দাবি আদায়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে চবি চারুকলার ৯ শিক্ষার্থী

দাবি আদায়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে চবি চারুকলার ৯ শিক্ষার্থী

প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “চারুকলা অনুষদকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার প্রায় সকল ধাপ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাকি রয়েছে।”

মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ জন শিক্ষার্থী টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, লিখিতভাবে স্থানান্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত তারা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের কার্যালয় অবস্থিত। এই ভবনের সামনেই গত সোমবার বিকেলে অনশন শুরু করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের ৯ জন শিক্ষার্থী।

তাদের মধ্যে রয়েছেন স্নাতকোত্তরের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, চতুর্থ বর্ষের নূর ইকবাল, তৃতীয় বর্ষের মো. শাহরিয়ার হাসান; দ্বিতীয় বর্ষের ইসরাত জাহান, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান এবং প্রথম বর্ষের তরিকুল ইসলাম ও মাহমুদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য নিজ কার্যালয়ে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

অন্যদিকে, অনশনরত শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম জানান, তাঁরা কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা করতে রাজি নন। তিনি বলেন, “আমরা যেখান থেকে কর্মসূচি পালন করছি, সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এসে আলোচনা করতে হবে। মৌখিক আশ্বাস নয়, আমরা লিখিত আদেশ চাই। লিখিত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে চলমান অনশন ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছে।

প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার প্রায় সব ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। কেবলমাত্র সিন্ডিকেটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া বাকি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ২৪ মে পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছিল, তবে তারা সেটি মেনে নেয়নি। তবুও আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট এই বিভাগ নগরীর সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে একীভূত হয়ে ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট’ নামে পুনর্গঠিত হয়। বর্তমানে ইনস্টিটিউটটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে, নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত। এখানে বর্তমানে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ শুরু করেন। সেই থেকে তাদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত রয়েছে এবং তারা ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। একপর্যায়ে, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিকে এক দফায় সীমিত করেন—ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনা। প্রশাসন দাবি না মানায় ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর তাঁরা ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বর্তমান অনশন সেই ধারাবাহিক আন্দোলনের সর্বশেষ ধাপ, যেখানে শিক্ষার্থীরা লিখিত আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এরপরও চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে সেশনজটের চাপ ও একাডেমিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ৩ মে তারা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পরবর্তীতে, সরকার পরিবর্তনের পর ২০২4 সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীরা আবারও একই দাবিতে আন্দোলনে নামেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান আশ্বাস দেন, চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যেই চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হবে।

কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত না হওয়ায়, শিক্ষার্থীরা ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চলছে টানা অনশন কর্মসূচি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, লিখিত সিদ্ধান্ত ছাড়া তারা কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কেন অনশন করছে?

শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার দাবিতে অনশন করছেন। বর্তমানে ইনস্টিটিউটটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা তাদের শিক্ষাজীবনে নানা অসুবিধার সৃষ্টি করছে।

কখন থেকে এই অনশন শুরু হয়েছে এবং কারা এতে অংশ নিচ্ছেন?

উত্তর: অনশন শুরু হয়েছে সোমবার (তারিখ অনুযায়ী আপডেটযোগ্য)। এতে অংশ নিচ্ছেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ জন শিক্ষার্থী—যাঁদের মধ্যে রয়েছে স্নাতকোত্তর থেকে শুরু করে প্রথম বর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান কী?

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার প্রায় সব ধাপ সম্পন্ন হয়েছে; কেবল সিন্ডিকেটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি রয়েছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের আলোচনার জন্য কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া কী?

উত্তর: প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যেতে চাইলেও শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা কোনো মৌখিক আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন। তারা আন্দোলনের স্থানেই আলোচনা ও লিখিত সিদ্ধান্ত চান।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনের পটভূমি কী?

উত্তর: ২০২২ সালের নভেম্বরে শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পর নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। তখন থেকে বিভিন্ন সময়ে দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সর্বশেষ, চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে স্থানান্তরের আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।

উপসংহার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের চলমান অনশন আন্দোলন শুধু একটি প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের দাবি নয়—এটি তাদের ন্যায্য অধিকার, শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ এবং প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবির প্রতিফলন। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনার শিকার এই শিক্ষার্থীরা এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে বসা এবং লিখিত আশ্বাস প্রদান করা, যাতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। অন্যথায়, আন্দোলনের এই ধারাবাহিকতা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top