তিন দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

তিন দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

“তিন দফা দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন”

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নগরীর তালাইমারি মোড়ে ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

আন্দোলনকারীরা জানান, প্রকৌশলী পদে নিয়োগ ও স্বীকৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈষম্যের অবসান ঘটাতেই তারা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের তিনটি মূল দাবি হলো:

ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেডের সম্মানজনক পদে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবার জন্য বাধ্যতামূলক পরীক্ষা চালু করতে হবে, এবং এতে অংশগ্রহণের জন্য অবশ্যই বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকতে হবে।

টেকনিক্যাল দশম গ্রেডের সম্মান পদে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী সকলের জন্য সমান পরীক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়া কেউ যেন ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহার না করতে পারে—এ জন্য একটি নির্দিষ্ট আইন পাস করে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, প্রকৌশল পেশায় দীর্ঘদিন ধরে একটি অসম বণ্টন ও বৈষম্য চলছে। উদাহরণ হিসেবে তারা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) প্রকৌশলী পদে কর্মরতদের মধ্যে ৬২.৭ শতাংশ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং ৩৭.২ শতাংশ ডিপ্লোমাধারী, যারা প্রমোশনের মাধ্যমে এ পদে এসেছেন। অথচ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা বর্তমানে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অংশীদারিত্ব দাবি করছেন, যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

তারা আরও জানান, সরকারি প্রকৌশল বিভাগে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য অনুমোদিত কোটা ৩৩ শতাংশ হলেও বর্তমানে ৫১.৬ শতাংশ পর্যন্ত প্রমোশন দেওয়া হয়েছে, যা নীতিগতভাবে অনুমোদিত নয় এবং এতে প্রকৃত প্রকৌশলীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা প্রকৌশল পেশায় বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবাদে তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজশাহীর তালাইমারি মোড়ে ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’-এর ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে রুয়েটের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

আন্দোলনকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকলের জন্য সমান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং আবেদনকারীর অবশ্যই বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকতে হবে।

টেকনিক্যাল দশম গ্রেডের সম্মানজনক পদে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারীদের সমানভাবে প্রতিযোগিতার সুযোগ দিতে হবে।

বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়া কেউ যেন ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহার করতে না পারে—এ জন্য আইন প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রকৌশল পেশায় দীর্ঘদিন ধরে একধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য চলে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের বিসিএস ক্যাডারে গণপূর্ত বিভাগে প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ২৫ জন বিএসসি ডিগ্রিধারী। অথচ একই বছরে প্রমোশনের মাধ্যমে এই ক্যাডারে ১৯ জন প্রকৌশলী যুক্ত হয়েছেন, যা মোট নিয়োগের প্রায় ৪৩ শতাংশ—যেখানে প্রমোশনের জন্য নির্ধারিত কোটা ৩৩.৩ শতাংশ।

আন্দোলনকারীদের দাবি, এই ধরনের কোটাভিত্তিক অতিরিক্ত নিয়োগ প্রকৃত মেধাবীদের প্রতি অবিচার এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের পেশাগত মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।

তারা বলেন, “বৈষম্যগুলো দূর করা হলে প্রকৌশল পেশায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত হবে, ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দের অপব্যবহার বন্ধ হবে এবং প্রকৃত পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে।”

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

রুয়েট শিক্ষার্থীরা কী দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন?

  • রুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রকৌশলী পেশায় বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবাদে তিনটি মূল দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন:
  • ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেডের পদে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ এবং আবেদনকারীর বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা।
  • দশম গ্রেডের সম্মান পদে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারীদের জন্য সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ রাখা।
  • ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহারের জন্য বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করে আইন পাস করা।

এই বিক্ষোভ কোথায় ও কখন অনুষ্ঠিত হয়?

উত্তর: বিক্ষোভ কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ৩ জুলাই, বেলা ১১:৩০ থেকে ১:০০টা পর্যন্ত, রাজশাহীর তালাইমারি মোড়ে। এটি ‘প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে আয়োজিত হয়।

আন্দোলনের পেছনে মূল অভিযোগ কী?

উত্তর: শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রকৌশল পেশায় দীর্ঘদিন ধরে কোটা ও প্রমোশনের মাধ্যমে অযোগ্য বা তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্নদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি অপব্যবহারও তাদের একটি বড় অভিযোগ।

২০২৪ সালের বিসিএসে কী ধরনের বৈষম্য দেখা গেছে?

২০২৪ সালে বিসিএসের গণপূর্ত ক্যাডারে বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ছিলেন মাত্র ২৫ জন, অথচ প্রমোশনের মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছেন ১৯ জন (৪৩%), যেখানে প্রমোশন কোটা অনুমোদিত ছিল ৩৩.৩%—যা সীমা লঙ্ঘন করেছে।

শিক্ষার্থীদের মতে, দাবিগুলো মানলে কী পরিবর্তন আসবে?

তাদের মতে, দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে প্রকৌশল পেশায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত হবে, ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দের অপব্যবহার বন্ধ হবে এবং প্রকৃত পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।

উপসংহার

রুয়েট শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ শুধু তিনটি দাবি নয়, বরং বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নীতিগত বৈষম্য ও অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবভিত্তিক ও পেশাগত মানদণ্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উপযোগী। মেধাভিত্তিক নিয়োগ, পেশাগত মর্যাদা রক্ষা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির দাবি দেশের প্রকৌশল খাতকে আরও সুসংগঠিত ও গতিশীল করতে সহায়তা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষার্থীদের দাবি গঠনমূলকভাবে বিবেচনায় নেয়, তবে প্রকৌশল পেশায় দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top