশ্বিক উন্নয়নের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন।
এই পিএইচডি প্রোগ্রামটি কি নতুন কোনও উদ্যোগ?
হ্যাঁ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এটি প্রথমবার বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করলো, যা ২০২৩ সালের গ্রীষ্ম থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল।
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কী সুবিধা পাবে?
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উন্নতমানের গবেষণার সুযোগ পাবেন, ব্র্যাক ও সোয়াসের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কাজ করতে পারবেন এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
উপসংহার
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাজ্যের সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের যৌথ পিএইচডি প্রোগ্রাম বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী বিষয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করে এই উদ্যোগটি দেশের শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক মানের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় প্রবেশাধিকার বাড়াবে। পাশাপাশি, এই প্রোগ্রাম টেকসই উন্নয়ন ও ন্যায্যতাসম্পন্ন সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের গবেষণামূলক শিক্ষা খাতে যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ।