বৈসাবি উৎসবের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা, রুটিন পরিবর্তনের আহ্বান

বৈসাবি উৎসবের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা, রুটিন পরিবর্তনের আহ্বান

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড এসএসসি পরীক্ষার রুটিন এমনভাবে নির্ধারণ করেছে, যাতে তা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’র দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এ সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

শুক্রবার পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা এবং সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি রুটিন পরিবর্তনের অনুরোধ জানান।

চাকমাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ এবং ত্রিপুরাদের ‘বিহু’—এই তিন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসবের নাম। তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর নিয়ে নামকরণ করা হয়েছে ‘বৈসাবি’। প্রতিবছর ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই উৎসবটি বর্ণাঢ্য আয়োজন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতি মেনে উদযাপিত হয়।

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ১৩ ও ১৫ এপ্রিল পরীক্ষা নির্ধারণ করেছে, যা বৈসাবি উৎসবের সময়ে পড়েছে। এ কারণে ওই দুই পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

বিবৃতিতে পিসিপি নেতারা ‘বৈসাবি’ (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিহু-সাংক্রান-বিষু) উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “প্রতিবছর ১২ এপ্রিল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের ঐতিহ্যবাহী এই প্রধান সামাজিক উৎসব উদযাপিত হয়। এ সময়ে পাহাড়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ জাতিসত্তার ঐতিহ্যকে ধারণ করে নিজ নিজ সংস্কৃতি চর্চা করে এবং আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সকল জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক মিলনমেলা তৈরি হয়।”

বিবৃতিতে পিসিপি নেতারা বলেন, “২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ এপ্রিল থেকে বৈসাবি উৎসব শুরু হবে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ১৩ এপ্রিল বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং ১৫ এপ্রিল ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যবর্তী ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ। এই দিনগুলোতেই পাহাড়ি সম্প্রদায়গুলো তাদের উৎসব উদযাপন করে থাকে। ফলে, এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সামনে রেখে অংশগ্রহণকারী পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা উৎসবের আনন্দঘন পরিবেশে নিজ নিজ সংস্কৃতি পালন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তাই, আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, এই রুটিন অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।”

তারা আরও বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল বৈসাবি উৎসবকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া। দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিন প্রণয়নের সময় এদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক উৎসবের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি।”

‘বৈসাবি’ উৎসবকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে পিসিপি নেতারা বিবৃতিতে বলেন, “দেশের ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরতে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে সরকারি সাধারণ ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এর মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দেশের অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষের সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সম্মিলন আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমরা মনে করি।”

তারা আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের ২০২৫ সালের ছুটির তালিকায় ‘বৈসাবি’ উপলক্ষে দুই দিন ঐচ্ছিক ছুটি রাখা হয়েছে। তবে এই দুই দিনের ছুটি যথেষ্ট নয়, কারণ সমতলে বসবাসরত পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা নিজ বাড়িতে গিয়ে উৎসব উদযাপন করে ফিরে আসার সময় পান না। তাই এই ছুটিকে সাধারণ ছুটির সঙ্গে যুক্ত করে বাড়ানো প্রয়োজন।”

বিবৃতিতে পিসিপি নেতারা ‘বৈসাবি’ উৎসবকে সাধারণ ছুটির অন্তর্ভুক্ত করে পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে জোর দাবি জানান।

বৈসাবি উৎসব কী?

বৈসাবি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এটি চাকমাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’, এবং ত্রিপুরাদের ‘বিহু’ উৎসবের সম্মিলিত রূপ। প্রতিবছর ১২ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই উৎসবটি বর্ণাঢ্য আয়োজন ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি মেনে উদযাপিত হয়।

কেন এসএসসি পরীক্ষার রুটিন নিয়ে আপত্তি উঠেছে?

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী, ১৩ এপ্রিল বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং ১৫ এপ্রিল ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে বৈসাবি উৎসব এবং ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পড়েছে। পরীক্ষার কারণে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা উৎসবের আনন্দঘন পরিবেশে অংশ নিতে পারবে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

কোন পক্ষ থেকে রুটিন পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে?

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এই রুটিন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি পরীক্ষা রুটিন প্রণয়নের সময় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসবকে বিবেচনায় না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

বিবৃতিতে আর কী বলা হয়েছে?

পিসিপি নেতারা জানিয়েছেন, বৈসাবি উৎসবের দিনগুলোতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি পালন করে। কিন্তু পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীরা এই উৎসবে অংশ নিতে পারবে না। পাশাপাশি, তারা বৈসাবিকে সরকারি সাধারণ ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার এবং ছুটি ৫ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।

কীভাবে সমাধান সম্ভব?

পিসিপি নেতারা রুটিন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত উৎসবকালীন দিনগুলোতে পরীক্ষা না রেখে শিক্ষার্থীদের উৎসব পালনের সুযোগ দেওয়া। একইসঙ্গে উৎসবকে কেন্দ্র করে ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থীদের পরিবারে ফিরে উৎসব উদযাপনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

উপসংহার

বৈসাবি উৎসব পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এই উৎসব শুধু আনন্দ উদযাপন নয়, বরং জাতিগত পরিচয়, ঐতিহ্য সংরক্ষণ, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন ঘটায়। এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি বৈসাবির গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর সঙ্গে মিলে যাওয়ায় পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের জন্য এই আনন্দ উদযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। তাই পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন এবং বৈসাবি উৎসবকে সরকারি সাধারণ ছুটির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। সরকারের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, যাতে দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সার্বিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top