দোনেৎস্কের ভেতরে, বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয় অঞ্চলে হামলা, পুতিন নিয়ন্ত্রণ করতে চান

দোনেৎস্কের ভেতরে, বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছেন ইউক্রেনীয় অঞ্চলে হামলা, পুতিন নিয়ন্ত্রণ করতে চান

পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই মস্কোর লক্ষ্যবস্তু। ধারণা করা হচ্ছে, ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন যে, সম্পূর্ণ দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণের বিনিময়ে তিনি যুদ্ধ স্থগিত করতে রাজি।

বর্তমানে রাশিয়া দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এবং পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে— এবং ধীরগতিতে হলেও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

আমি যাচ্ছি দোনেৎস্কের ফ্রন্টলাইনের শহর দোব্রোপিলিয়ায়, যেখানে রাশিয়ার অবস্থান থেকে দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। আমার সঙ্গে আছেন দুইজন মানবিক সহায়তা কর্মী। তাদের মিশন হলো অসুস্থ, বয়স্ক এবং শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া।

প্রথমদিকে কাজটি নির্ভুলভাবে এগোয়। আমরা একটি সাঁজোয়া গাড়িতে শহরে প্রবেশ করি, যার ছাদে ড্রোন-জ্যামিং প্রযুক্তি বসানো। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি ছুটে চলে। রাস্তার উপর টানা সবুজ জালের আচ্ছাদন রয়েছে, যা আকাশ থেকে দৃশ্যমানতা কমিয়ে রাশিয়ান ড্রোনের নজরদারি থেকে সুরক্ষা দেয়।

সকালের এটি তাদের দ্বিতীয় যাত্রা। রাস্তাগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে। হাতে গোনা কয়েকজন অবশিষ্ট বাসিন্দা কেবল তড়িঘড়ি করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে ঘর থেকে বের হন। রাশিয়ার হামলা এখন প্রতিদিনের ঘটনা।

শহরটি ইতিমধ্যেই পরিত্যক্ত মনে হয়। টানা এক সপ্তাহ ধরে পানির সরবরাহ বন্ধ। আমরা যেসব ভবনের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, প্রতিটিরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে— কোনো কোনোটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত।

গত পাঁচ দিনে মাত্র, ৩১ বছর বয়সী জার্মান নাগরিক লার্জ এবং ১৯ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় তরুণী ভারিয়া— যারা ইউনিভার্সাল এইড ইউক্রেন নামে একটি দাতব্য সংস্থার হয়ে কাজ করেন— অসংখ্যবার যাতায়াত করে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে এনেছেন।

দোনেৎস্ক অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন?

দোনেৎস্কে প্রতিদিনই রাশিয়ার হামলা চলছে। শহরের অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পানি ও বিদ্যুৎসহ জরুরি সেবার ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে।

কেন বাসিন্দারা দোনেৎস্ক ছেড়ে যাচ্ছেন?

অবিরাম গোলাবর্ষণ, নিরাপত্তাহীনতা এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার কারণে বাসিন্দারা বাধ্য হচ্ছেন ইউক্রেনের নিরাপদ অঞ্চলে পালিয়ে যেতে।

রাশিয়া কতটুকু দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে?

বর্তমানে রাশিয়া দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি দখলে রেখেছে।

পুতিনের লক্ষ্য কী?

ভ্লাদিমির পুতিন reportedly জানিয়েছেন, দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেলে তিনি যুদ্ধ স্থগিত করার কথা ভাবতে পারেন।

মানবিক সহায়তা কার্যক্রম কীভাবে চলছে?

আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা ঝুঁকি নিয়েও অসুস্থ, বৃদ্ধ ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে রুশ হামলার কারণে তাদের কার্যক্রম প্রতিদিনই বিপদের মুখে পড়ছে।

উপসংহার

দোনেৎস্কে প্রতিদিনের গোলাবর্ষণ, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবন আর মানবিক সংকট—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। পুতিনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য যেমন স্পষ্ট, তেমনি সাধারণ মানুষদের টিকে থাকার লড়াইও চোখে পড়ার মতো। নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তার সন্ধানে বাসিন্দাদের এভাবে দোনেৎস্ক ছেড়ে পালিয়ে যেতে হওয়া প্রমাণ করে—যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য সর্বদা সাধারণ জনগণকেই দিতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top