প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ ১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিনটি দাবি তুলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ।
মঙ্গলবার (২০ মে) দৈনিক শিক্ষাডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শাহিনুর আল-আমীন জানান, তিন দফা দাবিতে গত ৫ মে থেকে প্রতিটি কর্মদিবসে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছিল। পরে ১৭ মে থেকে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি চালু হয়। এখন, সংগঠনটি অর্ধদিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীকাল বুধবার থেকে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।
এদিকে, সহকারী শিক্ষকদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অধিদপ্তরের পলিসি ও অপারেশন বিভাগের সহকারী পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) মাহফুজা খাতুনের সই করা সভার নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন শাহিনুর আল-আমীন। তিনি বলেন, ‘‘বিকেল ৪টায় আমরা ডিজির সঙ্গে বসবো। আমাদের ৬টি সংগঠনের ৩০ জন প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেবেন। তবে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলমান থাকবে।’’
এদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সম্প্রতি ঢাকায় কয়েক দফা সমাবেশ করেছেন শিক্ষকরা। তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটি সহকারী শিক্ষক পদকে অ্যান্ট্রি পদ হিসেবে ধরে ১২তম গ্রেড বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এবার তারা সংস্কারের মাধ্যমে ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।
তিন দফা দাবি:
সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে অ্যান্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন।
প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম।
ঘন ঘন জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ:
সরকারের গঠিত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক পদকে অ্যান্ট্রি পদ ধরে ১২তম গ্রেডের পরিবর্তে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন:
শিক্ষকরা দাবি করেছেন, ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির যে জটিলতা রয়েছে, তা দ্রুত সমাধান করতে হবে, যাতে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নতি ত্বরান্বিত হয়।
শতভাগ পদোন্নতি ও দ্রুত পদোন্নতি প্রদান:
প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত পদোন্নতি প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
নতুন কর্মসূচি:
শাহিনুর আল-আমীন জানান, ৫ মে থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে তারা প্রথমে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছিলেন, পরে ১৭ মে থেকে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু হয়। এখন তারা অর্ধদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন, যা আগামীকাল বুধবার থেকে কার্যকর হবে।
বৈঠক:
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় সহকারী শিক্ষকদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে একটি বৈঠক আহ্বান করেছেন। বৈঠকে ঐক্য পরিষদের ৬টি সংগঠনের ৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন, তবে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলমান থাকবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থান:
বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত, যার মধ্যে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম, এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম।
উপসংহার
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি পূরণের জন্য ঐক্য পরিষদ তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। ১১তম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন, এবং প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান বিষয়ক তাদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং শিক্ষকদের পেশাগত উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, তারা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবে, যা তাদের আন্দোলনের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষকরা আশা করছেন, তাদের দাবি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে, এবং শিগগিরই তা বাস্তবায়ন হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে, তবে সংগঠনটি তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে, যতদিন না তাদের দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়।




