ছাত্র সংসদগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ জন শিক্ষার্থীর তালিকা থেকে যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ না পাওয়া গেলে দ্রুত সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করা জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু, রাকসু, চাকসু, জাকসু) ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভিত্তিতে ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ, রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার, চাকসুর জিএস সাঈদ বিন হাবিব ও জাকসুর জিএস মো. মাজহারুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ জন শিক্ষার্থীর তালিকা থেকে যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ না থাকে, তবে দ্রুত সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করতে হবে। বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘ প্রস্তুতি ও কঠিন প্রতিযোগিতার পর কমিশনের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান, সুশাসন ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার পরিপন্থি। পাশাপাশি, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে পারিবারিক বা বংশীয় রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি করাও অসঙ্গত ও সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘ প্রস্তুতি ও কঠোর প্রতিযোগিতা অতিক্রম করে কমিশনের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান, সুশাসন ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার পরিপন্থি। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে পারিবারিক বা বংশীয় রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি করাও অগ্রহণযোগ্য ও সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়।
আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে ছাত্র সংসদগুলো দাবি জানায়—
বিজেএস ও বিসিএসসহ সব ধরনের চাকরিতে মেধা ও যোগ্যতাকেই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে; পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি বন্ধ করতে হবে; কাউকে বাদ দিলে তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে হবে এবং বাদপড়া শিক্ষার্থীদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কঠোর পরিশ্রম ও মেধার ভিত্তিতেই সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তাই তাদের যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করে একটি মেধাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
ছাত্র সংসদগুলো কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে?
ছাত্র সংসদগুলোর দাবি, কোনো ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ ছাড়াই মেধাবী শিক্ষার্থীদের গেজেট থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা ন্যায্যতা ও সুশাসনের পরিপন্থি।
কতজন শিক্ষার্থীকে গেজেট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে?
মোট ১০২ জন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভিত্তিতে ১৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাদপড়া তালিকায় রয়েছেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অন্তর্ভুক্ত।
ছাত্র সংসদগুলো কোন কোন দাবি জানিয়েছে?
তারা দাবি করেছে
- চাকরিতে মেধা ও যোগ্যতাকেই একমাত্র মানদণ্ড করতে হবে
- পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে
- বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট কারণ জানাতে হবে
- বাদপড়া শিক্ষার্থীদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে কেন ছাত্র সংসদগুলো এই প্রক্রিয়াকে সংবিধান ও সুশাসনের পরিপন্থি বলছে?
তাদের মতে, কঠোর প্রতিযোগিতা পেরিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং পারিবারিক বা রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে হয়রানি করা সংবিধান, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও সুশাসনের মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
উপসংহার
বিজেএস পরীক্ষায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগে ছাত্র সংসদগুলোর তীব্র উদ্বেগ দেশজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের দাবি—মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত করা—একটি ন্যায়সঙ্গত ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থার অপরিহার্য শর্ত। কোনো প্রকার রাজনৈতিক পরিচয়, পারিবারিক পটভূমি বা অযাচিত হয়রানি যেন মেধাবী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ বাঁধাগ্রস্ত না করে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপই এখন সময়ের দাবি।





