বিপুল নোট-গাইড জব্দ করে ধ্বংস : দুই প্রেসে মোবাইল কোর্ট

বিপুল নোট-গাইড জব্দ করে ধ্বংস : দুই প্রেসে মোবাইল কোর্ট

অসাধু প্রেস মালিকরা নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে নোট ও গাইড বই মুদ্রণ অব্যাহত রেখেছেন। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রেসগুলোর ওপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক আমাদের বার্তা এবং দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ “নোট-গাইড ও ডায়েরি ছাপা বন্ধে মোবাইল কোর্ট” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই দিনে দুইটি প্রেসে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ নোট ও গাইড বই জব্দ করে ধ্বংস করার খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর দুটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান—অনুপম প্রিন্টার্স লিমিটেড এবং লেটার অ্যান্ড কালার লিমিটেড—এ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ নোট ও গাইড বই জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর কর্মকর্তারা ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের পর প্রতিষ্ঠান দুটিকে জরিমানা করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে, গত ১ ডিসেম্বর শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা এবং পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ “নিষিদ্ধ নোট-গাইড কোম্পানি মালিকরা সিডি নিতে এনসিটিবিতে!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নোট-গাইড প্রকাশকদের এমন অপকর্মে জড়িত থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দ্রুততম সময়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

এরপর এনসিটিবি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, এনসিটিবির কিছু কর্মকর্তা নোট-গাইড প্রকাশকদের কাছে তথ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। কমিটির অনুসন্ধানে এনসিটিবির একজন স্থায়ী কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করা হয়, এবং তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বরখাস্ত করার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে বলে এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, গত ৩ ডিসেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা সম্পন্ন হয়ে তাদের হাতে পৌঁছানোর আগে সব ধরনের সহায়ক বই বা নোট-গাইড মুদ্রণ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করে।

কিন্তু এনসিটিবির ওই নির্দেশ অমান্য করে অসাধু প্রেস মালিকরা অবাধে নোট-গাইড ছাপিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় নোট-গাইড ছাপা বন্ধে প্রেসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক আমাদের বার্তা এবং দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ “নোট-গাইড ও ডায়েরি ছাপা বন্ধে মোবাইল কোর্ট” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই দিনে দুটি প্রেসে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ নোট-গাইড জব্দ করে ধ্বংস করার খবর পাওয়া গেছে।

কোন প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে?

অনুপম প্রিন্টার্স লিমিটেড এবং লেটার অ্যান্ড কালার লিমিটেড নামে দুইটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।

অভিযান পরিচালনার কারণ কী ছিল?

এ দুটি প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে নোট ও গাইড বই মুদ্রণ করা হচ্ছিল, যা এনসিটিবির নির্দেশনার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।

অভিযান পরিচালনায় কারা অংশ নেন?

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর কর্মকর্তারা এই অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযানের ফলাফল কী হয়েছে?

বিপুল পরিমাণ অবৈধ নোট ও গাইড বই জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠান দুটিকে জরিমানা করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

উপসংহার

অবৈধ নোট-গাইড মুদ্রণ শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটি বড় হুমকি। এ ধরনের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও শিক্ষার প্রকৃত মান উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এবং অবৈধ নোট-গাইড জব্দ ও ধ্বংসের কার্যক্রম শিক্ষাখাতের সুরক্ষায় একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে, এ সমস্যা সমাধানে শুধু অভিযান যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, কার্যকর আইন প্রয়োগ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে নোট-গাইডের পরিবর্তে পাঠ্যপুস্তককেন্দ্রিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top