নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ

নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ

“সমীকরণ অনুযায়ী, ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার জন্য ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে একটি চার এবং ষষ্ঠ বলে একটি ছক্কা প্রয়োজন ছিল। তবে, পঞ্চম বলেই ছয় মেরে দলটি ম্যাচটি জিতলেও নির্দিষ্ট সময়ের হিসেব অনুযায়ী সেই মুহূর্তটি তাদের অনুকূলে ছিল না, ফলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি তারা।”

ব্যাটিংয়ে নামার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখে বোঝার উপায় ছিল না, তাদের সামনে এত কঠিন একটি সমীকরণ। লক্ষ্য তাড়ায় ক্যারিবীয় ব্যাটাররা ছিলেন একেবারেই স্বচ্ছন্দ। অধিনায়ক হেইলি ম্যাথিউস থেকে শুরু করে শ্যানেল হেনরি—সবার ব্যাটেই ছিল আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া, যেন জয় শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে হিসাবের ছোট্ট একটি ভুলই সব ওলটপালট করে দেয়। সমীকরণ বলছিল, বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে হলে ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে একটি চার এবং ষষ্ঠ বলে একটি ছক্কা হাঁকানো প্রয়োজন। কিন্তু পঞ্চম বলেই ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন ব্যাটার। জয় এল ঠিকই, তবে সময়ের হিসাব মেলেনি। যে কারণে থেমে যেতে হলো বিশ্বকাপের দরজার একেবারে সামনে এসেও।

নেট রানরেটে সূক্ষ্ম ব্যবধানে এগিয়ে থেকে মূলপর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। এই ম্যাচের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেট রানরেট দাঁড়ায় ০.৬৩, আর বাংলাদেশের ০.৬৪।

থাইল্যান্ডের দেওয়া ১৬৭ রানের লক্ষ্য ১০.৫ ওভারে শেষ করেও লাভ হয়নি ক্যারিবীয়দের। দুর্দান্ত, আগ্রাসী ব্যাটিংও কাজে আসেনি; বিশ্বকাপের টিকিট তুলে নিতে হয়েছে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকেই।

দিনের শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য হতাশার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বের সমীকরণ কঠিন করে তোলে টাইগ্রেসরা। কিন্তু আশার প্রদীপ তখনও নিভে যায়নি। সমীকরণ ছিল—ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দল হেরে গেলে কিংবা নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ।

সেই সমীকরণে প্রথম আশার আলো দেখান থাইল্যান্ডের ওপেনার নাত্তাখাম চাংথাম। চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে নামা এই ব্যাটার একাই লড়াই চালিয়ে যান। ৬৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে থাইল্যান্ড তোলে ১৬৬ রান, যা রানরেটের দিক থেকে হয়ে দাঁড়ায় উইন্ডিজের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। নির্ধারিত নেট রানরেট নিশ্চিত করতে হলে ক্যারিবীয়দের ১৬৭ রান তুলতে হতো মাত্র ১০.১ ওভারে। বা বিকল্প হিসেবে, ১১ ওভারে তুলতে হতো ১৭২ রান।

থাইল্যান্ডের ইনিংস একসময় থমকে যেতে বসেছিল। ৮৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল দলটি। কিন্তু চাংথাম ছিলেন একপ্রকার প্রাচীর হয়ে। বলের পর বল খেলে গেছেন, চেষ্টা করেছেন ইনিংসটা গভীরে নিতে। তার ধৈর্য আর মেধাতেই নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ওপেনার হেইলি ম্যাথিউস ও কিয়ানা জোসেফ মারকাটারি সূচনা এনে দেন। ১২ বলে ২৬ রান করে ফিরলেও কিয়ানা, হেইলি ছুটছিলেন দুর্বার গতিতে। ২৮ বলে ৭০ রান করে আউট হন সপ্তম ওভারের শেষ বলে। বাংলাদেশ শিবিরে তখন কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।

তবে শ্যানেল হেনরি এসে আবার ম্যাচের গতি বদলে দেন। ১৭ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় এনে ফেলেন ক্যারিবীয়রা। ডট বল তখন যেন টাইগ্রেস সমর্থকদের নতুন আশার প্রতীক।

১০.১ ওভারে উইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ১৫৭। এর পরের বলেই বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন হেনরি। আলিয়াহ অ্যালেইন এসে প্রথম বলে চার মারেন, পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে আনেন স্টেফেন টেইলরকে। স্কোর তখন ১৬২। সমীকরণ দাঁড়ায়—প্রথমে একটি চার (১৬৬), এরপর একটি ছক্কা (১৭২), তাহলেই বিশ্বকাপে যাওয়া নিশ্চিত।

কিন্তু… যা হওয়ার নয়, সেটাই ঘটে। স্টেফেন টেইলর প্রথম বলেই চার হাঁকাতে চেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বল চলে যায় সোজা মিড-অফের ওপরে দিয়ে সীমানার বাইরে—একটি ছক্কা। জয় এল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঝুলিতে, কিন্তু বিশ্বকাপের টিকিট হাতছাড়া হয়ে গেল কেবল ০.০১ নেট রানরেটের জন্য।

বাংলাদেশের রানরেট ০.৬৪, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমে গেল ০.৬৩-এ।
একের বলেই নাটকের সমাপ্তি। আর সেই নাটকের শেষ দৃশ্যে হাসি বাংলাদেশের মুখে। টাইগ্রেসদের বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

বাংলাদেশ নারী দল কীভাবে বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিল?

পাকিস্তানের বিপক্ষে হারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে নেট রানরেটে পিছিয়ে পড়ায় বাংলাদেশ সুযোগ পায়। ০.০১ রানরেটের ব্যবধানে টাইগ্রেসরা বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে।

কোন ম্যাচটি ছিল টার্নিং পয়েন্ট?

থাইল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ। ১৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১তম ওভারের ৫ম বলে ছয় মেরে ম্যাচ জিতে যায়, কিন্তু সেটি নেট রানরেটে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেয়।

থাইল্যান্ডের কোন ব্যাটার বাংলাদেশের স্বপ্ন জাগিয়ে তোলেন?

নাত্তাখাম চাংথাম। দুর্দান্ত এক ইনিংসে ৬৬ রান করে থাইল্যান্ডের স্কোরকে সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যান।

রানরেটে কত ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ: ০.৬৪ | ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ০.৬৩
মাত্র ০.০১-এর ব্যবধানে টাইগ্রেসরা মূলপর্বে জায়গা করে নেয়।

কবে ও কোথায় অনুষ্ঠিত হবে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ?

নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বরে, এবং আয়োজক দেশ হলো বাংলাদেশ।

উপসংহার

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা, নেট রানরেটের সূক্ষ্ম হিসাব, আর এক বলের নাটকীয়তায় শেষ পর্যন্ত হাসি ফুটেছে বাংলাদেশ নারী দলের মুখে। নিজেদের ম্যাচে হারের পরও হাল ছাড়েনি টাইগ্রেসরা। থাইল্যান্ডের সাহসী লড়াই ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক ভুল সময়ে নেওয়া ছক্কার সুবাদে বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

এই অর্জন শুধু একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার নয়, বরং এটি আত্মবিশ্বাস, ধারাবাহিকতা এবং সঠিক সময়ে সুযোগকে কাজে লাগানোর প্রমাণ। আসন্ন নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই অর্জন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের জন্য হতে পারে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top